নাগোর্নো-কারাবাখ বিতর্কিত এলাকা নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আবারো শুরু হয়েছে ভয়াবহ যুদ্ধ। আজারবাইজানের অন্তত একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আর্মেনিয়ার বাহিনী।
ভয়াবহ এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছে আরও শতাধিক। গতকাল রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই যুদ্ধ শুরু হয়। খবর আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল ও বিবিসির।
জানা গেছে, এই যুদ্ধে ১৬ জন আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীর মৃত্যু হয়েছে। দু’পক্ষেই হতাহত হওয়ার খবর এসেছে। এছাড়াও আর্মেনিয়ান এক শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আজেরবাইজানে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলেও খবরে জানা গেছে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান দাবি করেছেন, আজারবাইজানই প্রথমে বিমান এবং আর্টিলারি হামলা চালিয়েছিল। অন্যদিকে আজারবাইজান বলছে, তারা আর্মেনিয়ার হামলার জবাবে পাল্টা হামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, পুরো রণক্ষেত্র বরাবর আর্মেনিয়া গোলা নিক্ষেপ করছিল।
গোটা বিশ্ব যখন প্রাণঘাতী
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। দুটি দেশই এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অবলুপ্ত সেই সোভিয়েতের আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধল বিতর্কিত অংশ নাগোরনো-কারাবাখ এলাকা নিয়ে।
বিবিসি জানায়, প্রতিপক্ষ আর্মেনিয়ার হামলায় আজারবাইজানের কয়েকটি হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিধ্বস্ত হয়েছে। দুই তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, এই লড়াইয়ে কিছু বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।
এদিকে সংঘর্ষ শুরু হতেই বিবৃতি দেয় রাশিয়া। মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, উভয় দেশকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করতে হবে। তবে এই আহ্বানে তেমন কর্ণপাত করেনি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সরকার।
নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে গত চার দশক ধরে এই দুই দেশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা। ১৯৯১ সালের আগে পর্যন্ত আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান, দুটি দেশই ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে তারা আলাদা হয়।
গত জুলাই মাসেও দুই দেশের মধ্যে লড়াইয়ে ১৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বিরাট বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এই বিক্ষোভ থেকে নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল পুনর্দখলে পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগের আহবান জানানো হয় সরকারের প্রতি।
দুই পক্ষ কী বলছে
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় নাগোর্নো-কারাবাখের বেসামরিক বসতির উপর হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে। হামলা চালানো হয় ওই অঞ্চলের রাজধানী স্টেপনাকার্টে। আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলছে তারা দুটি হেলিকপ্টার এবং তিনটি ড্রোন গুলি করে ফেলে দিয়েছে এবং তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে।
অন্যদিকে আজারবাইজান বলছে, আর্মেনিয়া নাগর্নো-কারাবাখ এ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এতে বেসামরিক এবং সামরিক বাহিনীর সদস্য হতাহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। নিজেদের হেলিকপ্টার ভূপাতিত হওয়া ও ট্যাংকে আর্মেনিয়ার আঘাত হানার দাবি অস্বীকার করেছে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আজারবাইজান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, "পুরো রণক্ষেত্র বরাবর সশস্ত্র বাহিনীর পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে যার লক্ষ্য আর্মেনিয়ার বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা এবং বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা বিধান।"
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো বলছে, কয়েকটি গ্রামের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে সেখানে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং সেখানকার অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তারা আরো বলছে তাদের একটি হেলিকপ্টার নষ্ট হয়েছে তবে হেলিকপ্টারের ক্রুরা বেঁচে গেছে। তারা আরো দাবি করছে, আর্মেনিয়ার ১২টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তবে আর্মেনিয়া আরো যেসব ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছে সেগুলো আজারবাইজান অস্বীকার করছে।
এদিকে এই সংঘাতে সরাসরি আজারবাইজানের প্রতি সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক। হামলার জন্য আর্মেনিয়াকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ‘‘আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার এই লড়াইয়ে আমরা আমাদের আজারবাইজানের ভাইদের সব রকমের সহযোগিতা দিব,’’ এক বিবৃতিতে এভাবেই বাকুর সরকারকে আশ্বস্ত করেছেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার।