Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে শুধু সিএএ-বিরোধীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ এএম

দিল্লি দাঙ্গার চার্জশিটে একজনও বিজেপি নেতা-কর্মীর নাম রাখল না পুলিশ। অথচ অভিযুক্ত করা হলো সিএএ বিরোধী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ নেতাকর্মীদের। ১৭ হাজার ৫০০ পাতার চার্জশিট। ছত্রে ছত্রে দাঙ্গার বিশদ বিবরণ। দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে এই চার্জশিট আদালতে পেশ করেছে দিল্লির পুলিশ। কিন্তু সেই চার্জশিট নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। সরাসরি আঙুল উঠছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে। আদালতে দিল্লি পুলিশ যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে কেবলমাত্র বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের নেতানেত্রীদের নাম। ২০২০ সালের গোড়া থেকে দেশ জুড়েই শুরু হয়েছে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভ। দিল্লিতেও তার ঢেউ লেগেছে যথেষ্ট। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠছে। ঘটনাচক্রে দিল্লি দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশ যতজনের নাম চার্জশিটে রেখেছে তাদের অধিকাংশই নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মী। জেএনইউয়ের ছাত্র নেতা থেকে শুরু করে আপ থেকে সাসপেন্ড হওয়া নেতা সকলকেই অভিযুক্ত করেছে পুলিশ। কিন্তু বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের কাউকে সেখানে রাখা হয়নি। অথচ বিজেপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সে সময় সরাসরি অভিযোগ উঠেছিল। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র দাঙ্গা প‚র্ব দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন সিএএ নিয়ে যারা জায়গায় জায়গায় আন্দোলন করছেন, তাদের এরপর তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ নয়, তারাই তুলে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন কপিল। তার কিছু দিন আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর গোলি মারো শালোকো সেøাগান দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। প্রাক্তন পুলিশ কর্তা জুলিও রিবেইরো দুইটি চিঠি দিয়েছেন দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে। সেখানে তিনি বলেছেন, কী করে কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ বর্মাকে ছাড় দেয়া হলো? কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না? রিবেইরো পদ্মভ‚ষণ ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ মেডেল পেয়েছেন। পুলিশ মহলে তিনি রীতিমতো শ্রদ্ধার পাত্র। কিছু দিন আগেই একটি রিপোর্ট পেশ করেছে আন্তর্জাতিক অধিকাররক্ষা সংস্থা অ্যামনেস্টি। সেখানে দিল্লি দাঙ্গার জন্য সরাসরি দিল্লি পুলিশকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল পুলিশের একাংশ। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কৈফিয়তও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুলিশ তা নিয়ে কোনও উত্তর দেয়নি। বরং কেন চার্জশিটে ছাত্রদের নাম রাখা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, চাক্কা জ্যামের মতো অগণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামিল হয়েছিল ছাত্ররা। তারা ২০ কিলোমিটার হেঁটে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলে পৌঁছেছিল। তাদের নির্দেশেই স্থানীয় লোকেরা দাঙ্গায় নেমেছিল। দিল্লি পুলিশের এ হেন চার্জশিট সমস্ত মহলেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অনেকেই বলছে, পুলিশ সম্প‚র্ণ রাজনৈতিক কারণে এমন চার্জশিট তৈরি করেছে। খবরে বলা হয়, দুটি স্টিলের ট্রাঙ্কে ভরে ১৭,৫০০ পৃষ্ঠার এই চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। এর ২,৬০০ পৃষ্ঠায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। এছাড়া কয়েক হাজার পৃষ্ঠার পরিশিষ্ট রয়েছে। যারা কঠোর সন্ত্রাস-দমন অবৈধ তৎপরতা (প্রতিরোধ) আইনের আওতায় রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন বরখাস্ত হওয়া এএপি কাউন্সিলর তাহির হোসাইন ও অনেক ছাত্র এক্টিভিস্ট। পুলিশ জানায় যে এই মামলায় তাদের তদন্ত শেষ হয়নি। সম্প‚রক চার্জশিটে আরো অনেকের নাম যোগ হতে পারে। পুলিশ আদালতকে বলে, ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-প‚র্ব দিল্লীর দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে এসব ষড়যন্ত্রকারীর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। বলা হয়, দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপ সিলামপুর ও জাফরাবাদের দাঙ্গা বাধায়। এই দুই জায়গার দাঙ্গা ছিলো সবচেয়ে ভয়াবহ। ছাত্ররা ২০ মাইল দ‚র থেকে পায়ে হেটে এসে দাঙ্গায় অংশ নিয়েছে দাবি করে পুলিশ বলে, ষড়যন্ত্রকারীরা দাঙ্গার পরিকল্পনা করে। আর এলাকার মধ্য সারির নেতারা তা বাস্তবায়ন করে। সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ সম্পর্কে পুলিশ বলে, শুরু থেকেই এটা কোন গণতান্ত্রিক বিক্ষোভ ছিলো না। সহিংসতা উষ্কে দিতে এই বিক্ষোভ শুরু করা হয়। পুলিশ আদালতকে বলে যে রোডবøক হলো বিক্ষোভের অগণতান্ত্রিক উপায় এবং তা সহিংসতা উষ্কে দিতে করা হয়। ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চার্জশিট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