পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীন ভারত নেপাল হিমালয়ে অতিবৃষ্টি : ভারতের বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দেয়ায় উজান থেকে প্রচন্ড ঢলের চাপে নদীভাঙনের তান্ডব
একের পর এক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত দেশ। করোনা মহামারীকালে ভয়াবহ বন্যার কবলে নিঃস্ব ও দিশেহারা অগণিত মানুষ। সর্বনাশ হচ্ছে ফল-ফসল, গবাদি পশু-পাখি, মৎস্যচাষের ঘের-পুকুর-জলাশয়, ক্ষেত-খামার। গ্রামীণ অর্থনীতির বিপর্যয়ে বড়সড় বিরূপ প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। প্রায় দেড় মাস ভয়াবহ বন্যার পানি সবেমাত্র নামতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রধান নদ-নদীর উজানভাগে ভারী বর্ষণ অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে। বর্তমানে তিব্বতসহ চীন, ভারত, নেপাল, ভ‚টান, গাঙ্গেয় অঞ্চল ও হিমালয় পাদদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে বাংলাদেশেও অতিবৃষ্টির ঘনঘটা রয়েছে।
চলতি সপ্তাহ থেকেই প্রধান দুই অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতে আবারও পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ, পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ু নেটওয়ার্ক-সংস্থাসমূহের পূর্বাভাসে এবং বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এ আভাস পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় চলতি আগস্ট এবং আগামী সেপ্টেম্বর (ভাদ্র) মাস পর্যন্ত চলমান বন্যা প্রলম্বিত হয়ে স্মরণকালের দীর্ঘতম বন্যার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে আগাম প্রস্তুতির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ইতিহাসে ১৯৯৮ সালের বন্যা দীর্ঘতম সময় ৬৩ দিন স্থায়ী হয়। এবার ৩৩ জেলায় বন্যা আগামী সপ্তাহে দেড় মাস অতিক্রম করবে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্য ও বৃহত্তর ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল হয়ে ভাটি পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকা থেকে বানের পানি এখনও তেমন নামেনি। তাছাড়া সমুদ্রে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি কেটে গেলেও বাংলাদেশের উপক‚লভাগ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল ও ফুলে-ফুঁসে থাকায় ভাটি হয়ে বানের পানি হ্রাস ব্যাহত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে আবারো লঘুচাপ-নিম্নচাপ তৈরির ঘনঘটা রয়েছে। এরফলে বানের পানি হ্রাস থমকে যেতে পারে।
বন্যার পানি-হ্রাস বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রায় দুই মাস যাবৎ চলছে সর্বনাশা নদীভাঙনের তান্ডব। নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে জনবসতি, ফসলিজমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও অসংখ্য স্থাপনা। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে পানিদূষণ, বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কটসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধি এবং অপুষ্টিতে ভুগছেন অনেকেই। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে খাদ্য, ওষুধ-পথ্য, গৃহনির্মাণ সামগ্রীসহ ত্রাণ তৎপরতা খুবই অপ্রতুল।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (চুয়েট) আবহাওয়া-জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আখতার মল্লিক গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চীন, ভারত, নেপাল, ভ‚টান, হিমালয় পাদদেশসহ বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরফলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা বিরাজ করছে। এবার মৌসুমী বায়ু আগাম সক্রিয় হয়েছে। আবহাওয়ার ‘লা-লিনা’ (বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিকারী) অবস্থার দিকে পরিবর্তন সূচিত হওয়ায় এ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেশের নদ-নদীগুলোর যে গতিপথ ও গভীরতা, সেই তুলনায় উজান থেকে অধিকমাত্রায় আসছে পানির চাপ। ভারতে ফারাক্কাসহ ছোট-বড় অনেকগুলো বাঁধ-ব্যারেজ রয়েছে। বন্যাকালীন সেগুলো খুলে দেয়ায় উজানের ঢলের প্রচÐ চাপে নদ-নদীসমূহের দু’কুলে তীব্র ধাক্কা পড়ছে। ভয়াবহ নদীভাঙনের এটি বড় কারণ।
গত সপ্তাহে আবহাওয়া বিভাগ দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানায়, চলমান দীর্ঘস্থায়ী ভয়াবহ বন্যার আঘাত না কাটতেই চলতি আগস্টের শেষ দিকে (ভাদ্র মাসে) দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল (বৃহত্তর সিলেট, হাওড় এলাকা) ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে (বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ফেনী) আবারো বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানভাগ উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মিজোরাম, সিকিম অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে এ বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভারতের এসব অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। তাছাড়া নেপাল ও এর সংলগ্ন ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় বন্যার আলামত দেখা দিচ্ছে।
অন্যদিকে, পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী দশ দিনের অন্তবর্তীকালীন গতকাল সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং গঙ্গা-পদ্মায় চলতি সপ্তাহ থেকে পুনরায় পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এ অবস্থায় বৃহত্তর ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে আরও জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল আগামী সোমবার পর্যন্ত কমতে পারে। এরপর সামনে দুয়েকদিনে ফের বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে। এরফলে সোমবার পর্যন্ত কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতলও বাড়তে পারে। আগামী দু’তিন দিন রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ ও শরিয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানির সমতল অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৭ দিন নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানির সমতল বাড়তে পারে। জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা আগামী ৭ দিন স্থায়ী হতে পারে। ডেমরা পয়েন্টে বালু নদী, মিরপুর পয়েন্টে তুরাগ নদী এবং রেকাবী বাজার পয়েন্টে ধলেশ^রী নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এরফলে ঢাকা জেলায় বন্যা আগামী ৭ দিন স্থায়ী হতে পারে। তবে ফের উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা ও এর সঙ্গে যুক্ত নদ-নদীসমূহের পানির সমতল ও প্রবাহ বেড়ে গেলে ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চলে ও ভাটিতে বন্যার অবনতি ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের উজানভাগে ভারতে ভারী বর্ষণের কারণে মূল অববাহিকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) নদ-নদীসমূহে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধান নদ-নদীগুলোর উৎস প্রধানত ভারতে। তবে উজানের প্রবাহ সম্পর্কে পূর্বাভাস মিলছে না। ভারতের তরফে মাত্র ৩ থেকে ৪ দিন আগে এ সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত আসে। তাও আবার ৪টি নদীর উজানের মাত্র ৮টি পয়েন্টের তথ্য। সেগুলো হচ্ছে, এক. ব্রহ্মপুত্র-যমুনার উজানভাগের অববাহিকায় ৪টি পয়েন্ট, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের গুয়াহাটি, পান্ডু গোয়ালপাড়া ও ডুবড়ি। দুই. গঙ্গা অববাহিকায় ২টি পয়েন্ট, উজানের ফারাক্কা এবং সাইফগঞ্জ (বিহার)। তিন. সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উজানে বরাকের শিলচর। এবং চার. তিস্তার উজান ভাগের একটি পয়েন্টের। এরফলে বাংলাদেশের পক্ষে সময়মতো বন্যা প্রস্তুতি ও সতর্কতা গ্রহণ সম্ভব হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।