পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সংবাদপত্রের অবস্থা সারাবিশ্বে কোথাও ভালো নেই। চলমান করোনাকালে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্রের ইতিহাসে এমন অবস্থা অতীতে আর কখনো হয়নি। করোনাকারণে বিশ্ব একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা অভূতপূর্ব। সব দেশের অর্থনীতিই ভেঙ্গে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি সর্বকালের সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দার সম্মুখীন। অর্থনীতির অবর্ণনীয় দুর্দশায় প্রতিটি দেশের এমন কোনো খাত নেই যা, আক্রান্ত ও বিপন্নদশায় উপনীত না হয়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনার ধাক্কা সব ক্ষেত্রে লেগেছে। সবচেয়ে বেশি লেগেছে সংবাদপত্র, ব্যাপক অর্থে মিডিয়ায়।
সংবাদপত্রের আয়ের উৎস সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন। করোনাকালে এ দু’টি উৎসই অতিশয় ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। লকডাউনের সময় সংবাদপত্র দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় তো পরের কথা, জেলা শহরেও পাঠানো সম্ভব হয়নি। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সার্কুলেশন সামান্য বেড়েছে। তবে এখনো সাবেক অবস্থায় যেতে অনেক বাকী। আদৌ সাবেক অবস্থায় যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিজ্ঞাপন কমেছে বললে ভুল হবে, নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায়, সংবাদপত্রগুলো চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়েছে। এর ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ধ্বংসোন্মুখ সংবাদপত্র রক্ষায় কর্তৃপক্ষীয় তরফে নানা রকম পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কর্তৃপক্ষ বেতন কমিয়ে দিয়েছে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের, কোনো কর্তৃপক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে, কোনো কর্তৃপক্ষ আবার অনেককে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে দিয়েছে বিনা বেতনে। সাধারণভাবে সব সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষই পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা, প্রচার সংখ্য ও রঙিন পৃষ্ঠা কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে ব্যয় কমিয়ে, খরচ বাঁচিয়ে সংবাদপত্র রক্ষা করা যাবে কিনা, সে ব্যপারে সকলে একমত নয়। এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদপত্রে বেতন হচ্ছে। আর সব অনিয়মিত বেতনের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। আগেও অনেক সংবাদপত্রে অনিয়মিত বেতন হতো। এখন এক বেতন থেকে আরেক বেতনের মধ্যে গ্যাপ আরো বেড়েছে। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও অসহায় হয়ে পড়েছে। পেশা হিসাবে সাংবাদিকতা ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কিনা সে ব্যাপারেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংবাদপত্রের এই মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটের সময়ে সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক বলে বিবেচিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। করোনাকালে সরকার সকল খাতেই প্রণোদনা দিয়েছে, সহায়তা দিয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দিয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম সংবাদপত্র, যাকে কোনো কিছুই দেয়া হয়নি। সংবাদপত্র মালিক সমিতি বিভিন্ন সময়ে সরকারের নানা পর্যায়ে দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা করেছে। প্রস্তাব ও দাবিনামা পেশ করেছে। এসব কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি। সংবাদপত্র মালিক সমিতি করোনাজনিত পরিস্থিতি উত্তরণে তার প্রস্তাব ও দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যখন কথাবার্তা বলে, জানা গেছে, তারা ইতিবাচক সাড়া দেন এবং এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সংবাদপত্র মালিক সমিতি তাদের সেই আশ্বাসের দিকে এখনো চেয়ে আছে।
