Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীকে আধুনিক ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

অবৈধ দখল-দূষণে রাজধানী বিপর্যস্ত। যুগের পর যুগ ধরে এ পরিস্থিতি চলছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে বসবাস অযোগ্য, অসভ্য নগরী, শীর্ষ বায়ু ও শব্দদূষণের নগরী হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। এসব বদনাম ঘোচাতে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউকেই তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বরং এসব অপবাদ বজায় রাখার মানসিকতা যেন সব মহলই ধরে রেখেছে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা যায়। রাজধানীকে তিলোত্তমা নগরী, পুরনো ঢাকাকে উন্নত কিংবা তেজগাঁও শিল্প এলাকাকে ম্যানহাটনে পরিণত করার কথা আমরা শুনেছি। রাজধানীর অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল, জলাশয় উদ্ধার, সংস্কার, বুড়িগঙ্গাসহ চারপাশের নদ-নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং নাব্য ফিরিয়ে আনার অনেক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। মাঝে মাঝে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নদী তীরবর্তী অবৈধ দখল উচ্ছেদের উদ্যোগ ছাড়া অন্যান্য উদ্যোগ বাস্তবে দেখা যায় না। পুরনো ঢাকার সমস্যার অন্ত নেই। সরু ও ঘিঞ্জি সড়ক এবং এর মধ্যেই অবৈধ দখল এ এলাকার বসবাস এবং যাতায়াত ব্যবস্থাকে স্থবির করে দিয়েছে। পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিনের কারখানাসহ কেমিক্যালের অবৈধ গোডাউন পুরনো ঢাকাকে বিপজ্জনক করে রেখেছে বছরের পর বছর। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে পুরনো ঢাকার দখল ও দূষণের যে চিত্র বিধৃত হয়েছে, তা এক কথায় ভয়াবহ। মূল সড়কসহ ফুটপাতের অবৈধ দখলের কারণে তা এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে। পুরনো ঢাকার মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়েই তারা দিনাতিপাত করছে।

