Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডকে দুর্নীতি ও দালালমুক্ত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২০, ১২:১০ এএম

দেশের মাদরাসা শিক্ষা শতকরা ৯২ভাগ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি, আবেগ ও মূল্যবোধর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কোরান-হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্র মানুষকে সততা, ন্যায়পরায়নতা, ধৈর্য-সহনশীলতা, ত্যাগ ও নির্লোভ জীবনের শিক্ষা দেয়। মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় শিক্ষার সে মূল্যবোধকে ধারণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে যদি দালাল ও দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিনত হয়, তাহলে ধর্মীয় মূল্যবোধের স্থান কোথায়? সাধারণ শিক্ষার জন্য দেশের সব বিভাগে আলাদা আলদা শিক্ষাবোর্ড থাকলেও দেশের সাড়ে ৯ হাজারের বেশি মাদরাসার জন্য একটিই মাদরাসা বোর্ড। এ কারণে সারাদেশ থেকে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নানা প্রয়োজনে ঢাকার বক্সিবাজারে অবস্থিত মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে ভীড় জমান। কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষার পাদপীঠগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাদরাসা বোর্ডে যদি দালাল-দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য থাকে তার প্রভাব সমগ্র মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার উপর পড়তে বাধ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাবলিক পরীক্ষায় ইবতেদায়ী ও আলিম পরীক্ষায় সমমানের সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভাল ফলাফল করতে দেখা গেছে। প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষা ও পেশাগত পরীক্ষায়ও মাদরাসা থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে মানুষ বেশি সততা ও স্বচ্ছতা প্রত্যাশা করে। একইভাবে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সাথে সংশ্লিষ্টরাও ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করবেন , এটাই সকলের প্রত্যাশিত।

গতকাল একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রির্পোটে মাদরাসা বোর্ডের দুর্নীতি ও দালালচক্রের একটি খন্ডচিত্র উঠে এসেছে। শিক্ষাবোর্ডের সার্টিফিকেটে নানা ত্রু টি-বিচ্যুতি, জন্ম তারিখ, বানান ভুল ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বোর্ডে আসেন। এরাই কথিত দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে হয়রানি ও অহেতুক বাড়তি খরচ করতে বাধ্য হন। এমনিতে বোর্ডের বেশিরভাগ কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক হলেও যে সব কাজ স্বশরীরে হাজির হয়ে সম্পাদন করতে হয়, সেব কাজেই এখন দালালচক্রের স্মরনাপন্ন হতে হয়। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মতি ও যোগসাজশ ছাড়া অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কাজ করার এই নেটওর্য়াক চালু রাখা অসম্ভব। মানুষ গড়ার কারিগর, আলেম-উলামাদেরকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সরকার এবং দুর্নীতিদমন কমিশন দেশের সব সেক্টরের দুর্নীতি দমনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি-অস্বচ্ছতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতির নেটওয়ার্ক এখনো যথেষ্ট শক্তিশালীভাবেই সক্রিয় রয়েছে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে প্রথমেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার পাদপীঠ মাদরাসাগুলোকে তার ঐতিহ্য ও কাঙ্খিত মানে উন্নীত করতে হলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মাদরাসা বোর্ড ও অধিদফতরে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন কায়েম করতে হবে।

স্বাধীনতার পর দেশের মাদরাসা শিক্ষা পুনরায় চাুল ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। এমনকি দেশের আলেম সমাজের শত বছরের প্রত্যাশিত ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সনদের স্বীকৃতিও শেখ হাসিনার অন্যতম অবদান। মাদরাসা শিক্ষকদের বৃহত্তম সংগঠন জমিয়াতুল মোদাররেসিনের সাথে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও অধিদফতরের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল এনে দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে কথিত দুর্নীতি ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য মাদরাসা শিক্ষার মান মর্যাদার জন্য হানিকর । মাদরাসা শিক্ষাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করার মধ্য দিয়ে দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং মাদরাসা শিক্ষায় সরকারের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনগুলোও ম্লান করে দিচ্ছে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠে আসছে। মাদরাসা শিক্ষাকে তার কাঙ্খিত ধারা ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হলে প্রথমেই মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ও অধিদফতরের দর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের দালাল ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। তাদের তদন্তের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমুচিত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ণ ও যুগোপযোগি করণের অন্যতম পথিকৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর নির্দেশনা দিবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।



 

Show all comments
  • এন ইসলাম ২১ আগস্ট, ২০২০, ১০:২৫ পিএম says : 0
    মসজিদ কমিটিকে আমি ছোটকালে সেটাকে খাদেম কমিটি হিসেবে জাানতাম । কিন্তু এখন দেখি এই কমিটির সদদস্যরা আর খাদেম নেই, কর্মকর্তা হয়ে গিয়েছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে মালিক । মাঝে মাঝে শুক্রবারের নামাজে হাজিরা দিয়েই এখন কোন কোন মসজিদ কমিটির সভাপতি হওয়া যায় । এসব মসজিদে মনে হয় আয় রোজগার ভালোই হয়, যদিও তাতে ইমাম/মুয়াজ্জিন সাহেবদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয় সামান্যই । শুক্রবারের খুতবার আগে ইমাম সাহেবদের বয়ানে আজ আর কোন প্রাণ নেই । রাসুল (সাঃ), অন্যান্য নবী/রাসুল (আঃ) বা সাহাবী (রাঃ)-দের যুগের বহুল প্রচারিত কাহিনী গুলোই ঘুরে ঘুরে বর্ণীত হচ্ছে, রূপকথা গল্প বর্ণনার মতো । বর্তমান যুগে কিভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবণে ইসলামকে প্রয়োগ করবো, তার কোন দিক নির্দেশনা নেই । সামাজিক অনাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য নেই, সুদ-ঘুষ থেকে কিভাবে আমরা বেঁচে থাকবো, সে ব্যাপারে কোন অনুপ্রেরনা নেই । ইমাম সাহেবদের বয়ান শুনলে মনে হয়, তাঁদের কন্ঠ কেউ চেপে ধরেছে, এটা তাঁদের বক্তব্য নয় । সুদখোর/ঘুষখোর, অনাচারী/অত্যাচারী, আত্মীয়/প্রতিবেশীর হক নষ্টকারী ব্যক্তিরা যেন বয়ান লিখে দিয়েছে । এই বয়ানগুলো মুসলিমদের কাজে আসবে বলে আমার মনে হয়না । এইসব বয়ানের চাইতে ইউটিউবে অনেক ভাল বয়ান শুনা যায় ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদরাসা-শিক্ষাবোর্ড
আরও পড়ুন