পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর মধ্যে আমরা অবস্থান করছি। এর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীও উদ্যাপন করছি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আমরা সতর্ক ও সচেতন হচ্ছি। পরিবেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে বেঁচে থাকার বার্তাও দিচ্ছে মহমারি করোনা। জানি না, কবে আমরা এ মহামারি থেকে মুক্তি পাবো। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় বৃক্ষরোপণের ঋতুতে তাই আমরা অনেকেই এখন বিভিন্ন গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
বৃক্ষ রোপণ করে পরিবেশ সুন্দর রাখার এখনই উপযুক্ত সময়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকীতে সরকার সারাদেশে এক কোটি বৃক্ষের চারা রোপণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। গত ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এ কর্মসূচির উদ্বোধনও করেছেন। এ উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বন বিভাগের মাধ্যমে ৪৯২টি উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের চারা বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই সারাদেশের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করে এর পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি উপজেলায় ২০ হাজার ৩২৫টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হবে। সরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে চারা রোপণ ও বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে বলে হয়তো শিশু-কিশোরদের মাঝে চারা বিতরণ একটু কষ্ট হচ্ছে। তবে গ্রাম পর্যায়ে চারা সরবরাহ করে শিশুদের মাঝে পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণের চিন্তা মাথায় ঢুকাতে হবে। তারা যেন নিজ উদ্যোগে গাছের যত্ন করে তারও ব্যবস্থা করতে হবে।
বৃক্ষরোপণ করলে যেমন প্রকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত হবে তেমনি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তারও ব্যবস্থা হবে। দেশে সরকারিভাবে এক কোটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ এক বিরাট সাহসী উদ্যোগ। এটা সফল হলে দেশে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সরকারি অফিস, রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনা যেখানেই হোক গাছ আমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করবে। খরা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধ্বস এসবের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বলে পরিবেশ হুমকির মুখে। বৃক্ষ আমাদেরকে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে অনেকটা রক্ষা করবে।
দেশের মানুষ পরিবেশ নিয়ে অনেক সচেতন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন বাড়ির আশেপাশে কোনো জমিই যেন পতিত না থাকে। শহরেও আজ বাড়ির ছাদে, টবে বিভিন্নভাবে ফলদ বৃক্ষ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ র্কসূচি এখন সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। মুজিববর্ষে সরকারিভাবে এক কোটি গাছে চারা রোপণের উদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষার সামাজিক আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে।
দেশের আর্থসামাজিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন ও বনায়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কাজে এগিয়ে আসে তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন করে গাছ লাগাতে বা রোপণ করতে হলে প্রয়োজন চারার। সকল ধরণের গাছের চারা সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ, গাছের চারা কোনটা হয় ফল থেকে, কোনটা বীজ থেকে, আবার কোনটা হয় ডাল থেকে কলমের মাধ্যমে। এরুপ চারা সাধারণ মানুষের পক্ষে সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। তাই চারা সংগ্রহের কাজটা সরকারের নিজস্ব বিভাগগুলোকে দেখতে হবে। সরকার যদি চারা সংগ্রহ করে বিতরণ করতে পারে তবে বৃক্ষরোপণ অভিযান একটি আন্দোলনে পরিণত হবে। দেশের বিভিন্ন শিশু-কিশোর সংগঠন এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একটি করে ফলজ, বনজ বা ঔষধি গাছের চারা নিশ্চিত করতে পারলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফলতার সাথে বাস্তবায়ন হবে। সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও এ ব্যাপারে আরও সামনে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন ও উৎসাহিত করতে এনজিওরাও কাজ করতে পারে।
প্রকৃতিকে যদি নিজের আয়ত্বে আনতে হয় তবে বৃক্ষরোপণের বিকল্প কোন পথ আমাদের সামনে নাই। বনাঞ্চল কমে যাওয়ার পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। চারা রোপণের নিয়ম-কানুন ও পরিচর্যা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গাছ লাগানোর জন্য জনমনে চেতনা সঞ্চার করতে হবে। এজন্য রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা, মিনি পর্দা, মাইকে প্রচার, পোস্টার-লিফলেট বিলি ও নাটক-সেমিনার বৃক্ষরোপণ অভিযানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতে জুমার খুৎবায় ইমাম সাহেব কুরআন-হাদিসের আলোকে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
দেশে এখনও অনেক মানুষ আছে যারা গাছ লাগানোকে নিজের নেশা এবং পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আবার কিছু লোক অছে যারা রাতের বেলা গাছ কেটে বন উজাড় করছে। কেউ আবার ক্ষমতার জোরে দিনে-দুপুরেই বনের গাছ কেটে সাবাড় করছে। যারা গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করছে স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের উৎসাহ আরও বাড়বে। ফলে বৃক্ষরোপণে তারা সাহসিকতার সাথে আরও সামনে এগিয়ে যাবেন। বৃক্ষরোপণের জন্য অবশ্য প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পুরস্কারের মান এবং সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। জেলা পর্যায়েও বৃক্ষরোপণে অবদানের জন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। অপরপক্ষে যারা বৃক্ষ নিধনে তৎপর তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তারা দেশ ও পরিবেশের শত্রু । বৃক্ষ নিধনকারী বা এতে সহায়তাকারী যে’ই হোক না কেন তাদের ক্ষমা করা যাবে না।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবী যখন আতঙ্কিত তখন দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এক কোটি গাছের চারা রোপণ ও বিতরণ সত্যি এক সাহসী উদ্যোগ। সরকারের এ সুন্দর উদ্যোগ সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ উদ্যোগ যেন সফল হয় তার জন্য সকলকে সহায়তা করতে হবে। শুধু বৃক্ষ রোপণ ও বিতরণের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না। গাছের পরিচর্যা ও যত্ন নিতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।