পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভয়ঙ্কর অপরাধ রোধে অ্যাপ ছাড়া মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। তারপরও মোটরযানে অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পাঠাও ও উবারে রেজিস্ট্রেশন না করেই রাজধানীতে যাত্রী পরিবহন করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। গত শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এভাবে যাত্রী পরিবহন করা হলে ভয়ঙ্কর অপরাধ ও নাশকতার আশঙ্কা বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উবার ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সেলিম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, অ্যাপ কোম্পানিগুলো অনেক সময় কমিশন দিয়ে থাকে। এতে চালকদের আয় কম হয়। এ কারণেই ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই অ্যাপ ব্যবহার না করে যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। তবে এভাবে যাত্রী পরিবহন না করার জন্য সবাইকে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, খুব শিঘ্রই পাঠাও ও উবার কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করা হবে। ওই বৈঠকের পর অভিযান চালানো হবে। তবে অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে।
পুলিশ জানায়, গত ২১ আগস্ট তুরাগ থানাধীন উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির গলিতে মোটরসাইকেলসহ পৌঁছামাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা গতিরোধ করে। তারা চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার ব্যবহৃত টিভিএস স্ট্রাইকার এবং একটি মোবাইলসেট ছিনতাই করে। ওই ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়। অ্যাপ ছাড়াই যাত্রী পরিবহন করায় এমন অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ওই ঘটনায় ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেলসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মাসুম মোল্লা ও মো. ইমরান এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেছে।
এদিকে, এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার অ্যাপ ছাড়া মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে যাত্রী বহন করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। পুলিশ কর্মকর্তার এমন হুঁশিয়ারির পরও অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।
গত শুক্রবার রাতে গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কাকরাইল, শাহবাগ, পল্টন, নাজিরা বাজার মোড়, বাংলামটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে চালকরা দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে দিয়ে কোনও পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় তারা অযাচিতভাবে জিজ্ঞাস করেন কোথায় যাবেন? এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে তাদের দরদাম করতে দেখা যায়। কেউ কেউ ভয় পেয়ে দ্রæত চলে যায়।
গতকাল দুপুরে একই চিত্র দেখা গেছে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ মোড়েও। এসব এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন চালক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কোনও পথচারীকে সামনে পেলেই কোথায় যাবেন জানতে চান তারা। এ সময় কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তাদের দর কষাকষি করতে দেখা গেছে।
চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই চুক্তিভিক্তিক ভাড়া নেয়া শুরু হয়। এ সময় অনেক মানুষ পেশা বদল করে। ওই সুযোগে অপরাধীরা মোটরসাইল নিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু করে। এছাড়াও যাত্রী বেশে অনেক অপরাধী মোটরসাইকেলে উঠে চুরি-ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটায়। বর্তমানে কয়েক শত মোটরসাইকেলে অ্যাপ ছাড়াই যাত্রী পরিবহণ করে বলে তাদের ধারণা।
বঙ্গবাজার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা চালক মোজ্জাম্মেল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী অনেক কম পাওয়া যায়। তাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। এ সময় পথচারীদের জিজ্ঞাসা করলে কেউ কেউ দরদাম করে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রা করে। গন্তব্যে পৌঁছার পর ভাড়া পরিশোধ করে। এ সময় অ্যাপ বন্ধ করে রাখা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, প্রায় ৬ মাস থেকে তিনি অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে দুই বার ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। তবে দুইবারই অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করেছিলেন। এর মধ্যে প্রথমবার যাত্রী বেশে এক ছিনতাইকারী তার মোটরসাইকেলে ওঠে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। দ্বিতীয়বারও আরেক ছিনতাইকারী যাত্রী বেশে ওঠে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে বলে জানান ওই চালক।
শাহীন নামের আরেক চালক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে কয়েক দিন রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ ছিল। এরপর থেকে যাত্রী কমে গেছে। তাই বাড়তি আয়ের আশায় ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীদের সাথে চুক্তিতে চলাচল করছেন তারা।
শ্যামলী এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা মনির হোসেন নামের এক মোটরসাইকেল চালক জানান, তিনি প্রাইভেটকারের চালক ছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর তার চাকরি চলে যায়। পরবর্তীতে একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত পাঠাও বা উবার কোনো প্রতিষ্ঠানে তিনি রেজিস্টেশন করেনি। কি কারণে রেজিস্ট্রশন ছাড়া যাত্রী পরিবহণ করছেন; জানতে চাইলে তিনি বলেন, অ্যাপ ছাড়াই প্রতিদিন ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। তাই রেজিস্ট্রেশন করছি না। এছাড়াও অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী কম পাওয়া যায়।
গতকাল সকালে ফার্মগেট এলাকায় তুহিন নামের এক যাত্রী অ্যাপ ছাড়াই মোটরসাইকেল চালকের সাথে দরদাম করছিলেন। এ সময় অ্যাপ ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেল ডাকলে অনেক সময় লাগে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকার মোড়গুলোতে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন চালকরা। সেখানে গেলে অ্যাপ লাগে না। দরদাম করে গন্তব্যে পৌঁছা যায়। তাই অ্যাপ ব্যবহার না করেই মোটরসাইকেলে চলাচল করি।
সরজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১৫-২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালকরা। এক পর্যায়ে তাদের কাছে যেতেই ‘কই যাবেন’ বলে ডাকা-ডাকি শুরু হয়। এ সময় পথচারীরা অনেকেই বিরক্তিবোধও করেন।
আতিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, তার বাসা কারওয়ান বাজার এলাকায়। তাই কারওয়ান বাজার মোড় থেকে প্রতিদিন বাসে ওঠেন। আর অফিস শেষ করে কারওয়ান বাজার মোড়েই গিয়ে নামেন। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইক চালকরা তাকে প্রতিদিনই বিরক্তি করে থাকেন। সবাই- কই যাবেন? কই যাবেন? বলে চিৎকার করে। এটা কেমন ব্যবহার! আমার কাছে অবাক লাগে। মোটরসাইকেল তো ডাকাডাকি করার কথা না। অ্যাপের মাধ্যমে কল দিলে তবেই আমি কোথাও যেতে পারব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।