সংবাদপত্র সুরক্ষার স্বার্থে সংবাদপত্র মালিক সমিতি করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বাদ, বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে। সংবাদপত্র সেবাশিল্প হিসাবে অভিহিত। সেবাশিল্প যেসব সুবিধা বা ছাড় পায়, সংবাদপত্র তা পায় না। এ ব্যাপারে সংবাদপত্র মালিক সমিতির বক্তব্য: সংবাদপত্র সেবাশিল্প হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। যেমন তৈরি পোশাক শিল্প মুনাফা অর্জনকারী শিল্প হওয়া সত্ত্বেও এর করপোরেট ট্যাক্স ১০ থেকে ১২ শতাংশ। সংবাদপত্র সেবাশিল্প হওয়া সত্ত্বেও করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ। এবারের বাজেটে সব শিল্পের জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্রের করপোরেট ট্যাক্স ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করা জরুরি ছিল। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন-আয়ের ওপর টিডিএস ৪ শতাংশ এবং উৎসস্থলে কাঁচা মালের ওপর এআইটি ৫ শতাংশ-সহ মোট ৯ শতাংশ। অধিকাংশ সংবাদপত্রের মোট আয়ে ৯ শতাংশ লভ্যাংশই থাকে না। এই প্রেক্ষিতে টিডিএস ৪ থেকে ২ শতাংশ ও এআইটি শূন্য হওয়া উচিৎ। অপর পক্ষে মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে সংবাদপত্র ভ্যাট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিল্পের তালিকাভুক্ত। এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট, যা খরচের অর্ধেকের বেশি। অথচ সংবাপত্রকে ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। সংবাদপত্র মালিক সমিতির মতে, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ক্ষেত্রে সংবাদপত্রকে সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত করতে হবে, কিংবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে।
সংবাদপত্র মালিক সমিতি বিভিন্ন সময় যেসব দাবি, প্রস্তাব এবং বক্তব্য দিয়েছে, তা কার্যকর করা হলে সংবাদপত্র কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবে। তবে সেটাকেই যথেষ্ট বলে মনে করার কারণ নেই। সংবাপত্রকে টেকসই সেবাশিল্পে পরিণত করতে হলে এর আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর আয় বাড়াতে হলে তাকে অবশ্যই আয় বাড়ানোর উপযোগী করে তুলতে হবে। করোনাকাল সংবাদপত্রকে যে গভীর সংকটে নিক্ষিপ্ত করেছে, তাতে মালিক কর্তৃপক্ষের সামনে আয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ খোলা নেই। আগে অস্তিত্ব রক্ষা, পরে অন্য কিছু। এ জন্য প্রণোদনা ও সহযোগিতা দরকার। সেটা দিতে পারে সরকার। সংবাদপত্র মালিক সমিতি তার এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে প্রণোদনা, সহজ শর্তে ঋণ এবং সরকারের কাছে বিজ্ঞাপনের বিল বাবদ পাওনা টাকা প্রদানের আহবান জানিয়েছে।
সব শিল্প ও খাত যদি প্রণোদনা ও সরকারি সহায়তা পায় তবে শিল্প হিসাবে বিশেষ করে সেবাশিল্প হিসাবে সংবাদপত্র কেন পাবে না, সেটা অবশ্যই যৌক্তিক প্রশ্ন। ঋণ সুবিধা পাওয়া সব শিল্পেরই অধিকার। অন্য শিল্প পেলে সংবাদপত্র পাবে না কেন? সেবাশিল্প হিসাবে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চয় সংবাদপত্রের আছে। এই মুহূর্তে যখন ব্যাপক আর্থিক সংকটে, তখন সরকারের কাছে পাওনা বিজ্ঞাপনের বিলের টাকা পেলে সংবাদপত্রগুলো শ্বাস নিতে পারে, সাংবাদিক ও কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ নির্বাহ করা সম্ভবপর হতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কোনো সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা ও আয় বাড়ানোর দায়িত্ব এর উদ্যোক্তা বা মালিকের। এ ব্যাপারে তাকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আগেই বলা হয়েছে, সংবাদপত্রের আয়ের উৎস সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন। সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন যাতে বাড়ে তার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর নিয়োজিত রাখতে হবে। যেহেতু সংবাদপত্র একটি পণ্যও বটে, সুতরাং সেই পণ্যটি যারা কিনবে সেই ক্রেতা-পাঠাকের পছন্দের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সততা, বিশ্বাযোগ্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তার অপরিহার্য শর্ত। আর জনপ্রিয়তা সার্কুলেশন বাড়ার প্রধান কারণ। বিজ্ঞাপন বাড়ার ক্ষেত্রে বর্ধিত সার্কুলেশন নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকেই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে সরকারি বিজ্ঞাপনই বিজ্ঞাপনের প্রধান প্রবাহ। বেসরকারি বিজ্ঞাপনের প্রবাহ এখনো ক্ষীণ। সরকারের বিজ্ঞাপনের একটা নীতিমালা আছে। তবে সে নীতিমালা অনেক সময় মান্য হতে দেখা যায় না। বিজ্ঞাপনের জন্য সরকারের বাজেট সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আবার বিজ্ঞাপন বণ্টনের ক্ষেত্রেও সরকারের ইচ্ছাই আসল। সরকারবিরোধী সংবাদপত্র সব সময় সব সরকারের আমলেই বঞ্চিত হয়। নানাভাবে সরকার সংবাপত্রগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। এ জন্য বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসাবে কখনো কখনো ব্যবহার হতে দেখা যায়। বিজ্ঞাপনের পাওনা বিলের টাকা যথাসময়েই পরিশোধ করার কথা। এ টাকা আটকে রাখার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে না। বিজ্ঞাপন বিলের টাকা সময়মত পাওয়া গেলে সংবাদপত্রের আর্থিক সংগতি বাড়ে এবং এর সুফল সংশ্লিষ্ট সকলেই পেতে পারে।
