পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যাংকখাত অর্থনীতির চালিকাশক্তি। করোনার প্রাদুর্ভাবে অন্যান্য খাতের মতো ব্যাংকখাতেরও যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কীভাবে ও কতদিনে সম্ভব হবে, সেটা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি সচল করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাতে সঙ্গতকারণে ব্যাংকখাতের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা। ব্যাংকখাতের ওপর নানামুখী চাপ আছে। ঋণ দেয়ার চাপ তার মধ্যে প্রধান। ঋণ আদায় ব্যাহত হওয়ায় ব্যাংকখাতকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আয়ও অনেক কমেছে। উপরন্তু খেলাপী ঋণ ও তারল্যসংকট বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে একে অভূতপূর্ব নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছাঁটাই, বেতন কমানো, ব্যয় সাশ্রয়ের মতো অপ্রীতিকর ও হানিকর সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এই যখন নিরেট বাস্তবতা, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক অস্থাবর সম্পত্তি আইন করার তোড়জোড় শুরু করেছে, যার বাস্তবায়ন ব্যাংকখাতের ওপর ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সহযোগিতা করেছে বিশ্বব্যাংক। এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে নিয়ে একটি ওয়েবিনারও হয়েছে গত বুধবার। আইন চূড়ান্ত করতে আগামীতে আরো সভা হবে। আইনটি হলে অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেয়ার বিধান চালু হবে। এখন জমি, ভবন বা ফ্লাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংক। নতুন আইন কার্যকর হলে কারখানার যন্ত্রপাতি, ভবনোপকরণ ও সংযুক্ত মালপত্র যেমন, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল ইত্যাদি, জমির ফসল, গহনা প্রভৃতির বিপরীতে যে কেউ ব্যাংকঋণ দিতে পারবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্থাবর বা স্থানান্তরযোগ্য সম্পত্তির বিপরীতে ব্যাংক ঋণ দেয়ার চিন্তাটাই আসলে অস্বাভাবিক ও অবাস্তব। এতে ব্যাংকখাতের টাকা লুটের একটা নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। যেখানে স্থাবর সম্পত্তি বা জমি, ভবন ও ফ্লাট জামানত নিয়েও ব্যাংকের টাকা লুটপাট ঠেকানো যাচ্ছে না, খেলাপী ঋণের লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে চেয়ার-টেবিল ও ব্যবহৃত জিনিসপত্রের জামানতে ঋণ দিলে কী হবে, তা বিশদ ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না। কারখানার যন্ত্রপাতি, গৃহের আসবাবপত্র, জমির ফসল- এসবের কোনো স্থায়ীত্ব নেই। যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের যেমন ক্ষয় আছে, তেমনি সফল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এসব বিনষ্ট হলে ব্যাংক কীভাবে ঋণের টাকা আদায় করবে? একই অস্থাবর সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে জামানত দিয়ে কেউ যে ‘ঋণ ব্যবসা’ করবে না। তারই বা নিশ্চয়তা কী? একই সম্পত্তি দেখিয়ে বিভিন্নজনও তো ঋণ নিতে পারে। অস্থাবর সম্পত্তির মূল্যমান নিধারণ করার পদ্ধতি কী হবে, কে বা কারা সেটা করবে, সেও একটা প্রশ্ন। এক্ষেত্রে একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কর্তৃপক্ষ যদি নয় ছয় করে, কীভাবে তা ঠেকানো যাবে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির বিপরীতে ঋণ প্রদানের যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তাকে একথায় খোঁড়া যুক্তি বলে অভিহিত করা যায়। শিল্পকারখানার জন্যই যদি ঋণ দেয়া হবে, তবে তার উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় নেয়া হবে না কেন? তাদের মতে, কারখানার যন্ত্রপাতির ওপর ঋণ দিলে ঋণখেলাপ কমবে, স্বচ্ছতা আসবে। এ ব্যাপারে তারা কোনো গ্যারান্টি দিতে পারেন কি?
নতুন আইন প্রণয়ন ও কার্যকর হলে খেলাপী ঋণের পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যাংকের পক্ষে ঋণের টাকা আদায় করা আরো কঠিন হয়ে উঠবে। লুটেরাচক্র তৈরি হবে, যারা ব্যাংক খাতকে ফোকলা করে দেবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ব্যাংকখাতের ভূমিকা সংকুচিত করে দেবে, যাতে গোটা দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু ব্যাংকখাতই বিপাকে পড়বে না, দেশ-জাতিও বিপাকে পড়বে। তবে কেউ কেউ মনে করেন, অস্থাবর সম্পত্তি যেমন গাড়ি, প্লেন বা হেলিকপ্টার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র ও গহনাকে জামানত হিসাবে রেখে ঋণ দেয়া যেতে পারে। বলা বাহুল্য, এর জন্য নতুন আইনের কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলোকে স্থায়ী সম্পদের অন্তর্ভুক্ত বা বিশেষ জামানতযোগ্য সম্পদ হিসাবে ঘোষণা করলেই হয়। সোনা, বন্ড বা সঞ্চয়পত্র ব্যাংকে জমা রাখার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এমন কিছু কোনোভাবেই করা যাবে না বা করা উচিৎ হবে না, যাতে ব্যাংকখাতে লুটপাটের নতুন সুযোগ তৈরি হয়। এখাতের যাবতীয় কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।