পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : থামছে না ইয়াবার ভয়াল আগ্রাসন। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই আসছে ইয়াবার চালান। সাগর, পাহাড় আর সড়কপথে এসব চালান চট্টগ্রাম হয়ে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সোমবার রাতে চট্টগ্রামের সাগর তীরবর্তী উপজেলা আনোয়ারায় উদ্ধার হয়েছে ১০ লাখ ইয়াবার বিশাল একটি চালান। মাঝে মধ্যে ছোট-বড় কিছু চালান ধরা পড়লেও পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক অক্ষত থেকে যাচ্ছে।
রঙিন এই নেশার ট্যাবলেটের নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে
অপরাধ প্রবণতাও। গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত, আর এই সুযোগে বেপরোয়া মাদক পাচারকারীরা।
সাগর পথে মাছ ধরা ট্রলারে সরাসরি মিয়ানমার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান দেশে ঢুকে পড়ছে। চালান আসছে সড়ক পথেও। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া এসব চালান ধরতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভয়াল ইয়াবা আগ্রাসনের কাছে প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছে।
সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি, সাগর পথে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সতর্ক টহল, সড়ক ও পাহাড়ি পথে র্যাব-পুলিশের তল্লাশির মধ্যেও আসছে ইয়াবার চালান। নানা কৌশলে মাদক সওদাগরেরা এসব চালান নিয়ে আসছে। নৌপথে আসছে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা। সোমবার রাতে আনোয়ারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে এমন একটি চালান আটক করা হয়।
উপজেলার দোভাষী বাজার বেড়ি বাঁধ ও পারকী সমুদ্র সৈকত এলাকায় কোস্ট গার্ডে অভিযানে দুই মাদক ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেনÑ মোহাম্মদ হোসেন (৫৫) ও দয়াল কৃষ্ণ (৪০)। গতকাল (মঙ্গলবার) কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জুলহাজ ফয়সাল বলেন, সোমবার দুপুরে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ শাহ পরীর দ্বীপের দিকে আসা সন্দেহজনক ট্রলারকে ধাওয়া করলে ট্রলারটি গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যায়।
বিজিবি-২ কক্সবাজারের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদের দেয়া তথ্যানুযায়ী কোস্ট গার্ডের একটি দল বহির্নোঙ্গরে টহল পরিচালনা করলে ট্রলারটি আনোয়ারা পারকী সমুদ্র সৈকতের দিকে গিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ট্রলারটিতে সাগরে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য তলদেশ ছিদ্র করে টলারে থাকা লোকজন পালিয়ে যায় জানিয়ে কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা জুলহাজ বলেন, রাতে ট্রলারটি তল্লাশি করে পাঁচটি বস্তায় থাকা ৯ লাখ ৫০ হাজারটি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
এদিকে দোভাষী বাজার বেড়ি বাঁধ এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার ইয়াবসহ মোহাম্মদ হোসেন ও দয়াল কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান তিনি। এসময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১৩ হাজার ৮০০ টাকা ও দুটি মোবাইল সেটও জব্দ করা হয়। গতকাল তাদের দুই জনকে আনোয়ারা থানায় হস্তান্তর করে কোস্টগার্ড। উদ্ধারকৃত ইয়াবার দাম প্রায় ৫ কোটি টাকা।
স্থানীয়রা জানান, আনোয়ারার পারকী সমুদ্র সৈকত এলাকায় রীতিমত ইয়াবার হাট বসে। সেখানকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাইকারী দরে ইয়াবা কিনে চট্টগ্রাম মহানগরীর ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে মাদক ব্যবসয়ীরা। মিয়ানমার থেকে সরাসরি সাগর পথে আসা ইয়াবার চালান খালাস হয় আনোয়ারার উপকূলে। সম্প্রতি পারকী সৈকত এলাকা থেকে ২ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেখানে প্রতিনিয়তই ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও পুলিশের নিয়মিত অভিযানে ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদ এলাকা থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ ফজল করিম ওরফে ফজর আলী (৩৮) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার মধ্যরাতে রৌফাবাদের বুড়া মিয়ার কলোনির সামনে চায়ের দোকান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ফজর আলী কক্সবাজারের টেকনাফ সদর উপজেলার মৌলভীপাড়া হাজী কালা মিয়ার বাড়ির মৃত কালা মিয়ার ছেলে। রোববার নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে ৬ হাজার ২শ’ পিস ইয়াবাসহ আরও একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে পরিমাণ ইয়াবা ধরা পড়ছে তার অন্তত দশগুণ নিরাপদে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠা অর্ধ শতাধিক ছোট-বড় কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা ঠেলে দেয়া হচ্ছে এদেশে। সাগর, পাহাড় আর সড়ক পথে ইয়াবার চালান আসছে বানের পানির মত। চোরাচালানী সিন্ডিকেটের হাত হয়ে এসব নেশার ট্যাবলেট ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। একসময় এ ট্যাবলেট উচ্চবিত্তের বকে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের নাগালের মধ্যে থাকলেও এখন এটি অনেক সহজলভ্য। শহরের বস্তি এমনকি পল্লী গাঁয়েও মিলছে ইয়াবা ট্যাবলেট।
পাচারের সময় বড় বড় চালান ধরাও পড়েছে। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনীর অভিযানে বহির্নোঙ্গরে একটি মাছ ধরার ট্রলারে ধরা পড়ে ১৪ লাখ পিস ইয়াবার বিশাল চালান। র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অভিযানে গত বছরে ধরা পড়ে ৩০ লাখ ইয়াবা। এ বছরও বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক করেছে র্যাব। র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২ ইয়াবা ব্যবসায়ী মারা গেছে। গ্রেফতার হয়েছে অনেকে। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি ইয়াবা পাচার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।