২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
তৃষ্ণায় শান্তিলাভের জন্য তো বটেই, সার্বিক সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষের পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখার জন্য পানির বিকল্প নেই। প্রবাদ আছে, পানিতে পানি বাধে। ওজনের বেশির ভাগটাই যেহেতু পানির সেহেতু শরীর ঠিক রাখতে পানি হল অন্যতম উপাদান। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে প্রত্যেককে। শিশু হোক কিংবা বৃদ্ধ- এর অন্যথা হওয়ার জোর নেই। যদিও ঋতুবেধে পানির চাহিদা কিছু কম-বেশি হয়। গরমের সময় ঘাম বেশি হয় বলে যে পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার, শীতে ততটা নয়। কারণ শীতে ঘাম হয় না।
আমাদের শুষ্ক আর্দ্র আবহাওয়াতে যে-কোন সুস্থ ব্যক্তির প্রতিদিন আড়াই থেকে সাড়ে তিন লিটার আর শিশুদের এক থেকে দেড় লিটার পানি খেতেই হবে। শুধু সাধারণ পানি নয়, জুস, ডাবের পানি, শরবত বা অন্য যে-কোনো পানীয় আকারে পানি খাওয়া যেতে পারে। শিশুরা অনেক সময় পানি খেতে চায় না। পানি খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনে পানিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। কখনও অন্য সুস্বাদু পানীয়ের লোভও দেখানো যেতে পারে।
পানি শরীরের যাবতীয় অরগ্যানগুলো সচল রাখে, জীবন্ত রাখে। তাই ‘ফ্লো অফ ওয়াটার ইজ ভেরি ইম্পরটেন্ট।’ অনবরত পারে রক্ত প্রবাহিত হয়। রক্ত পরিশোধিত হয়ে কিছু বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয় তেমনই পুষ্টি পৌছে যায় বিভিন্ন অঙ্গে। রক্ত তরল রাখার জন্য তাই পানি ছাড়া এক মুহুর্তও চলবে না। আমরা যে খাবার খাই তাকে ভেঙে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটসহ যাবতীয় খাবারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বের করে পানি। হজমের ক্ষেত্রেও পানির অবদান অসামান্য। পানি স্টুল ফর্মেশনকে স্বাভাবিক রাখে। পানি কম খেলে কনস্টিপেশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যা ক্রনিক হয়ে গেলে লোকাল ইনফ্লামেশন হয়ে পাইলস, ফিসার, ফিসচুলা হতে পারে। খাদ্যনালির লোয়ার কর্ড বার্ন হয়ে দেখা দিতে পারে স্টমাক ইরিটেশনও। পানি শরীরের জন্য প্রয়োজন ঠিকই, তবে যে-কোনো জায়গার পানি খাওয়া চলবে না। বিশুদ্ধ পানিই খেতে হবে। সম্ভব হলে বোতলবন্দি মিনারেল ওয়াটার খাওয়া ভালো। না-হলে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে হবে। অনেকের ধারণা, পানি ফোটালে তার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সে সম্ভাবনা খুব কম। তা সত্বেও বলা যায় প্রয়োজনে নুন, চিনি বা গ্লুকোজ মেশানো যেতে পারে। যাই হোক, পানি যেন পরিশুদ্ধ জীবাণুবিহীন হয়। কারণ বেশিরভাগ রোগই পানিবাহিত। বাইরে বেরিয়ে যাবার সময়েও বোতলে পানি ক্যারি করতে হবে। প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে বলে যে-কোন জায়গা থেকে পানি খাওয়া যাবে না।
এই সময় প্রচন্ড তাপের জন্য ডিহাইড্রেশন খুব কমন সমস্যা। ঘামের সঙ্গে পানি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম বেরিয়ে যায় বলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়। তাই পানি খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ডিহাইড্রেশন রোধ করতে মাঝে-মধ্যে খেতে হবে নুন-চিনির শরবত কিংবা ইলেকট্রল মেশানো পানি। বরফ বা ঠান্ডা পানি না-খাওয়াই ভালো। ত্বক সুস্থ, সুন্দর রাখার জন্য পানির বিকল্প নেই। গোসলের মাধ্যমে শরীরের জীবাণু বেরিয়ে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে-
* হঠাৎ করে রোদ থেকে ফিরেই গোসল করা ঠিক নয়। পানি ত্বককে আর্দ্র রাখে যেমন, তেমনই খুব বেশিক্ষণ পানিতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়। * সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা যেতেই পারে, ক্লোরিনেটেড পানিও ত্বকের জন্য ভালো। তবে সানলাইটে অ্যালার্জি থাকলে, সানবার্ন-এর সমস্যা থাকলে ইন্ডোর পুলে সাঁতার কাটা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে- এ সময় ঘামাচি থেকে রেহাই পেতে ঘাম শরীরে বসতে দেওয়া যাবে না। * দিনে প্রয়োজনে ৪-৬ বার গোসল করতে হবে। মাথা ভেজানোর দরকার নেই সবসময়। * মাঝে মধ্যে গা স্পঞ্জ করে নেওয়া যেতে পারে। * সর্দি-কাশির ধাত থাকলে ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করতে হবে। * অনেকে গোসলের পানিতে বরফ দিয়ে ঠান্ডা করে নেন। এটা উচিত নয়। ঠান্ডা পানিতে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। * ঘামাচির সমস্যা থাকলে পাউডার ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে গোসল করা উচিত নয়। গোসলের পরে লাগাতে হবে বডি স্প্রে। বাচ্চাদের জন্যও এ ধরনের ডিও স্প্রে পাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে স্প্রে করার সময় যেন শিশুর চোখে-মুখে না যায়।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।