পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর ফারুককে কুপিয়ে ও ভারি অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। তার সরকারি বাসভবনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ওয়াহিদা খানমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হামলায় তার মাথার বাম পাশের খুলি ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে তার মাথায় অস্ত্রপচার শুরু হয়। ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় দুই ঘন্টা ধরে এ জটিল অপারেশন করেন। অপারেশন শেষে এক সার্জন জানিয়েছেন, তারা ওয়াহিদা খানমের সুস্থ হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত নন। তাকে ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গতকাল ভোরে র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযানে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। এর হলো, ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুরের আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন এবং রানীগঞ্জের আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম। জাহাঙ্গীর ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক বলে উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম আকাশ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, কি কারণে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত ও ভয়ংকর হামলার নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। নিরাপত্তা বলয়ে থাকা একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের। তারাই যদি নিরাপদ না থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপদ, তা বলে বোঝানোর কিছু নেই। এ ধরনের হামলার ঘটনায় দেশের অন্যান্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে উপজেলার কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। একজন ডিসির ওপর যেমন পুরো জেলার দায়িত্ব থাকে, তেমনি একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপরও পুরো উপজেলার দায়িত্ব থাকে। জেলা-উপজেলার সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সামাজিক শান্তি সুরক্ষার দায়িত্বও তারা পালন করেন। তারা চেইন অফ কমান্ডের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক উন্নয়নকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যান। বলা যায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর বর্বরোচিত হামলার অর্থ হচ্ছে, উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করা। কারণ, সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়। তারাই সরকারের নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাদের ওপর যখন অনাকাক্সিক্ষত হামলা হয়, তখন তাদের মনোবলে চিঁড় ধরা এবং মনোবল দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক। সরকার যখন করোনাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন কাজ সচল করছে এবং পর্যায়ক্রমে তা গতি লাভ করবে, তখন এই সরকারি কর্মকর্তা এবং জোলা ও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেক্ষেত্রে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর হামলার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে সহজেই অনুমেয়। ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে প্রতীয়মান হলেও, একে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এতে অন্যান্য উপজেলা কর্মকর্তাদের কাজের গতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। হামলার নানা আশঙ্কা নিয়ে তাদের কাজ করতে হবে, যেখানে স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাবের অভাব দেখা দেবে। এ হামলা শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরই শঙ্কিত করবে না, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাবোধকেও ব্যাহত করবে। ইতোমধ্যে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এখন থেকেই যদি এর লাগাম টেনে ধরা না যায়, তবে তা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
হামলাকারীরা এ হামলার মধ্য দিয়ে চরম ঔদ্ধ্যত্যের পরিচয় দিয়েছে। এতে অন্যান্য অপরাধী উৎসাহী উঠতে পারে। আমরা দেখেছি, কোনো একটি অস্বাভাবিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে তার পুনরাবৃত্তি অন্যান্য স্থানেও ঘটে। ফলে এ ধরনের ভয়াবহ হামলার ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এজন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াহিদা খানমের হামলাকারীর পরিচয় যাই হোক না কেন, তারা যে ঘটনা ঘটিয়েছে, তাতে তাদের রেহাই পাওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ দেয়া যাবে না। ঘটনা যাতে অন্যদিকে মোড় না নেয়, এজন্য পুলিশের সতর্ক থাকতে হবে। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণ বা শৈথিল্য প্রদর্শন কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।