সংবাদপত্রশিল্প আর পাঁচটা শিল্পের মতো নয়। সেবাশিল্পের মধ্যেও সংবাদপত্র আলাদা। সংবাদপত্র তথ্যের বাহন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয় সংবাদপত্র। শুধু তথ্য নয়, মতামত, মতবাদ, জ্ঞানের নানা বিষয় পাঠককে উপহার দেয়। সংবাদপত্র সব সময় সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে ভূমিকা পালন করে। বস্তুনিষ্ঠতাই তার চালিকাশক্তি। সংবাদপত্র মতামত গঠন, প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখে। যে কোনো বিষয়ে জনসচেতনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের অবদান অগ্রবর্তী। সংবাদপত্র জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করে। জনমত তুলে ধরে, জনইচ্ছা বিজ্ঞাপিত করে সরকারকে সহযোগিতা করে। অন্যদিকে জনস্বার্থে গৃহীত সরকারের যাবতীয় কার্যক্রম, তার ভালোমন্দ ইত্যাদি তুলে ধরে তথ্য ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে জনগণকে ক্ষমতায়িত করে। সংবাদপত্র একটি দেশের হুইপের কাজ করে, সচেতন ও শিক্ষিত করে তোলে। পার্লামেন্ট না থাকলে পার্লামেন্টের কাজ করে। সংবাদপত্র ছাড়া আজকে কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের কথাই কল্পনা করা যায় না।
সংবাদপত্রকে বলা হয় ফোর্থ স্টেট। সুতরাং এই ফোর্থ স্টেটকে তার ভূমিকা ও অবদানের কথা মাথায় রেখেই সরকারের উচিৎ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা। এ কথা কে না জানে, এ দেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে সংবাদপত্র পতাকাবাহীর ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসাবে ভূমিকা রেখেছে সাংবাদিকরা। তারা তাদের অত্যুজ্জ্বল মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভয় ছিল, শংকা ছিল, কিন্তু দায়িত্ব পালনে তা কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সাহসিকতা কিংবদন্তি তুল্য। সেই সংবাদপত্র, সেই সাংবাদিকরা আজ চরম বৈরি অবস্থায় পতিত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করার জন্য সরকারের কি কোনোই দায়িত্ব নেই?
এই করোনাকালেও সংবাদপত্র যথাযথ দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে অগ্রযোদ্ধার মতো কাজ করে দায়বদ্ধতার প্রমাণ দিচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে কয়েকশ’ সাংবাদিক করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বেশ কয়েকজন এই রোগে মারাও গেছে। শুধু করোনা নয়, ঘূর্ণিঝড়, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, নজিরবিহীন জোয়ার ইত্যাদি উপেক্ষা করে তারা দায়িত্ব পালন করে সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের এই ভূমিকায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে সরকার। অন্যান্য মিডিয়ার বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও তার সংবাদকর্মীরাও এই একই ভূমিকা রাখছে। তাদের অবস্থাও সংবাদপত্রের চেয়ে ভালো নয়।
সরকারের অনেকেই গর্ব করে বলে থাকেন, বর্তমান সরকার সংবাপত্র ও মিডিয়াবান্ধব। দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, এই সরকারের আমলে যত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যত টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে এসেছে অতীতে কোনো সরকারের আমলেই সেটা দেখা যায়নি। তাদের এ কথায় দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত সংবাদপত্র, এত টিভি চ্যানেলের দরকার কি ছিল, যদি সেসব টিকেই না থাকে? সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাসী, এ কথাও কারো অজানা বা অশ্রুত নয়। আসলেই কি? এই করোনাকালীন সময়ে সাংবাদিকরা নানা সংকট-সমস্যার মধ্যে থাকলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা থেকে রেহাই পায়নি। বিগত মাসগুলোতে অন্তত ৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
পরিশেষে বলবো, সংবাদপত্রের যে সংকট, তা মালিক কর্তৃপক্ষের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সংবাদপত্র মালিক সমিতি যেসব দাবি ও প্রস্তাব দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবাদপত্রের সুরক্ষাই কেবল নয়, সাংবাদিকদের সুরক্ষায়ও পদক্ষেপ নিতে হবে। সংবাদপত্র মালিক সমিতি, সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সরকার পক্ষকে একসঙ্গে বসে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।