পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকালে ডিজিটাল পদ্ধতিই জীবনকে এগিয়ে নেয়ার প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত এক যুগে দেশে যে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটেছে, তার সুফল এখন বিশেষভাবে পাচ্ছে মানুষ। কোথায় না ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতি? যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিচার, ব্যাংকিং ও প্রশাসনিক কাজকর্মসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এই পদ্ধতি ও প্রযুক্তি। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো অর্থনীতিও অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে। তবে সরকারের বাস্তবোচিত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যে অর্থনীতির সেই নাজুক অবস্থা কাটতে শুরু করেছে। অর্থনীতির প্রধান সকল সূচকই এখন ইতিবাচক। বিনিয়োগ, আমদানি, রফতানি, রেমিটেন্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি বাড়ায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর মূলেও ডিজিটালাইজেশনের বিশেষ অবদান রয়েছে। সন্দেহ নেই, আমাদের ইন্টারনেটনির্ভরতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বেড়েছে। ইন্টারনেটে কাজের পরিধি বাড়ায় এর চাহিদা ও গুরুত্বও প্রশ্নাতীতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেটসেবা ব্যহত হওয়া বা সেবাবঞ্চিত থাকার কথা এ মুহূর্তে কল্পনাও করা যায় না। এই বাস্তবতা সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট খেয়ালে আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত রোববার ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে প্রশ্নটি সামনে এসেছে। ওইদিন পটুয়াখালির কলাপাড়ায় মাটি কাটতে গিয়ে শ্রমিকরা দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল কেটে ফেলে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, কেবলের পাওয়ার সাপ্লাই ও অপটিক্যাল ফাইবারে ক্ষতি হয়েছে। বলাবাহুল্য, ইন্টারনেটের শ্লথগতির জন্য এটাই মূলত দায়ী।
দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল, যার ল্যান্ডিং স্টেশন পটুয়াখালির কলাপাড়ায়, সঙ্গতকারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ৪০ শতাংশের মতো ব্যান্ডউইথ এই কেবলের মাধ্যমেই আসে। এ কেবল কর্তনে কতটা ক্ষতি হয়েছে এবং কবে নাগাদ সেই ক্ষতি সারিয়ে কেবল কার্যকর করা যাবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। বিএসসিসিএল’র তরফে বলা হয়েছে, ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। যতক্ষণ বা যতদিন ব্যান্ডউইথ সরবরাহ স্বাভাবিক না হবে ততক্ষণ বা ততদিন ইন্টারনেটের ধীরগতি অব্যাহত থাকবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, একারণে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের যে সমস্যা ও ক্ষতিতে পড়তে হচ্ছে বা হবে, তার দায় কে নেবে? বিএসসিসিএল’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ এবং নিতে হবে। একই সঙ্গে বিএসসিসিএল’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বা কেন্দ্র কি এতটাই অরক্ষিত যে, কেউ সেখানে মাটি কাটতে পারে এবং কেটে ফেলতে পারে কেবলও? এটাই স্বাভাবিক যে, সাবমেরিন কেবলের এই ল্যান্ডিং স্টেশনটি দেখভাল ও তত্ত্বাবধান করার লোকজন সেখানে আছে। তারা তাহলে কী দেখভাল ও তত্ত্বাবধান করছেন? স্টেশনটির এলাকা চিহ্নিত থাকার কথা, উপযুক্ত প্রহরাও থাকার কথা। তা থাকলে এরকম দুর্ঘট ঘটার কথা নয়। বুঝাই যায়, এখানে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি আছে, দায়িত্বে অবহেলা আছে। তাই কোনো অজুহাতেই তারা স্পর্শহীন থাকতে পারেন না। অধিকাংশ পত্রপত্রিকায় বিএসসিসিএল’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের একতরফা বক্তব্যই পাওয়া যাচ্ছে। স্টেশন ও কেবলের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা ছিল, সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি উপযুক্ত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাখে। আমরা আশা করি, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে আগেই। এক্ষেত্রে নিত্য নতুন প্রযুক্তি আসছে এবং তার সংযুক্তি ঘটছে। ডিজিটালাইজেশন দূরকে নিকটবর্তী করেছে। জ্ঞান ও তথ্যপ্রবাহ বিস্তারে, যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায়, সংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ডিজিটাল ব্যবস্থা, পদ্ধতি ও প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এখন ওতপ্রোত। তাই ডিজিটাল বিশ্ব যখন ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে আমরা তখন পিছিয়ে থাকতে পারি না। আমাদেরও সমান তালে পথ চলতে হবে। আমাদের দেশে ডিজিটালাইজেশনের কাজ যতটা বাকী বা অসম্পূর্ণ আছে তা শেষ করতে হবে দ্রুত। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সুবিধা সকলের জন্য সহজ করতে হবে। ইন্টারনেট সেবা নিয়ে অনেক প্রশ্ন গ্রাহকদের রয়েছে। তাদের অভিযোগ শুনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত ও গতিশীল করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অবশ্যই সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশনগুলোর ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি ও কেবলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।