পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি পণ্য। বলা চলে, পেঁয়াজ ছাড়া আমাদের রান্নাবান্না অচল! রান্নাবান্নার প্রায় প্রতিটা পদেই পেঁয়াজ ব্যবহার করতে হয়। স¤প্রতি অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যটির দাম বিভিন্ন অজুহাতে বেড়েই চলেছে। পেঁয়াজের বাজারে এখন চলছে নৈরাজ্য। মাঝখান দিয়ে বেশ কিছুদিন পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকার পর এখন আবার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। গত সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ কোনো রকম পূর্বঘোষণা ছাড়াই প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে হুট করেই পেঁয়াজের বাজারে আগুন ধরে যায়। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার আগেই সারাদেশে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। পেঁয়াজ নিয়ে শুরু হয়ে যায় হইচই। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকারও ওপর। অথচ, কয়েকদিন আগেও ৩০-৪০ টাকা ছিল।
গত বছরের (২০১৯) সেপ্টেম্বরেও পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের আগুন ধরেছিল। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও ভারত হুট করেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। সে সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৭০ টাকায়। আর দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা করেও বিক্রি হয়েছে। পেঁয়াজ নিয়ে মানুষের হাহাকার, উন্মাদনা ছিল চরমে। বর্তমানে আবার নতুন করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। আবার শুরু হয়েছে পেঁয়াজের বাজারে হাহাকার। করোনা দুর্যোগকালীন এ সময়টাতে পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে শুধু গরিব বা নি¤œবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরও নাভিশ্বাস চরমে উঠবে। মহামারির এ সময়টাতে যেখানে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি মোটাদাগে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে হতদরিদ্র মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। কাজেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারত নির্ভরশীলতা কাটিয়ে পেঁয়াজের বিকল্প আমদানিকারক দেশ খুঁজতে হবে।
বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ছাড়াও আরও তিনটি বিষয় কাজ করছে। সেগুলো হলো, বেপরোয়া সিন্ডিকেটের প্রভাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অপরিকল্পিত ঢিলেঢালা অভিযান, ভবিষ্যতে আরো দাম বাড়ার আশঙ্কায় ভোক্তা জনসাধারণের অস্বাভাবিক মজুদ।
দেশের শীর্ষ এক জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৪ থেকে ১৫ টাকায় ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আর সেই পেঁয়াজ কয়েক হাত বদল হয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দামে, ৬০/৭০ টাকায়। গত মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৬৬ টন পেঁয়াজ। এর বেশিরভাগই এসেছে ভারত থেকে। ১৫ টাকা ব্যয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ কেন খুচরা বাজারে ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে বরাবরের মতো মুনাফালোভী ব্যবসায়ী তথা সিন্ডিকেটের কারসাজির তথ্যই উঠে এসেছে। পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ থাকলেও তাঁরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আবারও দাম বাড়াচ্ছেন।
এ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটা সেক্টরেই সিন্ডিকেটের প্রভাব লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, আমাদের নিত্যদিনকার চোখে পড়ার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ সিন্ডিকেট চক্র অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং এরা রীতিমতো ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছেমতো বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। যে যে সেক্টরে যেভাবে পারছে, সে সেভাবে লুটেপুটে খাচ্ছে। আর মাঝখান দিয়ে ভোগান্তি আর নানা অসুবিধার মধ্যে জর্জরিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
দেশের সার্বিক বাজার পরিস্থিতি ভোক্তাবান্ধব করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের অসৎ, লোভী ও প্রতারণামূলক মানসিকতার পরিবর্তন। তাছাড়া, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বেপরোয়া সিন্ডিকেট। যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্যই সিন্ডিকেট হুমকি স্বরূপ। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অর্থনীতি তার মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। আর এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন ও দায়িত্বশীল মহলকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।