পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে ত্রানের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের হিসাব যাথাযথভাবে করা হয়নি। এমনকি যাচাই-বাছাই না করে ত্রাণ বিতরণের কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হয়েছেন। অনিয়ম পাওয়া গেছে বিতরণেও। এমনটাই জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। গতকাল মঙ্গলবার ‘করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি: সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মোস্তফা আমির সাব্বিহ গবষেণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। সিপিডি এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর, ড. দীপঙ্কর দত্ত, আরডিআরএস বাংলাদেশের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম, রংপুর জেলা জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান। সংলাপে রংপুর অঞ্চলের করোনা অতিমারী এবং বন্যা মোকাবেলায় বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে আলোচনা হয় এবং সংলাপে রংপুরের কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ রংপুর অঞ্চলের নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উলফৎ আরা বেগম বলেন, মহামারী শুরুর পর থেকে ত্রাণ কিংবা অন্য কোনো তপৎরতা নিয়ে কোনো এনজিওকর্মী তার কাছে আসেননি। এমনকি তাদেরকে মাঠেও দেখা যায়নি। কাউনিয়ায় কাজ করা একমাত্র এনজিও ‘আশা’। তারা দুইশ প্যাকেট ত্রাণ দিয়েছে। আর অক্সফাম থেকে দেয়া হয়েছে দুইশ মাস্ক ও এক হাজার করে টাকা। করোনা মহামারীর কারণে কর্মহীন হয়ে পড়াদের যে মানবিক অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে সেটা কিন্তু অতিদরিদ্রদের জন্য না। উপজেলায় সব মিলিয়ে ১৩ হাজারের মতো অতিদরিদ্র মানুষের তালিকা রয়েছে যাদের জন্য পৃথক সহায়তার ব্যবস্থা আছে। যারা কোনো না কোনো সরকারি ত্রাণের তালিকায় রয়েছেন তাদেরকেও সেখানে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়নি। কেবল যারা লকডাউনের কারণে সাময়িক কর্মহীন হয়েছেন তাদেরকে এই সহায়তা দেয়া হয়েছে। এখন কোনো দরিদ্র ব্যক্তি যদি মনে করেন তিনি আর্থিক সহায়তা পাননি, ওমুক মুদি দোকানি পেয়েছেন, সেটা তার ভুল ধারণা। কারণ নিয়মটা সেভাবেই করা হয়েছে।
কাউনিয়ার একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বলেন, ১১শ’ লোককে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। অথচ সেখানে ১১ হাজার মানুষকে দেওয়া উচিত ছিল। সেই কারণে অভিযোগ আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রেনু বালা নামের একজন এনজিওকর্মী অভিযোগ করেন, ত্রাণ দেয়ার আগে ৯০০ ব্যক্তির কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের অর্ধেক মানুষও ত্রাণ কিংবা সহায়তা পাননি।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে থাকতে পারেননি। সে কারণেও অনেক সমস্যা হয়তো হয়েছে। যে ৩০ জনের টেলিফোন ইন্টারভিউর মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটাও পরিস্থিতির একটা অস্বাভাবিকতার প্রমাণ দেয়। আসলে এসব কারণেও কিছু বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।
সংলাপের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বল্পদারিদ্র্যের নীলফামারী, চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের অধিক সংখ্যক পরিবার বন্যা মোকাবিলায় জিআর চাল বিতরণ সুবিধার আওতায় ছিল। বিপরীতে কুড়িগ্রাম, জামালপুরের মতো উচ্চদারিদ্র্যের অঞ্চলে কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধা পায়। সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়েছে, চাল বিতরণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চাহিদার প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জে বেশি সংখ্যক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সেখানকার কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল। অন্যদিকে চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা কম থাকা সত্তে¡ও ১০০ শতাংশের বেশি পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল। সিপিডি জানিয়েছে, সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মাইকিং বা প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। কোনো উঠান বৈঠক হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গোপনে তাদের দলীয় লোকজনকে নিয়ে সুবিধাভোগী নির্বাচন করতেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি জেনে যান এবং প্রতিনিধিদের পেছনে ধর্ণা দেন তাহলে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচন করা হয়।
সিপিডির প্রবন্ধে আরও বলা হয়, করোনাকালীন খাদ্য (চাল) সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ছিল এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও যোগ্য ব্যক্তিরাই নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নগদ আড়াই হাজার টাকা সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ছিল না। এ ক্ষেত্রে দলীয়করণ এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সংলাপে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় কাদেরকে ত্রাণ দেয়া হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো প্রচারণা মাঠে ছিল না। সে কারণেই অনেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবার ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিরও সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক প্রচারণার কথা থাকলেও সরকারি কোনো সংস্থা তা করেনি।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।