২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যে মশা বাহিত ডেঙ্গুরোগ গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কারণ দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গত বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছে । চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২৯৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে শনাক্ত হলেও কোনো মৃত্যু হয়নি। তবে গত বছরে এ সময়ে মাত্র ১৩১ জন আক্রান্ত হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের দিকে প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে। একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ যা ডেঙ্গু ভইরাস-এর কারণে হয়। ডেঙ্গু জ্বর। এটি ভাইরাসজনিত এক মারাত্মক রোগ। ডেঙ্গুর তেমন কার্যকরী প্রতিষেধক নেই। এ থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে একে প্রতিরোধ করা।
ডেঙ্গু কী? এডিস মশাবাহিত ৪ ধরনের ভাইরাসের যে কোনও একটির সংক্রমণে যে অসুস্থতা হয় সেটাই ডেঙ্গু। এর সাধারণত দু’টো ধরন রয়েছে। ১.ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর, ২.হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। শেষেরটাই সবচেয়ে ভয়াবহ।
ডেঙ্গু ভাইরাস: ভাইরাসজনিত রোগের সাধারণত কোনো প্রতিষেধক নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। অন্য সব ভাইরাল রোগের মতো এরও কোনো প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে এর মোকাবেলা করা হয়। অন্য ভাইরাল ফিভারের মতো এটিও আপনা-আপনিই সেরে যায় ৭ দিনের মধ্যে। তবে মূল ভয়টা হচ্ছে এর পরবর্তী জটিলতা নিয়ে। ডেঙ্গু জ্বর যদি সময় মতো মোকাবেলা করা না যায় তবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে, দেখা যায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গু জ্বর।
ডেঙ্গুর লক্ষণ: হঠাৎ করে জ্বর। কপালে, গায়ে ব্যথা। চোখে ব্যথা, চোখ নাড়ালে এদিকে-ওদিকে তাকালে ব্যথা। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত অথবা কালো কিংবা লালচে-কালো রঙের পায়খানা এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত যেতে পারে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার খুবই মারাক্তক। মস্তিকেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। * জ্বর ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। * গলা ব্যথা , চরম অবসন্নতা এবং বিষাদগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে। * রোগীর হাড়ের ব্যথা এত তীব্র হতে পারে যে , রোগীর মনে হয় যে তার হাড় ভেঙ্গে গেছে। এ জন্য এ জ্বরকে “ব্রেক বোন ফিভার” বলা হয়ে থাকে। * রোগীর চোখ লাল হতে পারে এবং ত্বকও লাল হতে পারে। * জ্বর ৩-৭ দিন স্থায়ী হয়। * ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাঁধে এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রে রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর ডেঙ্গুর মারাত্মক ধরন। এক্ষেত্রে অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটে। * সাধারণত জ্বর শুরু হওয়ার ৩-৪ দিন পর থেকে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণজনিত উপসর্গ দেখা যায় ত্বকে ।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ( রক্তক্ষরণ ) জ্বর : রক্ত পরীক্ষার যদি অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট সংখ্যা কমে যায় তবে বুঝতে হবে এটি হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী জ্বর। রোগীর শকে চলে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্র ব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া , রক্তচাপ কমে যাওয়া কিংবা বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা মাত্র রোগিকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। প্রচুর তরল খাবার খাওয়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি প্রচুর পরিমাণে পান করাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ মনিটর করতে হবে। সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলা যায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেন্ট্রেটেড প্লাটিলেট অথবা প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা :- সত্যিকার অর্থে ডেঙ্গুর সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। উপসর্গ অনুযায়ী রোগের চিকিৎসা করা হয়। বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়, অধিকাংশই মারাত্মক নয়। প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পানি, বিশ্রাম এবং প্রচুর তরল খাবার। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য এসিটামিনোফেন। (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধ। সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা এই। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে এসপিরিন বা ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু (যা খুবই কম হয়ে থাকে) বেশি মারাত্মক। এতে মৃত্যুও হতে পারে। জ্বর, সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। জ্বর কমানোর জন্য বারবার গা মোছাতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো জরুরি। এক্ষেত্রে রোগীকে শিরাপথে রক্তের প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখা শ্রেয়। কারণ এসব রোগীকে কোনও স্বাভাবিক এডিস মশা কামড় দিলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক হয়ে পড়বে এবং তখন মশাটি সুস্থ কোনও ব্যক্তিকে কামড় দিলে সুস্থ ব্যক্তিটিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ :- ডেঙ্গু মশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যা কামড়ায়। অর্থাৎ ভোরে সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধাঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। সুতরাং এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে। সেই সাথে এডিস মশা নির্মূল করে ডেঙ্গুকে প্রতিহত করা যায়। যেসব স্থানে এডিস মশা বাস করে সেই সব স্থানের এডিস মশার আবাস ধ্বংস করে দিতে হবে। তাই দিনের বেলা ঘরে যাতে মশা ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। জমে থাকা পানিতে এরা বংশ বিস্তার করে। ফুলের টব, কৃত্রিম পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, গাছের কোঠর, বাঁশের গোড়ার কোঠর, ডাবের খোসা, বাসার ছাদ প্রভৃতি স্থানে জমে থাকা পানিতে এদের বংশ বিস্তার ঘটে বলে সেখানটায় মশা নিধক ওষুধ ছিটিয়ে দিতে হবে। আর এভাবেই সম্ভব ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা। বাড়ির আশপাশের নর্দমা ও আবদ্ধ জলাশয়ে ওষুধ ছিটিয়ে মশা মারতে হবে। ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। সর্বোপরি জনসচেনতা সৃষ্টি এবং মশা ধ্বংসের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
শিক্ষক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।