২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মানবদেহে কান হছে একটি বিশেষ অঙ্গ, যা অন্যান্য অঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ। তাই কানের যত্ন নেয়া জরুরি। যেকোন বয়সে কানে ব্যথা হতে পারে, তবে শিশুদের কানে ব্যথায় বেশী ভুগতে দেখা যায় । একটি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বলছে, ২ বছর বয়সে পৌছনোর আগেই ৯০ শতাংশ শিশুর অন্ততপক্ষে একবার কানে ইনফেকশন হয়। ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে কানের ইনফেকশন সবচেয়ে বেশি হয়। তিন বছরের কম বয়সী শতকরা ৩০ ভাগ শিশু কোনো না কোনো কারণে কানে ব্যথায় ভূগে থাকেন। বেশির ভাগ ব্যথার জন্য দায়ী ইনফেকশন।
কানে ব্যথার কারণ:
* কানের ভেতর যে এয়ারড্রাম (কানের পর্দা) আছে, ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি কাশি থেকে নাক এবং কানের সংযোগ টিউব ব্লক থেকে পর্দার ভিতরের দিকে তরল পদার্থ জমা হয়ে পর্দা ফুলে ওঠে, যাকে বলে গ্লুইয়ার / অটাইটিস মিডিয়া উইথ ইফিউশন।
* কানের ভিতর/ এক্সটারনাল ইয়ার ক্যানেল ওয়াক্স বা ময়লা দিয়ে বন্ধ হলে গেলে। কানের খৈল এর মেডিকেল নাম সেরুমেন। এই কারণটি শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। অনেক বাবা মা কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার করে থাকেন। যা ঠিক নয় কারণ, এতে ময়লা আরও ভিতরের দিকে চলে যায়।
* কানের পর্দার বাইরে এয়ার ক্যানেলে সংক্রামণ বা ইনফেকশন হলে ব্যথা হয়, যাকে অটাইটিস এক্সটার্না বলে।
* কানের ভেতরে ফোঁড়া বা লোমের গোড়ায় ইনফেকশন হলে কানে প্রচুর ব্যথা হয় , যাকে ফারানকুলোসিস বলে।
* কানের ভেতরে বহি:কর্ণ বা কানের পর্দা কাঠি বা কটনবাড দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে। কানের পর্দা ফেটে গেলে।
* গলা ব্যথা বা টনসিলের ইনফেকশন হলে, অথবা দাঁতে ব্যথা হলে। এক্ষেত্রে কানে কোন সমস্যা নাই কিন্তু একই স্নায়ুর কারণে গলার ব্যথা/দাঁতে ব্যথার জন্য কানে ব্যথা হয়ে থাকে।
* ঠান্ডা লাগলে শিশুদের কান ব্যথা শুরু হতে পারে।
ঠান্ডা লাগলে নাকের সর্দিটা কানের দিকে চলে গিয়ে ইনফেকশন হয়।
কী করে বুঝবেন শিশুর কানে ব্যথা হচ্ছে:
* কানে ব্যথা হলে শিশুরা চিৎকার করে কাঁদবে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং অস্থিরতা বাড়বে।
* শিশুরা নিজে নিজের কান ধরবে এবং টানাটানি করবে। কিছু খাবে না, খাবারের রুচি কমে যাবে।
* রাতে ব্যথার জন্য ঘুমাবে না, কান্নাকাটি করবে।
* কাশি ও নাক দিয়ে পানি ঝরতে পারে।
* কানে শুনবে, কিন্তু যারা হাঁটতে পারে তাদের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে পড়ে যেতে পারে।
কানে ব্যথার চিকিৎসা : কান ব্যথাকে অবহেলা না করে এর কারন বের করে চিকিৎসা করা জরুরী। ব্যথায় অস্থির হলে, ঘাড় শক্ত হলে, ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়লে তৎক্ষণাৎ জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
* জ্বর ও ব্যথার জন্য বেদনাশক ওষুধ যেমন-প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
* ইনফেকশন থাকলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।
* কানে ইনফেকশন থাকলে কানের ভেতর শুকনো রাখতে হবে এবং কানে পানি যেন না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
* ব্যথাসহ যদি কান দিয়ে পুঁজ বা রক্ত মিশ্রিত পানি পড়ে তবে কানের ড্রপ দেয়া যেতে পারে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
* ওয়াক্স বা ময়লা থাকলে অলিভ অয়েল দিয়ে ময়লা নরম করে নাক-কান-গলার চিকিৎসক দিয়ে পরিস্কার করাতে হবে। বাচ্চাদের কানে ময়লা জমা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে কানে ত্বকবান্ধব অলিভ অয়েল দিলে কোন সমস্যা হবে না।
* অনেক সময় নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা নাকের ড্রপ দিয়ে থাকেন কানে ব্যথার চিকিৎসায়, সেক্ষেত্রে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রয়োজনে বুঝে নিবেন।
* দাঁতের কোন সমস্যার জন্য কানে ব্যথা হলে দন্ত বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে ।
কানের সংক্রামণ যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে কী সমস্যা হবে :
* সংক্রমণ বা ইনফেকশন অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে।
* এয়ারড্রাম (কানের পর্দা) ক্ষতিগ্রন্থ হবে।
* বাচ্চা কানে শুনবে না।
* কানের পেছনে মাথার হাড়ে সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়ে ম্যাস্টোয়ডাইটিস হতে পারে।
* মেনিনজাইটিস বা ব্রেনের পর্দায় সংক্রমণ হতে পারে।
* শিশুদের বাকশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* কানের ঘনঘন বিশ্রী গন্ধযুক্ত পূঁজ পরা থেকে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস বা মুখমন্ডলের পক্ষাঘাত হয়ে মুখ বেকে যেতে পারে।
কিভাবে কানের ব্যথা থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করবেন-
* কানের ভেতরে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা যাবে না।
* জন্মের পর প্রথম এক বছর শিশুদের ঠান্ডা লাগা থেকে বিরত রাখতে হবে।
* যে শিশুরা ফিডারে দুধ খায় তাদের মাথা উঁচু করে দুধ খাওয়াতে হবে। ঘুমন্ত ও শুয়ে থাকা অবস্থায় কখনোই শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না। ঘুমন্ত অবস্থায় বুকের দুধ খাওয়ালে তা নাক দিয়ে ঢুকে কানে ইনফেকশন করতে পারে।
* শিশুদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
* শিশুদের সামনে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপান থেকে ঘনঘন শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন হতে পারে। আমেরিকান এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশু ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকে, তাদের মধ্যে ৩৭ শতাংশের মধ্যকর্ণের ইনফেকশন এর ইতিহাস আছে।
* শিশুদের বুকের দুধ সঠিক নিয়মে বসিয়ে খাওয়াতে হবে। বুকের দুধে যে অ্যান্টিবডি আছে তা কানের ইনফেকশন দূর করে। জন্মের পর প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধে সবচেয়ে বেশী এন্টিবডি উপস্থিত থাকে।
* এডিনয়েডের বা নাকের পিছনের এক ধরণের গ্লান্ড বড় হলে নাকের সাথে কানের সংযোগকারী টিউব ব্লক হয়ে কানের সংক্রমণ হতে পারে, তাই এরকম সমস্যায় মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে বা বাচ্চা হা করে ঘুমালে নাক-কান-গলার চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করাতে হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, শিশুদের যেকোন ধরণের কানে ব্যথা দেখা দিলে বা কান দিয়ে পূঁজ আসলেই দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)
নাক-কান-গলা বিভাগ,
বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।