পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে সাড়ে ৫শ’ ইয়াবার কারবারি নিহত হয়েছে। দুই দফায় আত্মসমর্পণ করেছে ১২৩ জন। কিন্তু বন্ধ হয়নি ইয়াবার কারবার। এখনো মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসা ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। ইয়াবার গডফাদাররা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। গত দুই বছরে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই লিয়াকত আলীর হাতেই ১৪৪টি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেছে নেয়া হয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনাময়ী মেরিন ড্রাইভ রোডকে। সেই মেরিন ড্রাইভ রোডেই গত ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এরপরই বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। প্রদীপ ও লিয়াকতের হাতে নিহত সবাই যে ইয়াবার কারবারি ছিলেন না, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই সরব হয়ে উঠছে স্থানীয়রা। ইয়াবা নির্মূলের নামে টেকনাফ পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধ ও অনৈতিক বাণিজ্যের বিষয়ও বের হয়ে আসতে শুরু করেছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের চকরিয়ায় ৫০ লাখ টাকার দাবিতে মো. জাফর নামে এক প্রবাসীকে পটিয়া থেকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত রোববার পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেশ্বর সিংহের আদালতে এই অভিযোগে মামলাটি করেন প্রবাসী জাফরের মামা ও বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা আহমদ নবী। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রামের সিআইডি পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি চকরিয়া উপজেলার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম ও চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান। পুলিশের দাবি, প্রবাসী জাফরের কাছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পাওয়া যায়। তাকে নিয়ে আরো মাদক উদ্ধারে অভিযান চালানোর সময় এই ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত ৩১ জুলাই পটিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সিএনজি চালক মো. হাসানকে চকরিয়া থানা পুলিশ তুলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে এ ব্যাপারে কোনো মামলা করেনি তার পরিবার। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্যমতে, গত প্রায় দুই দশকে বাংলাদেশে ৪ হাজারের বেশি মানুষ বিনা বিচারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২০৭ জন ব্যক্তি বিনা বিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নিনা গোস্বামী বলেন, বাংলাদেশে একটা সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে বিচারবহির্ভূত হত্যার। শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে ২০১৮ সাল থেকে যেভাবে অভিযান হচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে তাতে মাদক কি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার হতে হবে। যারা এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটাবে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে। তা নাহলে কখনোই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়, ঢাকাসহ সারাদেশেই ইয়াবা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ইয়াবাকে মোটা অঙ্কের ঘুষের উৎস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তার মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির নামে সধারণ মানুষের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ আছে। টাকা দিতে না পেরে অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাতে অনেক নিরীহ শিক্ষার্থীর জীবনও বিপন্ন হওয়ার পথে। রাজধানীর সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, শ্যামপুর, কদমতলী, গেন্ডারিয়া, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, ভাষানটেক, তুরাগ, শাহবাগ ও যাত্রাবাড়ী থানায় এ ধরনের মামলা বেশি হয়। আইনজীবীদের মতে, ইয়াবাসহ মাদকের ফাঁদ পেতে পুলিশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও টাকা লেনদেনের কোনো প্রমাণ সাধারণত থাকে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সব সংস্থা মিলে এক লাখ ২৪ হাজার ৯৮ মামলায় এক লাখ ৬২ হাজার ৮৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার ৩২৮টি ইয়াবা। মানবাধিকার সংস্থা ও পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের ১৫ মে থেকে চলতি বছরের ৩০ জুলাই পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন ৫৮৬ জন। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮৭ জন নিহত হয়েছে।
