পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানীর অভ্যন্তরে মূল সড়কের পাশে যত্রতত্র সিটি বাসসহ আন্তঃজেলা বাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যান পার্কিংয়ের কারণে দিন দিন যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি এখন রাজধানীর বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে আশপাশের সড়কে গিয়ে পৌঁছেছে। সন্ধ্যার পর থেকে এসব যানবাহন মূলসড়কের পাশে পার্কিং করা হচ্ছে। ফলে রাজধানী এবং এর আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব স্থানে যানবাহন পার্কিং নিষিদ্ধ হলেও তা পরিবহন সংস্থাগুলো মানছে না। সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ আদালতের নির্দেশে গাবতলী বেড়িবাঁধে পার্কিং করা ট্রাক, কভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে। সেখান থেকে ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান উচ্ছেদ করা হয় এবং কিছু পরিবহন নিলামে তোলা হয়। এতে বাংলাদেশ ট্রাক-কর্ভাড ভ্যান মালিক-শ্রমিক সংগঠন ক্ষুদ্ধ হয়ে ১২ অক্টোবর আটচল্লিশ ঘন্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ বলেছে, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে সে রাজধানীর বাউন্ডারি হিসেবে পরিচিত বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করেছে। সাধারণত তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডকে মাল লোড-আনলোড করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ট্রাক স্ট্যান্ড অবৈধভাবে গড়ে উঠে। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মরহুম আনিসুল হক উদ্যোগ নিয়ে উচ্ছেদ করলেও তার মৃত্যুর পর পুনরায় এটি দখলে চলে গেছে। পরিস্থিতি এখন এমন যে, বাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যানের অবৈধ পার্কিং এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় বিস্তৃতি লাভ করেছে। রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, সাতরাস্তা, উত্তরার হাউসবিল্ডিং, টিকাটুলি, টঙ্গি, আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়াসহ অন্যান্য এলাকায় যানবাহনের অবৈধ পার্কিংয়ের ফলে রাজধানীতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজধানীর অভ্যন্তরে গাবতলী, সায়দাবাদ ও মহাখালিস্থ তিনটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রয়েছে। এক সময় এগুলো বাইরে থাকলেও রাজধানীর বিস্তৃতির ফলে এখন অভ্যন্তরে চলে এসেছে। এতে বিভিন্ন জেলার শত শত বাস রাজধানীতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণত রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতকারী পরিবহনের জন্য রাজধানীর বাইরে টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণ এবং নির্বিঘ্ন করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে এভাবেই টার্মিনাল স্থাপন করা হয়। সেখান থেকে যাত্রীরা শাটল বাস বা অন্যান্য পরিবহনের মাধ্যমে শহরে প্রবেশ করে। ঢাকার অবস্থা হয়েছে তার বিপরীত। এর ভেতর থেকেই বিভিন্ন জেলায় বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যান যাতায়াত করে। সন্ধ্যার পর থেকেই এসব পরিবহন যখন চলাচল শুরু করে, তখন ভয়াবহ যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে রাজধানী এক প্রকার অচল হয়ে পড়ে। তবে বহুদিন ধরেই রাজধানীর ভেতর থেকে তিন বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। ২০১৫ সাল থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে স্ট্র্যাটিজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান অনুযায়ী, ঢাকার চারপাশে ছয়টি নতুন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীপুর, ভুলতা, কাঁচপুর, ঝিলমিল, হেমায়েতপুর ও আশুলিয়া। এসব বাস টার্মিনাল স্থাপনের কাজ অনেকটা ঢিমেতালে চলছে। ফলে দিন দিন সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীর আয়তনের তুলনায় এর সড়কের পরিমাণ অত্যন্ত অপ্রতুল। একটি রাজধানীতে তার আয়তনের তুলনায় শতকরা ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৭ ভাগ। এই পরিমাণ সড়কের মধ্য দিয়ে বিপুল যানবাহন চলাচলের কারণে যানজট স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। আবার এগুলোর বেশিরভাগই নির্মাণ সামগ্রী রাখা, যত্রতত্র পার্কিং, দোকানপাট, বাজার স্থাপনের মাধ্যমে অবৈধ দখলে রয়েছে। এর উপর মূল সড়কের অধিকাংশ এলাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণ কাজ চলায় রাজপথ সরু গলিতে পরিণত হয়েছে। কোনো কোনো মূল সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান যেটুকু সড়ক রয়েছে সেটুকুতেও গণপরিবহণ জায়গায় জায়গায় থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায় যানজটকে তীব্রতর করে তুলেছে। ২০১৭ সালে মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানীজুড়ে ১৬৭টি বাস স্টপেজ নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। এর মধ্যেই সড়কে বাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যানের অবৈধ পার্কিং চলছে। রাত ৮টা থেকে শুরু হয়, আন্তঃজেলা বাসের চলাচল। তাতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নিয়ম অনুযায়ী, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন করার সময় গাড়ি রাখার নির্ধারিত গ্যারেজ অবশ্যই রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো পরিবহন সংস্থাই এ নিয়ম না মেনে সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করে যাচ্ছে।
রাজধানীর অভ্যন্তরে স্বচ্ছন্দে চলাচল নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। রাজধানী হবে গতিশীল ও পরিপাটি। দুঃখের বিষয়, ঢাকা বিশ্বের মধ্যে এমন এক রাজধানী যার দুর্নামের শেষ নেই। অসভ্য নগরী, বসবাসের অযোগ্য, শব্দ ও বায়ুদূষণের শীর্ষ নগরী হিসেবে বছরের পর বছর ধরে দুর্নাম কুড়িয়ে চলছে। এই দুর্নাম কবে ঘুচবে, তা কেউই বলতে পারবে না। বরং দিনকে দিন এর সার্বিক পরিস্থিতির অবনমন ঘটছে। রাজধানীর অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট নিরসন এক অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরবিদরা মনে করছেন, রাজধানীতে যেটুকু সড়ক রয়েছে তা যদি অবৈধ পার্কিং ও দখলমুক্ত যায়, তবে যানজট কিছুটি হলেও সহনীয় করা সম্ভব। এজন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে হবে। ঢাকাকে যানবাহনের ভারমুক্ত এবং প্রবেশ ও বাহির হওয়া থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে হলে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল তিনটিকে রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করতে হবে। প্রস্তাবিত বাস টার্মিনালগুলোর বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে। অবৈধ পার্কিং বন্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।