পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা অপচয় ও আত্মসাতের প্রমাণ মুছতে নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বৃহৎ এই দুর্নীতির দায় থেকে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র (এসএস ভদ্র)সহ সংশ্লিষ্টদের রক্ষার্থেই গঠন করা হয়েছে নতুন কমিটি। উদ্দেশ্য- একটি ফরফায়েশী প্রতিবেদন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতবছর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ডাক ঘরে ৭০ কোটি টাকার মচ্ছব ও কাজে আসেনি ২০ হাজার পওস মেশিন’ শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাবে। গত ২৪ নভেম্বর ‘সার্ভার না কিনেই শত কোটি টাকা খরচ’ শীর্ষক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে এসএস ভদ্র’র শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। দুদক এসএস ভদ্র’র বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পাঠিয়ে দেয় (স্মারক নং-দুদক/প্রশা:ও লজি:/১৯/২০১৬ (অংশ-৬) ৪৯১৩৪৯(৫), তারিখ:১৯/১২/১৯) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে। এ প্রেক্ষিতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করলেও সেটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। তবে আলোচিত এ দুর্নীতির বিষয়ে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক এসএস ভদ্রকে গত ২ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় পুনরায় তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে। এ কমিটি যাতে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ‘চালু’ পওস মেশিন ও ফিঙ্গার ভেইন মেশিন খুঁজে পায় এ লক্ষ্যে ডাক বিভাগের গুদামে স্ত‚প হয়ে পড়ে থাকা শত শত পওস মেশিন রাতের তড়িঘরি করে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন ডাক ঘরে। যদিও এর আগে একই মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটি প্রকল্পের নামে শত শত টাকা অপচয়ের চিত্র তুলে ধরে। অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মুহিবুর রহমান, যুগ্ম সচিব খোন্দকার আবদুল হাই এবং উপ-সচিব (প্রশাসন) মো. মোখলেছুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হয় একটি কমিটি। আরেকটি তদন্ত কমিটি হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম-প্রধান মো. মুসলেহ উদ্দিনকে প্রধান করে। উপ-সচিব মো.আমিনুল হক এবং উপ-সচিব সাজ্জাদ হোসেন এ কমিটির অপর দুই সদস্য।
মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর (ডাক ঘর) অ্যাসেট রেজিস্ট্রার পরীক্ষান্তে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) টঙ্গি, গাজীপুর কর্তৃক সরবরাহকৃত স্মারক অনুযায়ী ০২/০১/২০২০ মূলে এইচপিইসি সার্ভার এমএল-৩০সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অফিসে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তারা আরও জানান যে, সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতি কিভাবে চালাতে হয়, তার কোনো প্রশিক্ষণ তারা পাননি। খুলনা বিভাগীয় অফিসে ৮৫০টি পওস মেশিন ও ৬০০টি ফিঙ্গার ভেইন মেশিন প্যাকেটবন্দি অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পোস্ট ই সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পটির প্রথম প্রকল্প পরিচালক ছিলেন মো. আলাউদ্দিন আহমেদ (২০১২-২০১৪)। দ্বিতীয় প্রকল্প পরিচালক ছিলেন (২০১৪-২০১৭) সুধাংশু শেখর ভদ্র। তার (ভদ্র) সময়েই প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহ এবং নির্দেশনায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতাভোগীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ প্রাপ্তির সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ১৭ হাজার পওস মেশিন ও ১০ হাজার ফিঙ্গার ভেইন মেশিন প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু টেশিস ও আইটিসিএলর সরবরাহ চালানে পওস ও ফিঙ্গার ভেইন মেশিন প্রেরণের সময় উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ হতে ২০১৯ সাল। অর্থাৎ কোনো কোনো মালামাল প্রকল্প সমাপ্তির প্রায় ২ বছর পর সরবরাহ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্চলিক সার্কেল অফিসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, তারা যেসব পওস মেশিন গ্রহণ করেছেন তার প্রায় ৫০% বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় সমপরিমাণ বিভিন্ন বিভাগীয় অফিসে পড়ে আছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে পওস মেশিন ব্যবহারের নির্দেশনা না পাওয়ায় এবং মেশিনগুলোর কনফিগারেশন না করায় যেগুলো বিতরণ করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘ইনকাম সাপোর্ট ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় পওস মেশিনের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের ৩টি এবং রংপুর বিভাগের ৪টিসহ মোট ৭টি জেলার উপজেলার ৪৩টি উপজেলার ৪৪৪টি ইউনিয়নে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠিভুক্ত গর্ভবতী নারী এবং তাদের প্রথম ১টি সন্তানকে (৫ বছর পর্যন্ত) ভাতা প্রদান করা হয়েছে। যার পরিমাণ মাত্র ১০১.