পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফল নিয়ে নজীরবিহীন কৌতূহল, উত্তাপ, গোপনীয়তা ও মিডিয়ায় তোলপাড় মানুষ প্রত্যক্ষ করলো দেশের মানুষ। কয়েক বছর আগেও হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনার ছিলেন। তারপর শ্রিংলার হঠাৎ ঢাকা সফর নিয়ে উত্তাপের শেষ ছিল না। চীনের প্রতি দক্ষিণ স যখন এশিয়ার পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছে; তখন হঠাৎ করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর বাড়তি উত্তাপ ছড়ায়।
কারণ ভারতের খুবই প্রয়োজন বাংলাদেশের সমর্থন। এছাড়াও শ্রিংলার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের খবর প্রথমে গোপন রাখায় কূটনৈতিক ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে সেই কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। তবে মিডিয়ায় বোমা ফাঁটানো ‘উত্তাপ’ এর ফলাফল কার্যত মূসির প্রসবের মতোই হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর করোনাভাইরাসর টিকা তথা চীনের ভ্যাকসিনের বদলে ভারতের ভ্যাকসিন নেয়া ইংগিত দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, হর্ষবর্ধন শ্রিংলা কি মন্ত্রণা দিয়ে এসেছেন? ভারত কী করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছে? নাকি চীনকে ঠেকাতে রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিন বাংলাদেশে বিক্রিতে মধ্যস্বত্তভোগীর ভূমিকা পালন করতে চায়? শ্রিংলার সফর নিয়ে যে কৌতুহল সৃস্টি হয় তা বৈঠকের শীতল আলোচনায় যেন চুপসে গেছে।
ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হোটেল সোনারগাঁয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সোনালী অধ্যায় চলছে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে সীমান্তে অনাকাক্ষিত হত্যাকান্ড বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগের কথা তোলা হয়েছে। বৈঠকে উদ্বেগের বিষয়টি সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তবে বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন বিষয়ক চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা : হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতে উৎপাদন করা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশ পাবে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়েছে। দু’ দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। দু’দেশের সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় চলছে। এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়েছে ভারত। আগামী বছর ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রেজুলেশন পাস করতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বলে ভারত আশ্বাস দিয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন : দ্বিপাক্ষিত বৈঠকে সীমান্তে অনাকাক্ষিত হত্যাকান্ড বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সীমান্ত হত্যার বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত। গত ৬-৭ মাস নিহতের সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এ বিষয়ে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি, ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আগামী মাসে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের বৈঠক আছে জানিয়ে মাসুন বিন মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বৈঠকের আগে নতুন বিএসএফ ডিজিকে সীমান্ত হত্যার বিষয়টির নিয়ে নির্দেশনা দেবেন। আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু গুরত্ব পেয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হয়েছে। আমরা তাদের সমর্থন দিয়েছিলাম। নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। জাতিসংঘে এই ইস্যুতে তারা সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিস্তা নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা ছিল কিনা-জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জানান, এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। চলমান করোনা পরিস্থির মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত এয়ার বাবল চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মাসুদ বলেন, বিমান পরিষেবা সংক্রান্ত এয়ার বাবল চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত করে ফেলতে পারব।
বৈঠকের আলোচনার বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে মাসুদ বিন মোমেন জানান, দুই সচিবের বৈঠকে দুই দেশের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পযায়ে বৈঠকের বিষয়ে ভারত প্রস্তাব দিয়েছে।
এর আগের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। কানেকটিভিটি, শুধু দু’দেশের মধ্যে বিমান চলাচল, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী : ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর নিয়ে যখন সর্বত্রই আলোচান তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সিলেটে। সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর স্থায়ী প্রতিকৃতি উন্মোচনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার ‘আকস্মিকভাবে’ ঢাকা সফরকে ‘খুবই খুশির’ খবর হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, খুবই খুশির খবর যে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আমাদের দেশে সফরে এসেছেন। তিনি জানান, সচিবের এই সফরে কোভিডের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। একইসঙ্গে ভারতে ভ্যাকসিন আবিস্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই ভ্যাকসিন আমরা কীভাবে পাবো সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে অনেক সমস্যা থাকে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। তাদের সাথে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তারাও রক্ত দিয়েছে। আমরা দুই দেশ মিলে অনেক প্রোগ্রাম এক সাথে করি। আমরা দুদেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। সমস্যা আসলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের অনুষ্ঠান বাংলাদেশ ও ভারত এক সাথে উদযাপন করবে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।