জানা গেছে, পুলিশের উদ্যোগে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন এবং চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ২১ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা সমন্বিত তালিকায় কক্সবাজারের ৭৩ শীর্ষ ইয়াবা গডফাদারের নাম রয়েছে। মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্স সর্বশেষ ৫৪ গডফাদারকে চিহ্নিত করে। প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ২৪ জনের নাম এই তালিকায় রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল আমিন, আবদুর শুক্কুর, মোহাম্মদ সফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, ভাগ্নে সাহেদুর রহমান নিপু এবং বেয়াই শাহেদ কামাল। তালিকার ২ নম্বরে থাকা টেকনাফের হাজি সাইফুল করিমসহ ৯ জন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় যে ২১ জন আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নন। তালিকার ১ নম্বরে নাম ছিল আব্দুর রহমান বদির নাম। তিনিসহ বাকি ৪০ জন আত্মসমর্পণ করেননি। তার ভাই টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর মৌলভী মুজিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, টেকনাফ জালিয়াপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দীন, তার ভাই বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দীন এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়ার নুরুল হক ভুট্টোও আত্মসমর্পণ করেননি। ছোট সারির বিক্রেতারা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও চিহ্নিত গডফাদাররা ‘নিরাপদে’ আছেন বলে স্থানীয়রা জানান। তাদের মতে, কক্সবাজারের শীর্ষ ৭৩ জন পৃষ্ঠপোষক ও কারবারির ৪০ জনই আত্মসমর্পণ করেননি। প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগের সুযোগ নিয়ে নিজেদের আড়ালে রেখেছেন। আত্মসমর্পণের পরেও কারাগারে থাকা কারবারিদের অনেকের সহযোগীরা এখনও সক্রিয় আছেন।
এদিকে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০ জন শীর্ষ কারবারিকে নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের শতকোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে। তবে দেড় বছরে মাত্র ১২ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করা হয়েছে, যার একটিরও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত করে প্রমাণ জোগাড় না হওয়ায় শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়নি এখনো। স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, ইয়াবার কারবারে গডফাদাররা আর্থিক অনুসন্ধানের ধীরগতির সুযোগ নিয়ে টাকা-পয়সা সরিয়ে ফেলেছেন। অনেকে আত্মসমর্পণের আগেই এই কৌশল নেওয়ায় সম্পদের তথ্য পাননি তদন্তকারীরা।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা কারবার করে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং কারবারিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ঘোষণা দেওয়া হয় গত বছর। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে তদন্তের কথাও বলা হয়। ওই সময় ২০ কারবারির ব্যাপারে অনুসন্ধান করার জন্য সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ শাখার ১০ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক বছর পর গত ২১ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সিআইডির তদন্তে কিছু কারবারির শতকোটি টাকার সম্পদের তথ্য মিলেছে। তবে অনেক কারবারির সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের আগে ‘সুযোগ পেয়ে’ বেশ কিছু কারবারি তাঁদের টাকা-পয়সা সরিয়ে ফেলেছে। অনেকে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণেও বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারা হলেন আবদুস শুকুর, আমিনুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শফিক, ফয়সাল রহমান, একরাম হোসেন, নুরুল কবির, জামাল মেম্বার, মোহাম্মদ আলী, নুরুল হুদা মেম্বার, আবদুর রহমান, শাহ আজম ও এনামুল হক এনাম মেম্বার। সিআইডির অনুসন্ধানে ইয়াবার টাকায় আবদুস শুকুর এক কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ কিনেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। নুরুল কবিরের ১৯টি জমির তথ্য মিলেছে, যার মূল্য কমপক্ষে তিন কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। একরাম হোসেনের প্রায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের জমির সন্ধান মিলেছে। জামাল মেম্বারের ৮০ শতাংশ জমি পাওয়া গেছে, যার মূল্য ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ইয়াবার টাকায় মোহাম্মদ আলীর প্রায় এক একর জমি ও বিলাসবহুল গাড়ি হয়েছে। নুরুল হুদা মেম্বারের ৮২ লাখ টাকার জমি এবং আরো কিছু সম্পদের খোঁজ মিলেছে। আব্দুর রহমানের জমি আছে কমপক্ষে ৪৩ লাখ টাকার। অবশ্য আমিনুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শফিক, শাহ আজম, ফয়সাল রহমান ও এনামুল হক এনামের ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন এবং কিছু সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পায়নি সিআইডি। এ বিষয়ে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোস্তফা কামাল বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দায়ের করতে হলে আগে অনুসন্ধান করে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়। এ কারণে প্রথমে আমরা কয়েকটি মামলা করে সেগুলোর তদন্ত করছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে আর অগ্রগতি হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।