৮১ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়,৪টি আঞ্চলিক সার্কেল অফিসের ও ডাক অধিদফতরের মহাপরিচালক কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪,১২৯টি পওস মেশিন মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২৮৭১টি মহাপরিচালক ডাক অধিদফতরের দপ্তরে রয়েছে। ৪টি আঞ্চলিক পিএমজি কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনে পওস ও ফিঙ্গার ভেইন মেশিন অব্যবহৃত/অবিতরণকৃত অবস্থার উল্লেখ রয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শনে পিএমজিদের প্রতিবেদনের সত্যতা পাওয়া গেছে।
প্রকল্পের ১ম সংশোধিত অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৪০.৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৩৮০.৬৫ কোটি টাকা। ১৬০.১৯ কোটি টাকা সাশ্রয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু পিসিআর এ সাশ্রয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। ৪.২ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ১৭ হাজার পওস মেশিন এবং ১০ হাজার ফিঙ্গার ভেইন মেশিন কেনা হলেও মাত্র ৭০৪টি পওস মেশিন এবং ৬৪৩টি ফিঙ্গার ভেইন মেশিন ভাতা প্রদানের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রকল্পটি সম্পূর্ণরূপে বিভিন্ন ভাতা গ্রহণকারী জনগোষ্ঠিকে পওস মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান সেবা কার্যটি সম্পন্ন হয়নি। এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ‘সার্বিক মন্তব্যে’ বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় সংগৃহিত ১৭ হাজার পওস মেশিনের মধ্যে মাত্র ৭০৪টি মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ ৯৫.৮৬ % পওস মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফিঙ্গার ভেইন মেশিনের ১০ হাজারটির মধ্যে মাত্র ৬৪৩টি মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ ৯৩.৫৭% ফিঙ্গার ভেইন মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না। মেশিন দু’টি কি কাজে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নির্দেশনা ডাক অধিদফতর/প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে আঞ্চলিক অফিস/মাঠ অফিসকে না দেয়ায় ৫৪.৯৩ কোটি টাকার পওস ও ১৯.৬২ কোটি টাকার ফিঙ্গার ভেইন মেশিন কোনো কাজে আসেনি।
মো. মুসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত এসব যন্ত্র কোনোটিই ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মূলত: সংগৃহীত যন্ত্রাদি সংযোজনই করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেশিন ও যন্ত্রাংশ প্যাকেটজাত অবস্থায় রয়েছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে এ সকল মেশিন কি কাজে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নির্দেশন ডাক অধিদপ্তর/প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হতে আঞ্চলিক অফিস/মাঠ অফিসকে না দেয়ায় এসকল যন্ত্রাদি কোনো কাজে আসেনি। প্রকল্পের প্রশিক্ষণ খাতে ৬৯৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ধরা থাকলেও এসকল যন্ত্র ব্যবহারের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে-এরূপ কোনো প্রমাণ সরেজমিন পরিদর্শনকালে পাওয়া যায়নি। নতুন তদন্ত কমিটির কথা স্বীকার করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার গতকাল সোমবার টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের পরের নয়। তাই এ সম্পর্কে আমার স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। একটি কমপ্লেন এসেছিল। বিষয়টি যখন আমার কাছে এসেছিল, আমি দু’টি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। কমিটি কিছুদিন আগে প্রতিবেদনও দিয়েছে। কিন্তু কমিটির কাছে যে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছিলাম, সেগুলো ক্লিয়ারলি আসেনি। আমি জানতে চেয়েছি- যন্ত্রগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কি? কোথায়, কি অবস্থায় আছে, তার ক্লিয়ার পিকচার না দেয়ার প্রেক্ষিতে আবারও তদন্ত করতে দিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।