Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাল গোশতের বিকল্প

| প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মানুষের সবচেয় প্রিয় হলো তার জীবন। তাই সবার হৃদয় জুড়ে থাকে বেঁচে থাকার বাসনা। খাদ্য ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ বিশ্বচরাচরে খাদ্য ছাড়া বাঁচতে পারে এমন কোন জীব নেই। আমাদের দেশে যারা গরিব পেট পুরে খেতে পায় না কেবল তারাই নয় পুষ্টি জ্ঞানের অভাবে ধনীরাও অপুষ্টির শিকার। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য সব সময় নামিদামী মাছ, মাংস, ডিম প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই বরং সস্তা দামের শাক সবজি নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতা, রাতকানা, অন্ধত্ব, মুখ বা ঠোঁটের কোণে ঘা এসব রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। খাদ্য ও পুষ্টিবিদেরা আদিকাল থেকে সতর্ক করে আসছেন- লাল গোশত এড়িয়ে চলুন। গবেষকেরা বলছেন, এটা প্রমাণিত যে, অধিক লাল গোশত গ্রহণে মারাত্মক স্বাস্থ্য অবনতি ঘটতে পারে। প্রক্রিয়াজাত গোশত গ্রহণের বেলায় একই কথা প্রযোজ্য।

“জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজি” নামে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, মাত্রাতিরিক্ত লাল গোশত ও প্রক্রিয়াজাত গোশত গ্রহণে কলোরেক্টাল ক্যান্সার-এ মৃত্যুও হতে পারে। যদিও সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবুও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটা হয়তো এই গোসতের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন, মেটাল, কিটনাশক ও অন্যান্য নন অর্গানিক পদার্থ রয়েছে বলেই ক্ষতি হয়। কারণ, গরু-ছাগল ওইসব কিটনাশক যুক্ত ঘাস খায়। তাই যথাসম্ভব গরু ও ছাগলের গোশত না খাওয়াই ভালো। কারণ, ঘাসের সঙ্গে মিশ্রিত এ টক্সিন খেলে তা গরু-ছাগলের চর্বির সঙ্গে মিশে যায়। তাই গরু-ছাগলের গোশত খেলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এই টক্সিন স্নায়ুতন্ত্রে চলে যায়। ওই চর্বি লিভারকেও আক্রান্ত করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। কিডনি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, স্তন ও প্রস্টেটও আক্রান্ত করে। প্যাকেটজাত গোশতে সোডিয়াম নাইট্রেট নামক এক প্রকার উপাদান থাকে, যার সঙ্গে ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট। তাই সর্বপ্রকার প্যাকেটজাত লাল গোশত বর্জন করা উচিত। প্রক্রিয়াজাত গোশত মানে মূল গোশতের সঙ্গে নানা প্রকার রানায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত। কাজেই যখন গরুর গোশত দেখবেন প্যাকেটে, বুঝবেন এর সঙ্গে সোডিয়াম নাইট্রেট ও অন্যান্য মসলা বা উপকরণ আছে, যা পরিমিত নয়। সর্বপ্রকার টার্কি, হাঁস ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত গোশত দেখবেন, এগুলোর সঙ্গে নানা প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য আছে। কাজেই এসব গোশত খেলে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে হবে। মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। এসব প্রক্রিয়াজাত গোশত গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সার হতে পারে। আপনি যখন জানেন না যে ডিপফ্রিজে প্রক্রিয়াজাত গোশতে কী কী উপাদান দেয়া হয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ। আপনি প্রক্রিয়াজাত গোশত না খেয়ে জবাই করা গরু, ছাগল ও ভেড়ার গোশত খেতে পারেন। জীবিত হাঁস, মুরগি ও টার্কি জবাই করে খেতে পারেন। যাদের অধিক লাল গোশত খাওয়ার ইচ্ছা বা অভ্যাস আছে, তারা অন্তত প্রক্রিয়াজাত ডিপফ্রিজে সংরক্ষিত লাল গোশত খাবেন না। সবচেয়ে ভালো হয়, সপ্তাহে এক দিন এক বেলা দু-এক টুকরা লাল গোশত খাওয়া। সঙ্গে কাঁচা ফলমূল বা সবজির সালাদ খাওয়া উচিত।

লাল গোশতের বিকল্প মাছ ও মুরগি বা গ্রিল না করে গরম মসলাযুক্ত রান্না খাওয়া ভালো। হাঁস-মুরগির মাথা, চামড়া, কলিজা ও গিলা খাবেন না। এগুলো ক্ষতিকর। এসব গোশতের পরিমাণ তিন আউন্সের বেশি হওয়া উচিত নয়। হয়তো ভাবছেন, লাল গোশত ও হাঁস-মুরগি ছাড়া প্রোটিন পাবো কোথা থেকে? শিম, বাদাম ও সয়াবিনজাত খাদ্যে প্রচুর প্রোটিন আছে। ডিমে প্রচুর প্রোটিন আছে। তরুলতা-জাতীয় খাদ্যে কোনো স্যাটুরেটেড ফ্যাট নেই। যেসব প্রাণী ঘাস খায়-যেমন-গরু ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির গোশতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যা ক্ষতিকর নয়। সর্বপ্রকার গ্রিল করা এবং কাবাব খাবেন না। এগুলোর সঙ্গে ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট। খাসি বা গরুর মাংসে চর্বি থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি খেলে তা কোলেস্টেরল ও হৃদরোগসহ অনেক মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মনে রাখতে হবে, আপনাকে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে বেশি বেশি মাছ, শাকসবজি ও কাঁচা ফলমূল খেতে হবে। লাল গোশত যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যসম্মত। সপ্তাহে এক দিন দু-এক টুকরা খাওয়া যেতে পারে। গরু ও মহিষের পেছনের রান ও সামনের পায়ের গোশতে চর্বি কম থাকে। এটা খাওয়া যেতে পারে।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাল-গোশত

২৮ আগস্ট, ২০২০
আরও পড়ুন