পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের কোন খবরটির এ মুহূর্তে শীর্ষে থাকা উচিত? প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে? অর্থনীতিটি গত ৩ মাসে ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে? ক্রমেই মারমুখী চীন সীমান্তে সেনা জড়ো করছে? না, ভারতের ১.৩ বিলিয়ন মানুষের ভাগ্যে ঘনীভ‚ত সর্বকালের বিপজ্জনক আশঙ্কাগুলি সত্তে¡ও দেশটির প্রধান নিউজ চ্যানেলগুলির স্পটলাইট সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বলিউড তারকাদের একাংশের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
গত ১৪ জুন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকতে একটি সাজানো রঙ্গমঞ্চের ওপর মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া হয়, যখন ৩৪ বছর বয়সী প্রখ্যাত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মরদেহ মুম্বাইয়ে তার ফ্ল্যাটে পাওয়া যায়। তার আত্মহত্যা গণমাধ্যমে একটি আলোড়ন তৈরি করে। তারকা খচিত বলিউডের খসে পড়া একটি তারা, এক ছলনাময়ী প্রেমিকা, একজন স্পষ্টভাষী নায়িকা, অযোগ্য পুলিশ বাহিনী এবং তিন অক্ষরের তদন্তকারী সংস্থা। একেবারে একটি ব্লকবাস্টার কাহিনী। তবুও যখন একজন উচ্চাভিলাষী অভিনেত্রী এবং সুশান্তের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ প্রকাশ করতে শুরু করলেন যে, সুশান্ত মাদক কারবারীদের ফাঁদে পড়েছিলেন, তার উপার্জন থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন, এমনকি নিজেকে আত্মহত্যার পথে চালিত করেছিলেন, তখন গল্পটি দুষ্ট মোড় নিল। সংবাদমাধ্যমগুলো ২৮ বছর বয়সী অভিনেত্রী এবং সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করল এবং তাকে গল্পের খলনায়িকাতে পরিণত করল। বিজেপিও এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার ফায়দা লুটতে দ্রুততার সাথে ঝোপ বুঝে কোপ মারল।
ডিসেম্বরের আগেই অনুষ্ঠিত হবে সুশান্তের জন্মস্থান বিহারের নির্বাচন। বিহার ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল এবং জটিল বর্ণবাদের রাজনীতির জন্য কুখ্যাত। আর ভারতে বিরাজমান একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট বিহারের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য বৃহত্তম রাজনৈতিক পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ কারণেই নির্বাচনকে সামনে রেখে সুশান্তের আত্মহত্যাকে ব্যবহার করে বিজেপি মুম্বাইয়ের নষ্টামির বিপরীতে বিহারের বর্বরতাকে ঢেকে দিতে সচেষ্ট হয়েছে।
গত বছর নির্বাচনের পর থেকে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই ও তার আশেপাশের রাজ্যগুলি এমন একটি জোটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার মধ্যে বিজেপির সাবেক আদর্শিক মিত্রগুলি বর্তমানে দলটির চরম বিরোধীতে পরিণত হয়েছে। বড় শহরের রাজনৈতিক ছকও বড়। তাই কার্য উদ্ধার করতে সেলিব্রিটিদের মাদক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার আদর্শবান অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত কঙ্গনা রানাউতকে হাতিয়ার বানিয়েছে বিজেপি। এর ধামাধরা গণমাধ্যমগুলো মুম্বাইয়ের পুলিশদের অদক্ষতা নিয়ে ব্যাপক হৈচৈ করেছে।
এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট পুরো বিষয়টিতে ঢুকে পড়েছে এবং ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে সুশান্তের মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। আরও দুটি সরকারি সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, যা আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি) তাদের নিজস্ব তদন্ত শুরু করেছে। এদের মধ্যে সবার আগে মাদক ব্যুরোরা সব থেকে দ্রুতগতিতে একটি মামলা সাজিয়ে ফেলেছে এবং রিয়াসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তার ভাইকেও গ্রেফতার এবং জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে।
সুশান্তের স্বজনরা এ দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। তবুও অনেকের কাছে এ প্রচারণা জনতার বিচারের মুখোমুখি। অভিনেতার মৃত্যুতে বিহারীদেরকে যেমন অসন্তোষ প্রকাশ করার কথা বলা হচ্ছে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গের রিয়া চক্রবর্তীর স্বদেশের বহু লোক তার ওপর অত্যাচারে তিক্ততা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বিজেপি পরের বছর সাধারণ নির্বাচনে বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে পশ্চিমবঙ্গকে বের করে আনতে বদ্ধপরিকর। সুশান্তের ঘটনাকে বিজেপি নির্বাচনী রণকৌশল হিসেবে ব্যবহার করায় হঠাৎ করেই ভারতের জনগণের মনযোগ দেশটির বাস্তব অবস্থা থেকে এবং অসংখ্য সমস্যার ওপর থেকে সরে গেছে। তবে বাঙালি ভোটারদের ওপর এর প্রভাবের জন্য মোদি পরে আফসোস করতে পারেন। বলিউডভক্তরা যেমনটি বলে থাকেন, ‘কাহিনী এখনও শেষ হয়নি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।