পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলেছেন। বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী অতীতে ইসলাম সম্পর্কে এমন জ্ঞানগর্ভ এবং তথ্যপূর্ণ কথা বলেননি। শেখ হাসিনা শতকরা ১০০ ভাগ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম সম্পর্কে সেই দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্য পড়ে বোঝা যায় যে, তিনি ইসলাম সম্পর্কে ভালো জানেন এবং ধর্মকে বোঝার চেষ্টা করেন। গত বুধবার রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্পে ‘হজ যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও হজ কার্যক্রম ২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন। সকলেই বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমন কথা মাঝে মাঝেই বলেন এবং হজ ক্যাম্পের উদ্বোধনী বক্তৃতাতেও বলেছেন। তিনি আরো বলেন, কিছু বিপথগামী যুবক নিরীহ মানুষ হত্যা করে ইসলাম ধর্মকে হেয় করছে। যারা বিপথে যেয়ে খুন-খারাবি করে, মানুষ হত্যা করে আমাদের পবিত্র ধর্মকে হেয়-প্রতিপন্ন করছে- তাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতিকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ঐ অনুষ্ঠানে তিনি এমন একটি কথাও বলেছেন যে কথাটি সচরাচর কেউ বলে না এবং যে কথাটি গভীর চিন্তার উদ্রেক করে। তিনি বলেছেন, তারা (জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা) মানুষ খুন করে কী অর্জন করছে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমাদের ধর্ম আমরা যারা পালন করি, তাদের জন্য এই পৃথিবীতে বসবাস করাটা কঠিন করে দিচ্ছে। তারা আমাদের ইসলাম ধর্ম; যে ধর্ম সব থেকে শান্তির বাণী বলেছে, সহনশীলতার কথা বলেছে, সকল ধর্মের অধিকারের কথা বলে গেছে, সেই ধর্মটাকেই আজকে এভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করছে আর কী অর্জন করছে- সেটাই আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দুঃখ লাগে খুব, খুব কষ্ট লাগে, যখন আমি দেখি কিছু বিপথগামী ঠা-া মাথায় নিরীহ মানুষ হত্যা করে। আমি বলব, যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে,তারা ইসলাম ধর্মের কোনো ভালো কাজ করছে না বরং ইসলাম ধর্মটাকে অন্যের কাছে হেয় করে দিচ্ছে। অন্যদের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একটা ভীতি সৃষ্টি করে দিচ্ছে। আমরা আগেই বলেছি যে, প্রধানমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে ইসলাম সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটি বুঝে শুনেই বলেছেন। তাই তার ঐ বক্তব্য শুধুমাত্র তার দলের লোকদের মধ্যেই নয়, সর্বসাধারণ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই যে, প্রধানমন্ত্রীর আশে পাশে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন যারা ইসলাম বিদ্বেষী বলে সাধারণ মানুষের পারসেপসন রয়েছে। আজ একটি নির্মল আলোচনার জন্য ঐসব মহল বা ব্যক্তির নাম বলবো না। নাম না বলেও একথা বলা যায় যে, এসব লোকের অবাঞ্ছিত উক্তির ফলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ইসলামপ্রেমিদের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আরও অবাক লাগে যখন দেখি যে, এক শ্রেণীর উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারও মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলেন যে কথা শুনলে বোঝা যায় যে, ইসলাম সম্পর্কে তারা কতখানি অজ্ঞ। তাদের সেই অজ্ঞতা ঢাকার জন্য তারা মাঝে মাঝে এমনভাবে কথা বলেন যেন মাঝে মাঝে মনে হয় যে, ইসলামের ব্যাপারে তারা একেক জন মুফতি। আবার এমন কিছু মাওলানা আছেন যাদের ইসলাম সম্পর্কে কতদূর জ্ঞান আছে আমরা জানি না। কিন্তু তারা ইসলামকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেন, যেসব ব্যাখ্যা শুনলে মনে হয়, তারা ইসলামের একটি নতুন সংস্করণ বানাচ্ছেনÑ যে সংস্করণের নাম দেয়া যেতে পারে দরবারি ইসলাম। এসব অফিসার বা ব্যক্তি, যারা প্রধানমন্ত্রীর আশে পাশের লোক, তাদের উচিত প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ভালোভাবে পড়া এবং তার মর্মার্থ অনুধাবন করা। প্রধানমন্ত্রী তার সংক্ষিপ্ত ভাষণে ইসলামকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তাদেরও উচিত ইসলামকে একইভাবে উপস্থাপন করা। কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রীর সুরেই কথা বলা।
প্রধানমন্ত্রীর এমন যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের পরেও দেখা যায় যে, মাওলানা নামধারী কোনো কোনো ব্যক্তি কওমী মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও টেক্সট বুক বোর্ড কর্র্তৃক প্রকাশিত একটি পাঠ্য পুস্তকের নাম করে তিনি ঐ পুস্তকের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন। অথচ এই পুস্তকটি প্রকাশ করেছে বর্তমান সরকারেরই অধীনস্থ স্কুল টেক্সট বুক বোর্ড। পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার সময় বলে যে, তার কাছে অনেক ‘জিহাদী’ পুস্তক পাওয়া গেছে। অথচ জিহাদী পুস্তক নামে ঐসব বই যখন টেলিভিশনে দেখানো হয় তখন অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় যে, ঐসব পুস্তকের নাম হলো, ‘ইসলামের মর্মবাণী’ ‘ইসলামের দাওয়াত’, ‘ইসলামে নারীর অধিকার’ ইত্যাদি। অর্থাৎ ইসলামী পুস্তক হলেই সেইগুলোকে জিহাদী পুস্তক বলে পুলিশ আখ্যায়িত করছে। পুলিশের এসব বক্তব্য এবং কার্যক্রমের ফলে জনগণের একটি বিপুল অংশ মনে করছে যে, পুলিশ বুঝি ধর্ম সম্পর্কে বৈরী হয়ে উঠছে। সরকার প্রধান হিসেবে এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পলিটিশিয়ান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয় অনুধাবন করেন যে, পুলিশের এই ধরনের অবিবেচনা প্রসূত কার্যকলাপের দায়-দায়িত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকারের ওপরেই বর্তায়। পুলিশের কার্যক্রমের ফলে ‘জিহাদ’ শব্দটির প্রতি এলার্জি সৃষ্টি করা হচ্ছে। জঙ্গিরা যে মানুষ হত্যা করছে সেটি কোনোক্রমেই জিহাদ হতে পারে না। অনৈসলামিক কার্যক্রম, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং জাতীয় স্বার্থের ওপর আঘাত হানার বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করার নাম জিহাদ। হলি আর্টিজান বা শোলাকিয়ায় জঙ্গিরা যেটা করেছে সেটি জিহাদ তো নয়ই বরং সেটি জিহাদের পরিপন্থী কাজ। দাড়ি রাখা, টুপি ও কল্লিদার পাঞ্জাবী পরা এবং গলায় লাল ডোরাকাটা গামছা ঝুলালেই সেই ব্যক্তি ইসলামী জঙ্গি, সন্ত্রাসী বা জিহাদী, এমন ধারণা পুলিশকে পরিত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তো হিজাব পরেন। কাজেই হিজাব ও বোরকা পরলেই কেউ নারী জঙ্গি হবেন, এমন ধারণা আইন-শৃংখলা বাহিনীর মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়া উচিত। যারা সরকারের আশে পাশে আছেন তারা এবং আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকেরা এসব কথা যদি মনে রাখেন এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি মেনে চলেন তাহলে আমাদের সমাজদেহ থেকে অনেক অশান্তি এবং অস্থিরতা দূর হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।