Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই বিমানবন্দর উন্নয়নে নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে এই বিলম্ব কেন?

| প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে এবং কবে নাগাদ শেষ হবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদনের পর দেড় বছর চলে গেছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত ঠিকাদারই চূড়ান্ত করতে পারেনি। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের পর প্রায় তিন বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো টেন্ডার ডকুমেন্টই তৈরি করতে পারেনি। ইতোমধ্যে প্রকল্প ব্যয় ১৩,৬১০ কোটি টাকা থেকে আরো ৬৯৮৮ কোটি টাকা বেড়েছে। বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সালে বর্ধিত করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকল্প দুটি অত্যন্ত জনগুরত্বসম্পন্নই নয়, এর সঙ্গে অর্থনীতিরও একটা নিকট সম্পর্ক রয়েছে। পর্যটননগরী কক্সবাজারে আর্ন্তজাতিক মানের একটি বিমানবন্দর থাকার আবশ্যকতা প্রশ্লাতীত। সরকার এই বিমানবন্দর উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নিয়েছে রানওয়ে সম্প্রসারণ তার একটি। অন্যদিকে প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের টার্মিনাল সংখ্যা বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। টার্মিনাল সুবিধা বাড়লে বিমানবন্দরের সক্ষমতা ও যাত্রীসেবা বাড়বে, যার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এহেন দুটি জরুরি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত বা অনিশ্চিত হয়ে থাকা দুর্ভাগ্যজনক। এটা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন সক্ষমতার দুর্বলতা এবং অযোগ্যতাই প্রমাণ করে।

২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন করে। অথচ এ যাবৎকালে মন্ত্রণালয় টেন্ডার প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারেনি। টেন্ডার ডকুমেন্টে অসঙ্গতির অভিযোগে ক্রয়সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি ২৮ জুলাই মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকৃত ১৯৯৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন না করে প্রধানমন্ত্রীর আরো রিভিউয়ের জন্য ফরওয়ার্ড করছে। এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ইমপ্লিমেন্টেশন, মনিটারিং ও ইভালুয়েশন বিভাগ টেন্ডার ইভারলুয়েশন প্রসেসে কিছু ত্রুটির সন্ধান পায়। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইংরেজি দৈনিক নিউএজকে জানিয়েছেন, তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, যদি রিটেন্ডারিংয়ের সিদ্ধান্ত হয় তবে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন আরো এক থেকে দু’বছর পিছিয়ে যেতে পারে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বিষয়টির দ্রুত ও ত্বরিৎ সমাধান হতে পারে যদি উভয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একসঙ্গে বসেন। তা না করে তারা রশি টানাটানি করছেন, যা কোনোভাবেই অভিপ্রেত হতে পারে না। হযরত শাহজালালা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় ট্রর্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন হয় ২০১৭ সালে। আজ পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতিই হয়নি। আমাদের দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয়বৃদ্ধি অতি সাধারণ ঘটনা। প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অধিক সময় ব্যয় হয়। এতে প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হয়। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং বৃদ্ধির কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। এতে জনগণের ট্যাক্সের টাকা কিংবা বৈদেশিক ঋণের ব্যাপক অপচয় হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সন্তোষজনক তো নয়ই, অনেক ক্ষেত্রে হতাশাজনক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সেসব প্রকল্পের বাস্তবায়নেও তেমন গতি নেই। বাস্তবায়নে ধীরগতি ও সময়হরণে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাস্তবায়নে গতি আনার তাকিদ দিয়েছেন। তার এ ক্ষোভ ও তাগিদ সুফল এনে দেয়নি। প্রকল্প প্রণতা ও বাস্তবায়নে দক্ষতার ঘাটতি এ জন্য প্রধানত দায়ী। প্রকল্প প্রণয়নের দায়িত্ব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের। বাস্তবোচিত ও নিখুঁত প্রকল্প প্রনীত না হলে তার ভবিষ্যৎ যেমন নিশ্চিত হয় না, তেমনি তার বাস্তবায়নও ত্রুটিমুক্ত হয় না। সময় ও ব্যয়বৃদ্ধি বাস্তবায়ন এজেন্সির অদক্ষতার জন্যই হয়ে থাকে। এর সঙ্গে দুর্নীতিরও সংযোগ আছে। তত্ত্বাবধায়ক সময়কারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কস্টলি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন এজেন্সিগুলোর দক্ষতা বাড়েনি। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে আমারাও একমত। সরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও জনকল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছে। যথাসময়ে, নিখুত ও মানসম্পন্নভাবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন ও উচিত। আর সরকারকেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো প্রকল্প হতে হবে সুপ্রণীত। আর তার বাস্তবায়ন হতে হবে তরিৎ ও যথাযথ। এজন্য উভয় ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে সৃজনশীলতারও নৈকট্য থাকতে হবে। আমারা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিবেন, দেবেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন