পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
খবরটি একই সঙ্গে বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক। ইনকিলাবে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে করোনা পজিটিভ অন্তত সাতজন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। গত এক মাসে সউদী এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই দুবাইয়ের বিশেষ ফ্লাইটে আসা প্রবাসীদের মধ্য থেকে এদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা ছাড়া আর কতজন করোনা পজিটিভ প্রবাসী হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের গন্ডি পার হয়ে জনারণ্যে মিশে গেছেন, কারো জানা নেই। যারা চিহ্নিত হয়েছেন, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা হননি, ফাঁক ফোকর গলিয়ে পার পেয়ে গেছেন, তারা একই সঙ্গে তাদের নিজেদের, আত্মীয়-স্বজনদের, অন্যান্যের জন্য হয়েছেন হুমকিস্বরূপ। তাদের সংস্পর্শজনিত কারণে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিমানবন্দর সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে করোনা সনদ বাধ্যতামূলক নয়। এই সুযোগটি করোনা পজিটিভ কোনো কোনো প্রবাসী নিচ্ছেন। বিমান সংস্থাগুলো একারণে ফ্লাইটে ওঠার সময় বাংলাদেশি যাত্রীদের করেনা সনদ আছে কিনা যাচাই করছে না। ফলে তাদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ করোনা পজিটিভ সনদ বিমান বন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জমা দিয়েছেন এবং সম্ভবত একারণেই সাত জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের করোনা সনদ লাগবে না, এ নির্দেশনা কোন কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, আমরা জানি না। যেই দিয়ে থাক, কাজটি যে ভালো করেনি তাতে সন্দেহ নেই। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে পরিণামদর্শিতার লেশমাত্র নেই। দ্বিতীয়তঃ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষগুলোই বা কেন করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী বহন করছে, সেটাও আমাদের বোধগম্য নয়। করোনা সনদ বাধ্যতামূলক করেই তো তাদের যাত্রী বহন করা উচিৎ। কারণ, এর সঙ্গে যাত্রী ও বিমানের কর্মকর্তা-কর্মীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। কোনোভাবেই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষগুলো এটা এড়িয়ে যেতে পারে না। আরো একটি বিষয়, বিমানবন্দরে দায়িত্বরত স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা সনদ ছাড়া, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের ছেড়ে দিচ্ছে কীভাবে? প্রবাসী কর্মীদের এবং অন্যান্য যাত্রীদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে করোনা সনদ বাধ্যতামূলক বলেই আমরা জানি। প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রম কেন? কে না জানে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় আকাশ পথের যাত্রীদের মাধ্যমেই। বিশ্বজুড়ে দ্রæত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পটভূমিতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরে আসে। ইউরোপের ইতালি থেকে আসা প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে অনেকেরই করোনা পজিটিভ প্রমাণিত হয়। তাদের মাধ্যমেই দেশে প্রথম করোনা ছড়িয়ে পড়ার সূত্রপাত হয়। এর পর অতি দ্রুততার সঙ্গে দেশের সর্বত্র তা সংক্রমিত হয়। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ, যাদের মধ্যে মারা গেছে প্রায় পাঁচ হাজার। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষক মহল একমত যে, শুরুতে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়ায় করোনা পরিস্থিতির অস্বাভাবিক অবনতি ঘটেছে। করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরও বিমানবন্দরে কড়াকড়ির অভাব, বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকা ইত্যাদি এ জন্য বিশেষভাবে দায়ী। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য, ফিরে আসা প্রবাসীদের জোরজবরদস্তি ইত্যাদিও কম দায়ী নয়। প্রবাসী হাজার হাজার বাংলাদেশিকে যদি যথাযথভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো, করোনা পজিটিভ ধরা পড়াদের স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎস্যার আওতায় আনা যেতো, তাহলে করোনার এত ব্যাপক বিস্তার ঘটতো না।
ইউরোসহ বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ওইসব দেশে বাংলাদেশিরা আছেন। তারা দেশে ফিরছেন নিয়মিত। ভবিষ্যতে বড় সংখ্যায় ফিরবেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, সতর্ক ও সাবধান হওয়ার বিকল্প নেই। আগের মতো এখনো যদি সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনায় ত্রু টি থাকে, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা প্রশ্রয় পায়, তবে দেশের মানুষকে আরো বড় আকারে খেসারত দিতে হতে পারে। বিদেশ থেকে বাংলাদেশি বা ভিনদেশি যেই আসুক, কিংবা দেশ থেকে যেই বিদেশে যাক, তার করোনা সনদ বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিদেশ থেকে করোনা পজিটিভ কেউ যাতে দেশে আসতে না পারে, কিংবা দেশ থেকে করোনা পজিটিভ কেউ বিদেশে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, করোনা পজিটিভ নিয়ে কিছু কর্মী ইতালি গেলে পুরো ফ্লাইটটিই সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। জাল করোনা সনদ নিয়ে সেখানে যাওয়ার কারণেই এমনটি হয়। তাই কেউ যেন জাল সনদ নিয়ে বিদেশে যেতে না পারে, সেটা অবশ্যই তীক্ষ্মনজরে রাখতে হবে। এর সঙ্গে দেশের ভাবমর্যাদা ও স্বার্থ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এখনো অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। করোনা পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতির ওপর এটা বিশেষভাবে নির্ভর করে। আমরা আশা করি, আলোচ্য বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।