পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দুর্নীতি নিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কতটা সফল, সেটা অত্যন্ত প্রসঙ্গিক প্রশ্ন। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার এবং দুর্নীতিবাজদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য থেকে এ প্রশ্নের একটা সাধারণ জবাব পাওয়া যেতে পারে। সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন ক্ষেত্র ও পর্যায়ে দুর্নীতির চর্চা যেভাবে চলছে, তাতে স্বীকার করতেই হবে, দুর্নীতি একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যার পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি দমাতে ও কমাতে দুদক যে ভূমিকা রাখতে পারতো, যে কোনো কারণেই হোক, সে ভূমিকা রাখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। তবে তার অনেক কাজে এই স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ করা যায় না। সংস্থাটির ওপর সরকারি প্রভাব নিয়ে অনেক কথা আছে। প্রভাবিত সংস্থার পক্ষে স্বাধীনতা প্রদর্শন করা অবশ্যই কঠিন। দেখা গেছে, বড় বড় দুর্নীতিবাজ, যারা প্রভাবশালীও বটে, দুদকের হাতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে গেছে, এমনকি দুর্নীতিবাজ নয় বলে সনদও পেয়েছে। পক্ষান্তরে ছোট ছোট দুর্নীতিবাজ ধরতে ও শাস্তি দিতে দুদকের দায়িত্বশীলতার কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি। দুর্নীতি দমনে কিছু সাফল্য অবশ্যই দুদকের আছে, কিন্তু তার শোচনীয় ব্যর্থতা হলো, দুর্নীতির বড় বড় ঘটনা উদঘাটনের ক্ষেত্রে সে খুব বেশী সাফল নয় এবং এসব বড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতরা তার মাধ্যমে কমই বিচার ও শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির কথা কারো অজানা নয়। বছরের পর বছর ধরে এই দুর্নীতির তদন্ত চলছে। কবে তদন্ত শেষ হবে, বলার উপায় নেই। এর একজন বহুল আলোচিত শীর্ষ কর্মকর্তা এখনো অধরা অবস্থায় রয়ে গেছেন। তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া দুদক পানামা ও প্যারাডাইস কেলেংকারিতে জড়িতদেরসহ মালয়েশিয়ার সেকেন্ডহোম, কানাডার বেগমপাড়া এবং অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পারচারকৃত অর্থ ফেরত আনতেও সাফল্য দেখাতে পারেনি।
দুদককে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থা হিসাবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে তার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে অপারগতা দেখা যায়। দুদকের একশ্রেণীর কর্মকর্তার মধ্যে দুর্নীতি কিংবা দুর্নীতির পোষকতা করতেও দেখা যায়। সরষের ভুত বুঝি একেই বলে। দুর্নীতির দায়ে এদের কেউ কেউ শাস্তিও পেয়েছেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা, দুদক কর্মকর্তাদের সত্যনিষ্ঠতা, সততা, সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার ওপর দুদকের সাফল্য ও কৃতিত্ব নির্ভর করে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, দুদকে গুরু অপরাধের লঘু ধারায় মামলা করে অপরাধ আড়াল করার কৌশল অবলম্বিত হচ্ছে। এ কৌশলে বড় দুর্নীতিবাজাদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কম দুর্নীতি করেও অনেকে জেলের ঘানি টানতে বাধ্য হচ্ছেন। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ পলিসির কারণে এমনটা অহরহই ঘটছে। আইনের সুষম প্রয়োগ হচ্ছে না। হলে এরকম হওয়ার কথা নয়। দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বোঝাপড়ার আওতায় অনেক সময় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পরিবর্তে সম্পদবিবরণী দাখিল না করার অভিযোগ আনা হয়। এতে আলোচিত দুর্নীতবাজরা যেমন কিছুটা রেহাই পেয়ে যায়, তেমনি তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ও অটুট থাকে। গুরু অপরাধের ধারার বদলে লঘু অপরাধের ধারায় মামলা হলে দুর্নীতিবাজরা সময়ক্ষেপনের সুযোগসহ জামিন লাভ করার সুবিধা পান। নজির হিসাবে খবরে কয়েকটি কেস স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে। আমরা এখানে তা পুনয়ল্লেখ করছি না। বলার বিষয় শুধু এই যে, মামলা করার এই হেরফেরে সুবিধা লাভ করেন অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীরা। এক্ষেত্রে দুদক কর্মকর্তাদের পক্ষে যোগসাজসের দায় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
কেস স্টাডিগুলোতে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছেন। তদন্তে তা প্রতীয়মান হয়েছে। অথচ অবৈধ সম্পদ অর্জনের ধারায় মামলা না করে তাদের কাছে সম্পদের বিবরণী চাওয়া হয়েছে। তারা সম্পদ বিবরণী জমা না দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হয়েছে। যথারীতি বিচার ও শাস্তি হয়েছে। সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর জেল। অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধান এতে নেই। পক্ষান্তরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বনিম্ন শাস্তি ৩ বছর জেল, সর্বোচ্চ ১০ বছর জেল। এখানে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। বর্ণিত কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে অতি সামান্য এবং তাদের সম্পদ থেকে গেছে স্পর্শহীন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আলোচ্য ক্ষেত্রে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে দুটি। এক. অবৈধ সম্পদ অর্জন। দুই. সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা। কিন্তু মামলা ও বিচার হয়েছে শেষোক্ত অপরাধের। মূল অপরাধের জন্য কোনো মামলা ও বিচার হয়নি। বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মামলা, বিচার ও শাস্তির অবস্থা যদি এই হয়, তবে দুর্নীতি দমন তো দূরের কথা, দুর্নীতি আরো উৎসাহিত হবে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সঠিক ধারায় মামলা না করা কিংবা ধারা হেরফের করার সঙ্গে যারা জড়িত, দুদকের সেই কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিৎ। দোষ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।