Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাসহ শরণার্থী সমস্যার সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৮ এএম

শরণার্থী সংকট ক্রমশঃ প্রকট হয়ে উঠছে। তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বৈশ্বিক শরণার্থীর মোট সংখ্যা আড়াই কোটিরও বেশি। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ‘করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা, যারা স্থানচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে, যাদের মধ্যে আড়াই কোটিরও বেশি শরণার্থী, যাদের বেশিরভাগই বিশ্বের দরিদ্রতর দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।’ শরণার্থীদের মধ্যে শীর্ষ আশ্রয়দানীকারী দেশ হচ্ছে: তুরস্ক, কলাম্বিয়া, পাকিস্তান, উগান্ডা, জার্মানি ও বাংলাদেশ। শরণার্থীদের বেশিরভাগই মুসলমান এবং তারা মধ্যপ্রাচ্যের গৃহযুদ্ধরত দেশগুলোরই বেশি। এই শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ যেমন ঘোর অন্ধকার, তেমনি আশ্রয়দাতা দেশগুলোও চরম সংকটে পড়েছে। শরণার্থী ও অভিবাসীদের কেন্দ্র করে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের উত্থান হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। তবুও শরণার্থী সংকট নিরসনের বিষয়টি তলিয়ে গেছে বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে। কারণ, বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের জীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যেই ৯ লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। আর আক্রান্ত হয়েছে কয়েক কোটি মানুষ। উপরন্তু মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখনো টিকা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। ৭টির ট্রায়াল চলছে। এর মধ্যে ৫টি চীনের। এসবে সাফল্য আসবে কি-না এবং এলেও মূল্য কত হবে, সকলেই পাবে কি-না, এটা নিয়ে বাণিজ্যযুদ্ধ হবে কি-না, হু’র তালিকা মতে সামর্থ্যহীন ৯০টি দেশ বিনামূল্যে পাবে কি-না, ইউনেসকোর দাবি মোতাবেক সংস্থাটি ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ করতে পারবে কি-না ইত্যাদি প্রশ্ন উঠছে। অপরদিকে, করোনা মোকাবেলার জন্য দীর্ঘ লাকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ‘বৈশ্বিক মহামন্দা’ সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোরও অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নেমেছে। কোটি কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হয়ে দুর্বিষহ জীবিনে নিপতিত হয়েছে। দারিদ্র্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বব্যাপীই। এছাড়া, শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ তথা প্রায় ৫০ কোটি শিশুর শিক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। কারণ, অনলাইন শিক্ষার কার্যক্রমের সামর্থ্য নেই তাদের। আর্থিক ও সামাজিক এই দূরবস্থায় সকলেই নিজেকে রক্ষা করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যাকে বলে ‘চাচা আপন প্রাণ বাচা’। ফলে মানুষের মানবিকতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও। কারণ, তারা করোনা মোকাবেলা করা নিয়েই ব্যস্ত বেশি। তাই শরণার্থী সংকট নিরসনের বিষয়টি প্রায় তলিয়ে গেছে বা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী দেশগুলোর সংকট তীব্রতর হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে বাংলাদেশেও।

বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের আগমন চলছে গত নব্বই দশক থেকে। তবে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। শরণার্থীরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবির ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই পেয়েছে। সেখানে তারা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবুও মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু নির্যাতন অব্যাহত আছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ঊর্ধ্বতন মানবাধিকার কর্মকর্তা জেমস রডিহেভার গত ২৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বরের নির্বাচনটি রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি সুযোগ। ২০১০ সালের আগে সংখ্যালঘু এই মুসলিম সম্প্রদায় মিয়ানমারের সব নির্বাচনে ভোট দিতে পারত। ২০১৫ সালের পর তাদেরকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনে চারজন রোহিঙ্গা প্রার্থী হওয়ার আবেদন করেছিলেন; কিন্তু তাদের আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এটি রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার খর্ব করার চলমান প্রক্রিয়ার একটি অংশ।’ তিনি আইন সংশোধন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তবুও রাখাইনের কিউকতাও এলাকার একটি গ্রাম গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেই সঙ্গে স্থানীয় দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে খবের প্রকাশ। উল্লেখ্য যে, আগে রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র গুলি করতে সৈনিকদের প্রতি নির্দেশনা ছিল বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে স্বীকার করেছে মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য। তারা মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনে বহু সংখ্যক গ্রামবাসীকে হত্যা এবং গণকবর দেয়ার কথাও স্বীকার করেছে। মিয়ানমারের রাখাইনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। তাই সেখানকার শত শত রোহিঙ্গা এখনও দেশ ত্যাগ করে সাগর পথে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো দেশই তাদের ঢুকতে দিচ্ছে না। এমনকি বাংলাদেশও নয়। তাই ঝড়-বৃষ্টি ও অনাহারে অসংখ্য রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগরেই মারা গেছে! অবশ্য সীমান্তের ফাঁক ফোকোর দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে গোপনে। এছাড়া, সাগরের বুকে প্রায় ছয় মাস ভাসমান থাকার পর অবশেষে ৩০০ রোহিঙ্গা মুসলমান গত ৭ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের মাটিতে নামার সুযোগ পেয়েছে। যা’হোক, সেভ দ্য চিলড্রেনের সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, ‘গত তিন বছর কক্সবাজারের শিবিরগুলোয় ৭৫ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে।’ অপরদিকে, গত ২৯ আগস্ট প্রকাশিত এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পুরোপুরিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা যাচ্ছে না। জন্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ও নতুন একটি বিষয়। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটছে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্মম জাতিগত নিধন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। গণহারে হত্যা, ধর্ষণ করা হয় অসংখ্য রোহিঙ্গাকে। পুড়িয়ে দেয়া হয় অগণিত গ্রাম। নির্যাতন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭.৪০ লাখ রোহিঙ্গা। দেশটিতে আগে থেকেই বাস করছিল নব্বইয়ের দশকে পালিয়ে আসা আরও আনুমানিক ৫ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে তথ্য, চলাফেরা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘রাখাইনে অবস্থানরত ৬ লাখ রোহিঙ্গাও গুরুতর নির্যাতন ও সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। কেউ কেউ মরিয়া হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন।’ অপরদিকে, গত ২৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মরগান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমারে এখনো স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যা ও হাজার হাজার মানুষের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটতে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগমুক্ত হতে পারছে না। এই ধরনের পরিস্থিতি শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা খর্ব করে এবং শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করে। এতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিজ দেশে এবং ঘরে নিরাপদে, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। এছাড়া রাখাইন রাজ্য বিষয়ে কফি আনানের নেতৃত্বে পরিচালিত এডভাইজরি কমিশনের দেয়া সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে জোরালো প্রচেষ্টা গ্রহণের বিষয়েও জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’ অপরদিকে, রোহিঙ্গাদের আগমনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ২৬ আগস্ট জাতিসংঘের মহাসচিব রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার মূল কারণ নিরসন ও তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘুদের প্রধানত মুসলিম, রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়কে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ঘটনা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড়।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহযোগিতার জন্য তৈরি ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ সূত্র মতে, ‘চলতি বছর রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির সংকট মোকাবেলায় শুরুতে ৮৭.৭০ কোটি ডলারের চাহিদা ছিল। তবে জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ কোটি ডলারে। এর মধ্যে মাত্র ৪৭.৭৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে বছরের প্রথম আট মাসে। প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী চার মাসে আরও প্রায় ৫৮ কোটি ডলারের চাহিদা রয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য চাহিদার ৬৭% অর্থ জোগাড় করতে পেরেছিল জাতিসংঘ। আর ২০১৮ সালে ৯৫ কোটি ডলার চাহিদার মধ্যে সাড়ে ৬৫ কোটি ডলার পাওয়া গিয়েছিল, যা সেই বছরের চাহিদার ৬৯%। চাহিদার তুলনায় জোগান এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০১৭ সালে, ৭৩%। অনুদানের এ অর্থ ৬১টি জাতীয় এনজিও, ৪৮টি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘের আটটি সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যয় করা হচ্ছে। তথ্য পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। করোনাকালে সহায়তা আরও হ্রাস পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের গণহত্যার জন্য দায়ী কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু দেশটির উপর কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি জাতিসংঘও নয়। ফলে মিয়ানমার জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শক্তিশালী দেশগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত ও পরামর্শকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না। এমনকি জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সে দেশে ঢুকতেও দেয়নি। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত যাওয়া তাই সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গত ২৭ আগস্ট বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা এদেশের আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ গত তিন বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশের সরাসরি ব্যয় হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে ও হচ্ছে। এসব সংকট বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ই-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে আগস্টের শেষ সপ্তাহে। ‘কানেক্টিং রোহিঙ্গা ডায়াস্পোরা: হাইলাইটিং দ্যা গ্লােবাল ডিসপ্লেসমেন্ট’ শীর্ষক সম্মেলনটির আয়োজন করেছিল অ্যাকশনএইড, সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে রোহিঙ্গা অভিবাসী এবং রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং মানবাধিকার কর্মীরা অংশ নেন। সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। মিয়ানমারের উদাসীনতার কারণেই রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তায় পড়েছে।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে মিয়ানমারের রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ তৈরিতে চাপ দেওয়ার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান। সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে জোরালো আহবান জানানো হয়। একইসাথে মিয়ানমার সরকারকে এ সংকটের দায়ভার নেয়া এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশগুলোকে যথাযথ আর্থিক ও আইনি ক্ষতিপূরণ দেয়ার পাশাপাশি সংকটের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক তদন্তের দাবিসহ ১৫টি প্রস্তাব আনা হয়েছে সম্মেলনে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে থাকা শরণার্থীদের সংকট নিরসনের বিষয়টি তলিয়ে গেছে করোনা মহামারি ও করোনা সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দায়। কিন্তু সংকটের আর্বিভাব ঘটেছে বিশ্বের আদিকাল থেকেই। তাই বলে জীবন ও জীবিকা থেমে থাকেনি কখনোই। কিছুটা থমকে গেলেও পরবর্তীতে এগিয়ে চলেছে ভবিষ্যতের দিকে। ফলে বিশ্ব উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে। তেমনি করোনা মহামারিতে বিশ্ববাসী আপাতত স্তম্ভিত হলেও আবারও মাথা উঁচু করে চলা শুরু করেছে। তাই জীবন ও জীবিকার পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এমনকি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাও এগিয়ে চলেছে। তাই চন্দ্র, মঙ্গল ইত্যাদি গ্রহেও অভিযান চলছে। থেমে নেই মারণাস্ত্র নির্মাণ এবং যুদ্ধও। যেমন চীন-ভারত মুখামুখি হয়েছে সীমান্তে। এই অবস্থায় শরণার্থী সংকট নিরসনের বিষয়টি তলিয়ে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত। কারণ, এতে করে শরণার্থীদের যেমন জীবন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি আশ্রয়দানীকারী দেশগুলোরও সংকট বাড়ছে। তাই শরণার্থী সংকট নিরসনের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। যতদিন এ সংকট নিরসন না হয়, ততদিন শরণার্থীদের ভালভাবে দেখভাল করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দায়িত্ব প্রধানত জাতিসংঘের। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। দ্বিতীয়ত শরণার্থী সংকট কেন সৃষ্টি হচ্ছে সে বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। নতুবা এ সংকট চলতেই থাকবে। একদিকে নিরসন হলেও অন্যদিকে সৃষ্টি হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন