পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্যার পানি চলে গেলেও নদী পাড়ের মানুষের দুঃখ যাচ্ছে না। এখন শুরু হয়েছে ভাঙন। সিরাজগঞ্জে যমুনার বিভিন্ন পয়েন্ট, কুড়িগ্রামের ধরলা, টাঙ্গাইলে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী এবং মাগুরায় মধুমতি নদের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীর ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম, বাড়িঘর, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট। গ্রামের পর গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ায় পরিবর্তন হচ্ছে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন মানচিত্রের।
ইনকিলাবের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানান, নদী ভাঙনে মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে চরম দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। কোথাও পানি বৃদ্ধির কারণে নদী ভাঙছে আবার কোথাও পানির স্তর নিচে নামার কারণে ভাঙছে। ভাঙন কবলিত নদী পাড়ের মানুষের প্রশ্ন যমুনা, ধরলা, ধলেশ্বরী, মধুমতির ভাঙন কি কখনোই থামবে না?
যমুনার ভাঙন থামছে না : সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী ভাঙছে প্রায় ৭৭ বছর ধরে। প্রবল ভাঙনের মুখে সিরাজগঞ্জ জেলার দুইটি উপজেলা মানচিত্র থেকে হারিয়ে গিয়ে অন্য জেলার সাথে যুক্ত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদরের কাওয়াকোলা ইউনিয়নের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট, গ্রোয়েন ৩-৪ দফায় ভাঙনের মুখে পড়েছে। চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের অনেক স্থানে ধস নেমেছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সিমলায় যমুনা স্পার বাঁধের অধিকাংশ ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চলতি বছর যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আবাদি ফসল ডুবে গেছে সেই সাথে নদী পাড়ের ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। কাজের অনিয়মে ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য বাঁধ ভেঙে চলনবিল অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে বন্যার পর নদী ভাঙনের আতঙ্কে যমুনা পাড়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
টানা বর্ষণে রাক্ষুসী যমুনায় তীব্র গতিতে রেকর্ড পরিমাণ পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিমলা যমুনার স্পার বাঁধের অধিকাংশে ধস নেমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অপরদিকে ক্রমেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া চৌহালীতে যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, হাট-বাজার বিভিন্ন স্থাপনা। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদীবিধৌত সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর, বেলকুচি এ ৫টি উপজেলাসহ চলনবিল অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সবজি, তিল, পাকা ধানসহ শত শত বিঘার বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে।
জেলার নদী তীরবর্তী এলাকা চৌহালী উপজেলায় বর্ষা মৌসুম আসার পূর্বেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়। তীব্র ভাঙনের ফলে যমুনা গর্ভে বিলীন হচ্ছে দক্ষিণ-চৌহালীর ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খাসপুকুরিয়া ও বাগুটিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৫টি গ্রাম। পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা ফুলে ফেঁপে ওঠায় চৌহালী উপজেলা সদরের জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে খাসপুকুরিয়া হয়ে রাঘুটিকা ইউনিয়নের চরবিনুনাই-ভুতের মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে খাসপুকুরিয়া, মিটুয়ানী, রেহাই পুকুরিয়া ও চর বিলাই এলাকায় প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, ৭টি তাঁত কারখানা, ৩টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং দেড় কিলোমিটার পাকা সড়ক নদী গ্রাস করেছে। ভাঙন রোধে এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার তীর সংরক্ষণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। প্রান্তিক কৃষকরা মহাবিপাকে পড়েছে। ব্যাপক ভাঙনে উপজেলার কৈজুরী, খুকনি ও জালালপুর ইউনিয়নের দশটি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে এসব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের আতঙ্কের চেয়ে বাড়িঘর সহায়-সম্বল হারানোর আতঙ্কেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গত বছরের ভাঙনে এসব গ্রামের কমপক্ষে চার শতাধিক বাড়িঘর, ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১টি চিকিৎসাকেন্দ্র, ২টি মসজিদ, ২টি ঈদগাহ মাঠ, ৫০টি তাঁত কারখানা, ৪০০ বিঘা আবাদি জমি, ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ১টি মাদরাসা, ১টি কবরস্থান, ১টি সশ্মান ঘাট, ১টি মন্দির ও কয়েক শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামে ধরলার ভাঙন : কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র রুপ নিয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে বিলীনের পথে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার মেখলির চর খন্দকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল স্কুলটির একাংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। স্কুলের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। মেখলির চর খন্দকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর আলী জানান, ১৯৯০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪ জন শিক্ষক ও প্রায় ১শ’ শিক্ষার্থী নিয়ে চর এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে অবদান রাখছিলো স্কুলটি। ৪ রুম বিশিষ্ট স্কুলের ভবনটি নির্মিত হয় ২০০০ সালে। গত এক মাস ধরে মেকলি গ্রামে ধরলার ভাঙন চলছে। এতে এ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪৫টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
টাঙ্গাইলে যমুনা-ধলেশ্বরীর গর্ভে বাড়িঘর : টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে দুই সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে বিস্তৃর্ণ ফসলী জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিত এসব পরিবারগুলোর মধ্যে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা অন্যত্র ঘর-বাড়ি তুলেছে। আর বেশিরভাগই এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি তেমন কোন সাহায্য পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের। প্রতি বছরই যমুনা ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পরে। ভাঙন কবলিত এসব এলাকার মানুষ স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গাইড বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, হুগড়া, মাহমুদ নগর ও কাতুলী ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ৪ শতাধিক বসত ভিটা নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় সর্বশান্ত হয়েছে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষজন।
ভ‚ঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী এই তিনটি ইউনিয়নের নদীপাড়ের সহস্রাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নাগরপুর উপজেলার ছলিমাবাদ, মোকনা, দপ্তিয়র ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তিনশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাসাইলের ঝিনাই নদীর ভাঙনে শতাধিক ঘর-বাড়ি বিলীন হয়েছে। কালিহাতী উপজেলার যমুনা সেতুর পূর্বপাড়ে গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের গড়িলাবাড়ী ও বেলটিয়া গ্রামের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।
মাগুরায় মানচিত্র বদল : মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান জানান, ধলেশ্বরীর ভাঙনে মহম্মদপুর উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক গ্রাম। মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙনে কয়েকটি গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। নদী ভাঙনের তীব্রতায় উপজেলার মানচিত্র থেকে কয়েকটি গ্রামের শতশত একর জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী মানুষের বুকফাটা হাহাকার আর আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে। উপজেলার চর পাতুড়িয়া, কাশিপুর, ধুলঝুড়ি, গোপাল নগর হেরকৃষ্ণপুর গ্রামে ভাঙনের তীব্রতা বেশি।
চর পাতুড়িয়া গ্রামের সহায় সম্বল হারানো নেপুর শেখ বলেন, নদী তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। কোথায় যাব, থাকব কোথায় তা জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত সামাদ শেখ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নদী ভাঙননসহ আগত মানুষের দিকে। অপর ক্ষতিগ্রস্ত মুজিবর মোল্যা বলেন, গাঙ্গের কুলে জন্ম, গাঙ্গে একবার নয় কয়েকবার বাড়িঘর বিলীন করেছে। এখন আর পারছি না নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করতে। কাশীপুর গ্রামের কুতুব উদ্দীন বলেন, নদীর মধ্যে বাড়ির অর্ধেক জমি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু যেকোন সময় ভেঙে নদীতে বিলীন হবে। তখন কি হবে ভেবে পাচ্ছি না।
অভিযোগ ওঠে, নদীটির বিভিন্ন অংশ ভাঙতে ভাঙতে এই অবস্থায় পৌঁছালেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনও উদ্যোগ নেয়নি। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামের অসংখ্য মানুষকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই নদী ভাঙনের কথা শুনেছে কিন্তু এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি। বর্ষা এলেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে কিন্তু বাস্তবে কোনও কাজের প্রতিফলন ঘটেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।