Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরভূমেই প্রবাসীদের আস্থা দেশে বিনিয়োগে অনাগ্রহ

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

অপ্রত্যাশিত হলেও দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে চুপিসারে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটাচ্ছেন সিলেটের প্রবাসীরা। এর পেছনে রয়েছে বহুবিধ কারণ। যে সুখ ও স্বপ্নে বিনিয়োগ করে দেশে সম্পদ গড়েছিলেন সেই সুখস্বপ্ন ভঙ্গে এখন তারা দিশেহারা। হয়রানিসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণেই নিজদের গুটিয়ে নিচ্ছেন তারা। সেই সাথে নতুন বিনিয়োগে নেই কোন আগ্রহ। একান্ত কাজ ছাড়া দেশের মাটিতে পা দিতেও অনাগ্রহ তাদের মন-মগজে। অথচ এসব প্রবাসীর ঘাম ঝরানো অর্থে সিলেটের অহঙ্কার-অলঙ্কারের রূপসজ্জা সর্বত্র।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, আবাসন খাত, রাজনীতিসহ সবদিকেই প্রবাসীদের বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। এখন সেই অবস্থা তলানীতে নেমে যাচ্ছে। আস্থা-নির্ভরতা সঙ্কটে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অর্থনীতির অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার সিলেটের প্রবাসীরা। তারপরও তাদের উদ্যোগী বা উৎসাহী করতে সাধ্যমতো কাজ করছে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ আরো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আমীরুল ইসলাম বলেন, দেশে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছি আমি। এ ঘটনায় ৫ সন্তান নিয়ে সুখের সংসারও ভেঙে গেছে আমার। দেশে এসে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু প্রতিকার বা নিরাপত্তা পাইনি। প্রায় ১০ কোটি টাকার বিনিযোগ এখন ঝুঁকিতে। আমার তিক্ত এ অভিজ্ঞতার ম্যাসেজ এখন গোপন নেই। মূল স্রোতের প্রবাসীরা যেখানে অসহায় সেখানে আমাদের উত্তরাধিকারীরা কোন শক্তি বা মনোবলে চৌদ্দপুরুষের ভিটেমাটিতে ফিরবে। এছাড়া ওই প্রবাসী তার সহায় সম্পত্তি নিয়ে নানামুখী বিড়ম্বনার বর্ণনা দিয়ে বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এদিকে, সিলেট দেশের একটি অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র কানাডাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন সিলেটের। তবে যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের সংখ্যাই বেশি। মা-মাটি-দেশ ছেড়ে এসব প্রবাসী নিজের শরীরের রক্ত পানি করে আয়-রোজগার করছেন। দেশে থাকা পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের জন্য তারা যে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাতে সচল থাকছে অর্থনীতির চাকা। তাছাড়া তারা প্রবাসে অর্জিত টাকায় দেশে জায়গা-জমি, বিলাসবহুল বহুতল ভবন, স্কুল-কলেজ হাসপাতালেও বিনিয়োগ করেছেন বা করছেন। বিনিয়োগ করেছেন আবাসন খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তবে প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধির বদলে দিনদিন কমছে তো বটে। এমনকি অনেক প্রবাসী এখন তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দেশের সম্পদ বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশে। বিনিয়োগ করছেন সেখানে। আর এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে। দেশের ব্যবসা ঘরবাড়ি শেয়ার ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করা অর্থ তারা সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। বিনিয়োগ করছেন রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসায়।
কয়েকজন প্রবাসী, প্রবাসীদের বিভিন্ন সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়া, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও দেশের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ না থাকার কারণেই প্রবাসীরা তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
সিলেট ওভারসিজ সেন্টার সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, ব্যবসা থেকে প্রত্যাশিত লাভ না পাওয়া, জমি-জমা নিয়ে স্বজনদের কাছে প্রতারিত হওয়া ও দেশের প্রতি তৃতীয় প্রজন্মের আগ্রহ না থাকার কারণেই সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রবাসীরা
যুক্তরাজ্য প্রবাসী রাজা চৌধুরী বলেন, সম্মিলিত উদ্যোগে কয়েকটি ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যথাযত কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত সহায়তা পাইনি। সবকিছু এত জটিল মনে হলো যে, একসময় আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। বরং ঐ টাকা দিয়ে আমরা লন্ডনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসার আরো স¤প্রসারণ করেছি।
আইনজীবি ও ফ্যাশন ডিজাইনার ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, দেশে শুধু প্রতারণা, ভালো সার্ভিস নেই, সম্মানবোধ নেই। কাউকে নিয়ে আসলে কেবল চাহিদাপত্র কানে তুলে দেয়। সেকারণে আমরাতো মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু আমাদের বর্তমান প্রজন্ম বিব্রত হয়। সবমিলিয়ে ‘ফেডআপ’ অবস্থা! তাই নতুন প্রজন্ম দেশে বিনিয়োগ দূরে থাক আসতেই চায় না তারা। প্রবাসীদের অনাগ্রহের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপরও।
অপরদিকে, সিলেটে প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। দেশে সেমিনার সিম্পোজিয়ামের পাশাপাশি বিদেশেও তারা ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এতে কাক্সিক্ষত ফল মিলছে না। সিলেটে সিরামিক্স, পর্যটন, আইটি সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লাল ফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস করে বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে সিলেটে প্রবাসীদের বিনিয়োগ দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করছেন সচেতন মানুষ।
সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রবাসীদের পাল্স বুঝতে বিলম্ব হচ্ছে আমাদের, কিন্তু সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কোন পদক্ষেপেই ফিরিয়ে আনা যাবে না আমাদের অনন্য সম্পদ এ প্রবাসীদের। সে কারণে কঠিন ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়তো হতে হবে আমাদের তথা সিলেটিদের।



 

Show all comments
  • Jack Ali ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪৫ এএম says : 0
    Only solution is to rule by the of Law of Allah..
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