বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ডাঃ রেজওয়ানুল বারী শামীমের বৃদ্ধা মাতা রাহেনা বেগম ও বৃদ্ধ পিতা মো: আব্বাস আলী মিঞা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন মরহুম ডাঃ শামীমের বিবাহিত স্ত্রী ডাঃ রিমন আফরোজ লুনা ও ডাঃ লুনার ছোট বোন ডাঃ রোজিনা আফরোজ লিজু যৌথ ভাবে তাঁর মৃত্যুকে তরান্বিত করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন যে, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম এম মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ ডাঃ রেজওয়ানুল বারী শামীম ছিলেন করোনা প্রতিরোধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা। করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকাকালে তিনিও করোনায় আক্রান্ত হন। গত ৩০ শে জুলাই চিকিৎসার্থে তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি একজন ডাক্তার হওয়ায় তাঁর চিকিৎসা সেবায় কোন ত্র“টি ছিল না। শজিমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারা তাঁকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও অতিব দু:খের সাথে আপনাদের জানাতে বাধ্য হচ্ছি আমার মরহুম পুত্রের বিবাহিত স্ত্রী ডাঃ রিমন আফরোজ লুনা শুরু থেকেই তার চিকিৎসার ব্যাপারে চরম অবহেলা করেছে। প্রতিনিয়ত তাঁকে শক্তি ও সাহস যোগানোর পরিবর্তে মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করে গেছে। এই কাজে তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে ডাঃ লুনার ছোট বোন শজিমেক হাসপাতালের চর্ম, যৌন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ রোজিনা আফরোজ লিজু। তারা আমার ছেলের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার জন্য শুরু থেকেই তার চলমান চিকিৎসায় বাঁধা সৃষ্টি করেছে। তাঁকে বাঁচানোর জন্য আমার পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের মেজো ভাই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সাজেদুল বারী আমিন কর্তৃক এয়ার এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নেয়ার চেষ্টা বাঞ্চাল করে দেয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন ডাঃ শামীমের ২০ বছরের বিবাহিতা ডাক্তার স্ত্রী লুনার মানসিক সাপোর্ট দরকার ছিল তখন তার বদলে সে পেয়েছে নিষ্ঠুর অবহেলা। ডাঃ শামীমের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও সেবিকা এবং আমাদের পরিবারের পক্ষে আমার ছোট ছেলে তুহিন সূত্রে জানতে পারি, চিকিৎসা চলাকালে যতবার স্ত্রী লুনা তার কাছে গিয়েছে প্রতিবারই সে বলেছে তোমার চেস্ট এক্সরে রিপোর্ট ভালো না। তোমার বাঁচার কোনই আশা নেই। তুমি মারা গেলে আমাদের কি হবে? তোমার ছেলে-মেয়ের কি হবে? তুমি তো মারাই যাবে? তাই তওবা পড়ে নাও। কোথায় তোমাকে কবর দেয়া হবে আমাকে বলে যাও।
একই সাথে সে (ডাঃ শামীমের স্ত্রী) ও তার ছোট বোন ডাঃ রোজিনা মিলে আমাদের সবার অজান্তে গত ৫ই আগস্ট কমিশন গঠন করে এবং পরদিন ৬ই আগস্ট গোপনে তড়িঘড়ি করে বগুড়া জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা রেজিস্ট্রারকে বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ৩টি দলিল রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে। আমার ছেলের অমতে তার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও সেবিকাদের বাঁধা সত্ত্বেও যখন আমার ছেলের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে, ঠিক সেই সময় জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি দলিলগুলোতে স্বাক্ষর গ্রহণ করে। স্বাক্ষরকালে আমার ছেলে প্রবল ভাবে বাঁধা সৃষ্টি করলেও অত্যন্ত জোরাজুরি করে তার স্বাক্ষর নেয়া হয়। এই দলিল গুলোতে সনাক্তকারী হিসেবে আমার পরিবারের কাউকে না রেখে প্রতিটি দলিলেই স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে তার (স্ত্রী’র) ছোট ডাঃ রোজিনা আফরোজ লিজুর।
৬ই আগস্ট দলিলের স্বাক্ষরের আগে তাঁকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স যোগে বাঁধা দেয়া হলেও দলিল স্বাক্ষরের পরে ডাঃ শামীমের স্ত্রী ডাঃ লুনা কিছুটা নমনিয় হওয়ায় ৯ই আগস্ট যখন তাঁকে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে নেয়া হলে তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পিজি’র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অন্তত পক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে ঢাকায় আনা হলে তারা হয়তো শেষ চেষ্টা করে দেখতে পারতেন।
অথচ ঠিক এই সময়টাতেই আমার ছেলেকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নেয়া হলে, হয়তোবা আমার ছেলের জীবন রক্ষা হতো। কিন্তু আমার ছেলের স্ত্রী’র কাছে তার স্বামীর জীবনের চাইতে, স্বামীর রেখে যাওয়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিই বেশি জরুরী বলে মনে হয়েছে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, আমার ছেলের রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমাদের নিজেদের এবং আমাদের ছেলে-মেয়েদের কারোই প্রয়োজন ছিল না। কারণ, আমাদের সবকজন ছেলে-মেয়েই আর্থিক ও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত। ভাইয়ের সম্পত্তির দিকে তাদের কারোই ন্যূনতম নজর ছিল না। ডাঃ লুনা নিজেও তা জানত। তার পরেও কেন সে এভাবে তিলেতিলে অবহেলা, অনাদর এবং মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আমার ৪৯ বছর বয়সী ছেলের অকাল মৃত্যু তরান্বিত করল আমরা তা জানতে চাই।
আমরা এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ সবার কাছে আবেদন জানাব, আমার ছেলের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাটি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যাদের অবহেলায় সবার কাছে করোনা যোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃত আমার ছেলের ডাঃ রেজওয়ানুল বারী শামীমের অকাল মৃত্যু হয়েছে তাদেরকে যেন যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হয়।
তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় সাংবাদিক সম্মেলনের পরে তার ছেলের মৃত্যু এবং তার কৃত হেবা দলিল বাতিলের প্রশ্নে তারা আদালতে যাবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, এখন পর্যন্ত আমরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত আছি। প্রয়োজন হলে অবশ্যই আদালতে যাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।