পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চিকিৎসা পেশা সেবামূলক হলেও একশ্রেণীর চিকিৎসক একে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পরিণত করেছেন। সেবার চেয়ে ব্যবসাকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন। এসংক্রান্ত দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, ঢাকার নাম করা সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও দেশের চিকিৎসা সেবা হয়ে পড়েছে চেম্বার নির্ভর। সরকারি হাসপাতালে যেসব ডাক্তার চাকরি করেন তাদের প্রায় ৯৮ ভাগই চেম্বার খুলে প্রাইভেট প্রাকটিস করেন এবং রোগীদের পকেট কাটেন। শুধু অর্থের লোভে তারা হাসপাতাল থেকে কৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে চেম্বারে রোগীদের চিকিৎসা দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গরিব রোগীদের বাধ্য হয়েই জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ ধারণা এখন প্রতিষ্ঠিত, প্রাইভেট প্রাকটিসের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের জন্যই ঢাকায় কর্মরত অনেকেই মফস্বলে যেতে চান না। ঢাকায় থাকতে তারা মোটা অংকের টাকা খরচ করেন। ক্লিনিকে কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখেন। রোগী প্রতি ফি নেন ৫শ’ থেকে একহাজার টাকা। শুধু রোগী দেখার ফি নয়, নির্ধারিত ল্যাবে বিভিন্ন টেষ্টের কমিশন, নির্ধারিত কোম্পানীর ওষুধ প্রেসক্রাইব করে কমিশন এবং নানা ধরনের গিফট পান। বিদ্যমান বাস্তবতা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, আজকাল চিকিৎসায় ওষুধের খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। ওষুধ কোম্পানী ও ডাক্তারদের মধ্যে কিছু দুষ্টচক্র তৈরি হয়ে গেছে যারা অনৈতিক অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েছে। সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, চাকরির পরে চিকিৎসকদের চেম্বার করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে তাদের কোন বাধা নেই। তবে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় রোগীকে চেম্বারে দেখানোর জন্য প্রলুব্ধ করার কোন সুযোগ নেই।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে অর্থলোলুপদের হাতে বন্দি তা নতুন নয়। তবে দিন দিন এ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা ততই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন এক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে যদি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে হয় তাহলে তাদের ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালী মহলের আনুকূল্য পেতে হবে। দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা অনেকের সম্পর্কেই নানা অভিযোগ প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে। দেশে বিদ্যমান চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও কথা বলেছেন। দেশের বিভিন্নজনও মাঝে মধ্যে এসব নিয়ে কথা বলেন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার পিছনে প্রচলিত ব্যবস্থাপনাও দায়ী। সাধারণ মানুষ চাইলেই যথাযথ সরকারি চিকিৎসা পাবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। যেসব হাসপাতালে কিছুটা সুযোগ রয়েছে সেখানে শয্যা সংখ্যার স্বল্পতা রয়েছে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনা কার্যকর থাকার কারণেও সাধারণ মানুষের পক্ষে সুবিধাপ্রাপ্তি সহজ নয়। রোগ শোকের যেহেতু কোন বাধা-ধরা নিয়ম নেই সেকারণেই যখন কেউ আক্রান্ত হয় তখন তাকে ছুটে যেতে হয় যেখানে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রোগীর দুর্বল মুহূর্তের এ সুযোগই নেন একশ্রেণীর চিকিৎসক। বলাবাহুল্য, চিকিৎসাকে কেবলমাত্র অর্থ উপার্যনের মাধ্যম মনে করার কোন কারণ নেই। সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে যেসব ছাত্র বের হয় তারা জনগণের অর্থেই লেখাপড়া করে। অথচ তাদেরই একটি শ্রেণী সেবার নামে ব্যবসায়িক মনোভাব ধারণ করে। দেশের যেসব চিকিৎসকদের কিছুটা নামখ্যাতি রয়েছে তাদের দেখানো তো অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। খোদ রাজধানীসহ সারাদেশে যেসব বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোম গড়ে উঠেছে সেগুলো কার্যত এক ধরনের কশাইখানায় পরিণত হয়েছে। লাশ আটকে রেখে টাকা নেয়ার মত অমানবিক ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। সরকারিভাবে স্বীকার করা হোক বা না হোক, এটাই সত্যি যে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের প্রলুব্ধ বা বাধ্য করা হয় বেসরকারি চিকিৎসাসেবা নিতে। এজন্য হাসপাতালগুলোতে যে এক ধরনের চক্র রয়েছে তা বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকার খবরেও প্রকাশিত হয়েছে।
সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবেই দেশের সাধারণ মানুষ এক শ্রেণীর অর্থলোলুপ চিকিৎসকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। চিকিৎসাকে কোন বিবেচনাতেই ব্যবসা ভাবা সঙ্গত বা সঠিক নয়। অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবন যাপনের জন্যই মানুষ চিকিৎসকের দ্বারস্ত হয়। সেই চিকিৎসা নিতে গিয়েই যদি সর্বস্বান্ত হতে হয় তাহলে এ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা কি? যাদের অর্থবিত্ত রয়েছে তারা যেমন দেশের নামিদামী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন তেমনি বিদেশেও যেতে পারেন। যাদের সে সামর্থ নেই তারা যাতে দেশে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন তা অবশ্যই নিশ্চিত করা দরকার। অবশ্যই এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মানবিক হওয়া জরুরি। উন্নত মেধা-মননের অধিকারিরাই সাধারণত ডাক্তারি পড়ে। অথচ শিক্ষা শেষে তারাই যদি মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলে তাহলে এ পেশার মর্যাদা ক্ষুণœ হতে বাধ্য। শিক্ষার মধ্যে যে মানবিক গুণ ও দর্শন রয়েছে তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে হবে দেশের চিকিৎকদের। এ ব্যাপারে তারা সবাই আন্তরিক হবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।