মোগল আমলে বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত ঢাকাকে যখন বাংলার রাজধানী করা হয়, তখন সে সময়ের চিত্রের কথা শুনলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। এসব চিত্র নিয়ে অনেক বই ও নিবন্ধ লেখা হয়েছে। বলা হয়, ঢাকা হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র রাজধানী যার চার পাশে নদী এবং অভ্যন্তরে অসংখ্য খাল ও জলাশয় রয়েছে। এমন নগরী বিশ্বে আর একটিও নেই। দুর্ভাগ্যের বিষয়, যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার এবং অপরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণের কারণে সেটিই এখন বিশ্বের অবাসযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। এ শহরে অনিয়মের কী নেই! খাল, জলাশয় অবৈধ দখলের মাধ্যমে স্থাপনা নির্মাণ, ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজপথ দখল, বায়ূ দূষণ, শব্দ দূষণ, বর্জ্য ও কেমিক্যালের দূষণসহ হেন কিছু নেই যা এখানে হচ্ছে না। একটা সময় বুড়িগঙ্গার তীরে পুরনো ঢাকাই ছিল রাজধানী। একে কেন্দ্র করেই রাজধানী গড়ে উঠে। পরবর্তীতে তা সম্প্রসারিত হয়ে আজকের ঢাকায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দিনের অবহেলা আর অযত্নে পুরনো ঢাকা হয়ে পড়ে ঘিঞ্জি, অপরিসর ও অপরিচ্ছন্ন। এখানে যথাযথ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছু নেই। এলাকাটি পরিণত হয়েছে ছোট ছোট কলকারখানা আর বিপজ্জনক কেমিক্যালের আস্তানায়। মাঝে মাঝে কেমিক্যালের গোডাউনে আগুন লেগে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপরও এ এলাকার উন্নয়নে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেই। অথচ এই পুরনো ঢাকারই আদিবাসী বেশ কয়েকজন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। পুরনো ঢাকাকে উন্নত করার কথা তাদের প্রতিশ্রুতিতে বরাবরই ছিল। দুঃখের বিষয়, তারা সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি। বিগত মেয়র সাঈদ খোকন দুই মেয়াদে থেকেও পুরনো ঢাকার চিত্র বদলাতে পারেননি। এমনকি ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ দখলমুক্ত করার একাধিক উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। সার্বিকভাবে অপরিসীম ব্যর্থতা নিয়ে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। দক্ষিণের নতুন মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস পুরনো ঢাকাকে সংস্কার এবং বুড়িগঙ্গাকে সচল ও এর তীরবর্তী এলাকাকে আধুনিক করার কথা বলেছেন। দেখার বিষয় হচ্ছে, এ কাজ তিনি কতটা সফলভাবে করতে পারেন। তবে ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন, যা আশা জাগানিয়া। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বুড়িগঙ্গাকে সচল করতে এর আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারের প্রকল্প। পুরনো ঢাকার মুসলিমবাগ থেকে শুরু হওয়া রায়ের বাজার বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশের খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত সংযুক্ত আদি চ্যানেলটি উদ্ধারের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে (এমআইএসটি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এমআইএসটি ডিএসসিসি’র কাছে একটি খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে। প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উক্ত চ্যানেলের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন সবুজ উন্মুক্ত স্থান, স্বচ্ছ পানিধারা, বিনোদন স্পট সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি রাজধানীর একটি বড় এলাকার পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে। অবশ্য আমরা এর আগে বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী এলাকার অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর এমন অনিন্দ্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতির কথা শুনেছি। তবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যায়নি। শুধু পুরনো ঢাকাই নয়, পুরো রাজধানীই যুগের পর যুগ ধরে যানজট, পানিবদ্ধতা, অবৈধ দখলের মধ্যে থেকে স্থবির হয়ে রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি বিষফোঁড়া হয়ে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য নতুন নয়। এসব সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, একটি রাজধানীর যে পরিমাণ (আয়তনের ২৫ শতাংশ) সড়ক থাকা প্রয়োজন ঢাকায় রয়েছে তার মাত্র ৭ শতাংশ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় এবং খাল ও জলাশয় অবৈধ দখলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নেমে যেতে পারে না। যে শহরে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন গৃহস্থালী বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য উৎপাদিত হয় এবং তা যথাযথভাবে অপসারণ হয় না, সে শহর দূষিত নগরী হয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাহলে, রাজধানীর সেবা করার জন্য যে এতগুলো সংস্থা রয়েছে, এগুলো কি কাজ করছে?

নগরবিদরা মনে করনে, বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী পুরনো ঢাকাকে আধুনিকভাবে সংস্কার করলে তা অসাধারণ সৌন্দর্যের এলাকায় পরিণত হতে পারে। এ এলাকায় রয়েছে, মোগল আমলসহ ঐতিহাসিক অসংখ্য স্থাপত্যর্কীতি। বুড়িগঙ্গাকে সংস্কার করে এর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনলে ইউরোপ-আমেরিকার যে কোনো নদী তীরবর্তী শহরের চেয়েও তা অনিন্দ্য সুন্দর নগরীতে পরিণত হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন মাস্টারপ্ল্যান এবং তার যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে আমরা অনেক পরিকল্পনার কথা শুনেছি। আর শুনতেও চাই না। আমাদের কথা, রাজধানীকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা কেবল মুখে বললে হবে না, তার দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। এজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। শুধু প্রতিষ্ঠানগত সিদ্ধান্তের ওপর এখন আর ভরসা করা যায় না। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প নেয়া হয়, তাহলে রাজধানীর উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন হবে। উন্নয়নশীল একটি দেশের রাজধানীকে এখন আর অবাসযোগ্য ও পরিত্যাগযোগ্য শহর হিসেবে ফেলে রাখা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।



 

Show all comments
  • Jack Ali ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:০৯ পিএম says : 0
    They just talk and earned billions of taka from our hard earned money--but they have any idea how to built a city.. Look at vietnam-- America destroyed them but now their country looks like Europe and our country is like a garbage factory. It is absolutely distressing causing Depression.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আধুনিক-বাসযোগ্য
আরও পড়ুন