Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙছে সড়ক-মহাসড়ক

অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল এক্সেল লোড নীতিমালা মানছেন না কেউ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বহন ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচলে ভাঙছে সড়ক-মহাসড়ক। পণ্য পরিবহনে সরকারের এক্সেল লোড নীতিমালা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। ফলে বছরের পর বছর বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচলের কারণে ক্ষতি হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক ও সেতুর।

জানা গেছে, অতিলোভের কারণে পণ্যবাহী যানের চালক ও শ্রমিকেরা ওজনসীমার অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার অতিরিক্ত বালু বোঝাই করে পারাপারের সময় ট্রাকসহ কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ে। এভাবে বাড়তি ওজন নিয়ে যান চলাচলের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, যাদের তদারকির দায়িত্ব তারাও এ বিষয়টি ঠিকমতো তদারক করেন না। অথচ অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল ঠেকাতে ২০১২ সালে এক্সেল লোড নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। গত আট বছরেও নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত পণ্য বহনের দায়ে জরিমানা আদায় করা যায়নি।

নীতিমালায় অনুযায়ী মহাসড়কে চালাচলকৃত ছয় চাকাবিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজনসীমা (যানবাহন ও মালামালসহ) সাময়িক সময়ের জন্য ২২ টন, ১০ চাকাবিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজনসীমা (যানবাহন ও মালামালসহ) সাময়িক সময়ের জন্য ৩০ টন এবং ১৪ চাকাবিশিষ্ট মোটরযানের সর্বোচ্চ ওজনসীমা (যানবাহন ও মালামালসহ) সাময়িক সময়ের জন্য ৪০ টন নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নীতিমালা না মানলে দুই থেকে ১২ হাজার জরিমানা গুনতে হবে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ সেতু ও মহাসড়কের পাশে পণ্যসহ গাড়ি পরিমাপের জন্য এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনও স্থাপন করে দিয়ে চাকাভেদে প্রতিটি শ্রেণির গাড়ির জরিমানার হারও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য চারটি ধাপ পর্যন্ত এই জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার হার সর্বনিম্ন ২ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। যেমন ৬ চাকার গাড়ি ১৫ টনের বেশি, অর্থাৎ সাড়ে ১৬ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করলে ২ হাজার টাকা, সোয়া ১৭ টন পর্যন্ত করলে ৪ হাজার টাকা, ১৮ টন পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পৌনে ১৯ টন পর্যন্ত করলে ১২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

একইভাবে ২৬ চাকার গাড়ি ৪৮ দশমিক ৪ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করলে ২ হাজার টাকা, ৫০ দশমিক ৬ টন পর্যন্ত ৪ হাজার টাকা, ৫২ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত করলে ৬ হাজার এবং ৫৫ টন পর্যন্ত করলে ১২ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারন করলেও গত ১৮ জুলাই অতিরিক্ত সিমেন্ট বোঝাই করে পারাপারের সময় ট্রাকসহ বগুড়ার সারিয়াকান্দির বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়ে। ১০ চাকার একটি ট্রাক ৫০ টন সিমেন্ট (অতিরিক্ত ২০ টন) নিয়ে সারিয়াকান্দি যাওয়ার সময় ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। এর আগে চলতি বছরের ১২ ফেব্রæয়ারি বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কে বালুবোঝাই একটি ট্রাক বেইলি সেতু পার হতে গিয়ে সেতু ভেঙে খালে পড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ ব্যয়ে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পরও আয়ুষ্কালের অর্ধেক সময়ও টিকছে না মালবাহী গাড়ির মাত্রাতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের কারণে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একটি সিঙ্গেল এক্সেল সর্বোচ্চ ১০ টন লোড বহন করার কথা থাকলেও মহসড়কগুলোতে যানবাহনে প্রায়ই ২০ টন এক্সেল লোডের ট্রাক চলাচল করছে। এভাবে একটি সড়কের ওপর দিয়ে ট্রাক সর্বসাকুল্যে ১৭০ বার চলাচল করলে সড়ক ক্ষতি হতে বাধ্য। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দেশের অনেক স্থানেই মানহীন সড়ক নির্মাণ করা হয়। তার ওপর প্রায়ই দেখা যায় পাঁচ টনের ট্রাকে বহন করা হচ্ছে ১০-১২ টন মাল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক, মহাসড়ক ও ব্রিজ। সড়কের কয়েকটি স্থানে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে যন্ত্র বসানো হলেও তা ঠিকভাবে এখনো কার্যকর হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি ওজনের পণ্যবাহী যান থেকে টাকা নিয়ে তা চলতে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে সড়কে ওভার লোড ঠেকাতে গঠিত কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোস্তম আলী বলেন, অতিরিক্ত মালামাল বহনের বিষয়টি যারা তদারিক করবে, তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। এযাবত যেসব বেইলি ব্রিজ ভেঙে পড়েছে তার সিংহভাগই ঘটেছে অতিরিক্ত ওজনের কারণে। তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং ওভার লোড বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির কর্মকর্তা তফাজ্জল হোসেন বলেন, মহাসড়কে প্রতিটি যানবাহনের জন্য নির্ধারিত ওজন বেঁধে দেয়া হলেও বাস্তবে প্রায় সব ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী পরিবহন দ্বিগুণ-তিনগুণ ওজনের পণ্য বহন করে। এর ফলে বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ বা মেরামতের ছয় মাস বা এক বছরের মাথায় ফাটল, বিটুমিন উঠে যাওয়া, খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ কারণে প্রতি বছর সড়ক, মহাসড়ক এবং সেতুর ক্ষতি হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. আমিনুল হক বলেন, কোন গাড়ির ওজনসীমা কত হবে, তা নির্ধারণ করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ছয় চাকার চার এক্সেল গাড়িতে সাড়ে ১৫ টন বা ১৬ টন পণ্য বহনের সক্ষমতা রয়েছে বøু-বুক অনুযায়ী। তা আরও বাড়ালে নিশ্চিতভাবেই সড়কের ক্ষতি হবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে এক্সেল লোড-সংক্রান্ত নীতিমালা কার্যকর রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ স্কেল বসানো হয়েছে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরো ২১টি মহাসড়কে নতুন করে ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ স্কেল বসানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো বসানো হলে সুফল মিলবে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর সদর, কেরানীগঞ্জ, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, বুড়িচং, ফেনী সদর, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম সদর, সীতাকুন্ড, মাধবপুর, বিয়ানীবাজার, রামপাল, সাতক্ষীরা সদর, দামুড়হুদা, শিবগঞ্জ, হাকিমপুর, রৌমারী, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, শিবচর ও কালিহাতী উপজেলায় নতুন ওজন স্কেল বসানো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->