পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের মূল গন্তব্য ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডা। ফলে এসব বাজারে রফতানি বৃদ্ধি পাওয়া ভালো লক্ষণ। তবে বেশি ভালো হয় যদি নতুন বাজার ও অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি বাড়ে। হাতে গোনা দু-তিনটি বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা পণ্য রফতানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ১ হাজার ১৫০টি কারখানার ৩১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। স্থগিত হয় হিমায়িত চিংড়ির ক্রয়াদেশ। সবজি রফতানি বন্ধ।
তবে ইউরোপের দেশগুলোয় বাংলাদেশি পণ্যের রফতানি সম্ভাবনা বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা, চীন নিয়ে উন্নত বিশ্বের নতুন চিন্তাভাবনার কারণেই বাংলাদেশের রফতানি বহুগুণে বাড়বে। আগামী বছরের গোড়ায় ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেই পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অবকাঠামো সংকট, শুল্কায়ন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ জরুরি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির ৩০ ভাগেরই গন্তব্য জার্মানি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি না পেলে রফতানি আয় বাড়বে না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শিল্পকারখানাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সেজন্য দুটি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক. দেশের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করা। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। কারণ, ক্রেতা দেশগুলো যখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে তখন যদি আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকি, তবে পণ্য সরবরাহ করা যাবে না। দুই. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। না হলে ব্যবসায়ীরা টিকতে পারবেন না। রফতানিতে এত দিন পণ্যের দাম ও মান দিয়ে প্রতিযোগিতা করতে হতো। করোনা-পরবর্তী স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও সুনাম যুক্ত হবে। তাই শ্রমিক ছাঁটাই কিংবা মজুরি না দেওয়ার কারণে খারাপ ভাবমূর্তি তৈরি হলে ক্রেতা হারানোর শঙ্কা থাকবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তবেই আবার নতুন উদ্যমে বাড়বে রফতানি। এ জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
বাংলাদেশের একমাত্র সুবিধা সস্তা শ্রম এবং পণ্যের কম দাম। যদিও অবকাঠামোগত সংকট আছে ব্যাপক। এই সংকট কমাতে পারলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে তৈরি পোশাক রফতানির সম্ভাবনা আছে ইউরোপে। সবাই চায় সস্তা শ্রম, উন্নত যোগাযোগ এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব শুল্ক-করনীতি। এসব দিতে পারলে সামনে বাংলাদেশের রফতানি যেমন বাড়বে, তেমনি আসবে বিদেশি বিনিয়োগ। জানা গেছে, ইউরোপে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম বড় ক্রেতা দেশ সুইডেন তাদের রফতানি আদেশ অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। একইভাবে ডেনমার্কও করোনা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে।
স্বাধীনতার পর বিদেশ থেকে বেশির ভাগ ওষুধ আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হতো। আর বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ১৫১টি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রফতানির পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে দেশের ওষুধ। যে কারণে রফতানির পরিমাণও ব্যাপক। এছাড়া ওষুধের গুণগতমান বজায় রাখায় বিদেশি বাজারে বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের ওষুধ বাণিজ্যের ১০ শতাংশ দখল করা সম্ভব। বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বের ছাড়ের সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা আর বিশ্ববাজারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ রফতানিতে এশিয়ার শীর্ষে উঠে আসবে বাংলাদেশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ওষুধ রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৩৮৬ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮ কোটি টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫৪ কোটি টাকা। এরপর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ কিছুটা কমে হয় ৫৪১ কোটি টাকা। এরপর আবার রফতানি আয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে আয় হয় ৬৫৭ কোটি টাকা ও ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করে আয় করে ৭১৪ কোটি টাকা। ওষুধ রফতানিকারকরা মনে করছেন, রফতানি বৃদ্ধির হার প্রত্যাশিত মাত্রার নয়। আর রফতানি আয়ও তুলনামূলক কম। তবে রফতানির পরিমাণ ও দেশের সংখ্যা আগামীতে আরো বাড়বে বলে আশা করছেন।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।