Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কমছে না ঢাকার নিম্নাঞ্চলের পানি

৩৩ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫ লাখ মানুষ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের পানি কমছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। বানভাসিরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। পানি কমলেও বন্যার্ত মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদীতে ভেঙে গেছে শহররক্ষা বাঁধ। এতে ভাঙনের হুমকির মুখে শহরের শত শত স্থাপনা। এ ছাড়া পদ্মা-মেঘনার ভাঙনে হুমকির মুখে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের তথ্য মতে, চলমান বন্যায় ৩৩ জেলায় প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সাড়ে ১০ লাখের বেশি পরিবার পানিবন্দি। বন্যায় এ পর্যন্ত ৪১ জন মারা গেছেন।

দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এতে মধ্যাঞ্চলে বাড়ছে পানির চাপ। ফলে মধ্যাঞ্চলে জমা হওয়া পানি নামতে পারছে না। বিশেষ করে ঢাকা জেলাসহ রাজধানীর আশপাশের পানি গত কয়েক দিন ধরে স্থিতিশীল আছে। পানি কমার বিদ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী তিন-চার দিনে বেশ কিছু জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে। তবে ৯ আগস্টের পর এক সপ্তাহে ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রায় এক হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। এতে ১২ আগস্টের দিকে উত্তরাঞ্চল ফের বন্যাকবলিত হতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে গরমের অনুভ‚তি বেড়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত নেই। তবে ৯ আগস্টের পর ১৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ফলে বিদ্যমান ধারায় কয়েক দিনে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি বেশ নেমে গেলেও ১২ আগস্টের দিকে ফের বন্যা হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা ধরে বানের পানি নামছে। আরও ৭২ ঘণ্টা এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকার চার দিকে নদ-নদীতে পানি স্থিতিশীল রয়েছে। এ মুহূর্তে দেশের ১৫টি প্রধান নদী অন্তত ২৪ স্থানে বিপদসীমার ওপরে বইছে।
যমুনার পানি স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতের প‚র্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে নতুন করে আর আসেনি বানের পানি। ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি যমুনায় নামতে শুরু করে। এতে যমুনার পরিস্থিতি আগের দিনের মতোই স্থিতিশীল থাকে। গতকাল অবশ্য উভয় নদীর পানিই নামতে শুরু করেছে ভাটির দিকে। অপর দিকে ভারত থেকে পানি না আসায় কুশিয়ারা বাদে আপার মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীগুলোতে পানির সমতল স্থিতিশীল ছিল। ঈদের দিন থেকে শুরু হয় এ অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি। গতকাল পর্যন্ত একটানা পাঁচদিন পানি নামছে এ অঞ্চলের বন্যাকবলিত জেলা থেকে।

চাঁদপুর থেকে বিএম হান্নান জানান, প‚র্ণিমার প্রভাব কেটে গেলেও দক্ষিণা বাতাসে পদ্মা-মেঘনা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। এ কারণে চাঁদপুরে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ। উত্তাল মেঘনার প্রভাবে চাঁদপুর সদর উপজেলার আলুর বাজার, হাইমচর উপজেলার ঈশানবালা এবং শহর রক্ষা বাঁধের মোলহেড সংলগ্ন পাইলট হাউস এলাকায় ভাঙন মোকাবিলায় বালি ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় সবক’টি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খাদ্য সঙ্কট নিয়ে বিপাকে রয়েছে জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের সাড়ে ৩ লাখ বানভাসি মানুষ। জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে ৩২টি পয়েন্টে ৭ কিলোমিটার নদী ভেঙেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৫০০ বসতভিটা, ৫টি স্কুল। ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও রাজারহাটের বুড়িরহাট স্পার, সদরের সারোডোবের বিকল্প বাঁধ বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক পরিবার।

জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বন্যার পানি কমায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বানভাসি মানুষ। দীর্ঘ এক মাসের বন্যায় লন্ডভন্ড করে দিয়েছে তাদের বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট। বন্যাকবলিত এলাকায় অধিক সময় ধরে কোন কাজ না থাকায় হাতে টাকা না থাকায় খাবার যোগাড় করতে পারছে না। খাবার না থাকায় এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। তিন দফা বন্যায় জেলার প্রায় আড়াই লাখ পরিবারের ১০ লাখ মানুষ এক মাসের অধিক সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে নুরুল আবছার তালুকদার জানান, উপক‚লের রায়পুর ইউনিয়নে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি বেড়ে ৩ গ্রামের প্রায় ৫ হাজারেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এসময় জোয়ারের পানিতে বসতভিটা, ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। গতকাল বেড়িবাঁধের বার আউলিয়া এলাকার খোলা অংশ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ যথা সময়ে বেড়িবাঁধের মাটির কাজ শেষ না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, ৩ দফা বন্যা হয়ে গেছে সিলেট বিভাগে। বন্যার সৃষ্ট অনিষ্টে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ম দু’দফা বন্যায় প্রায় ২৮ কোটি টাকা ও ৩য় দফা বন্যায় ক্ষতির আশঙ্কা ২২ কোটি টাকার।
কৃষি বিভাগের মতে, প্রথম দু’দফা বন্যায় এ অঞ্চলে ২৭৬০ হেক্টর আউশ ধান, ১১৬ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা এবং ৫৬ হেক্টর জমির শাক-সবজিসহ ২৯৩১ হেক্টর জমি পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৮ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে ২১ হাজার ৮৫৭ জন কৃষক হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া চলমান বন্যায় এখনও পানির নিচে রয়েছে ২৮১৫ হেক্টর আউশ ও বীজতলা।

৩য় দফা বন্যায় ২৬৭৫ হেক্টর আউশ ধান ও ১৪০ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা রয়েছে নিমজ্জিত। পানি কমতে চললেও সিলেট অঞ্চলে ফসলের ৫০ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বন্যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মজুমদার মো. ইলিয়াস জানান, বন্যা পরিস্থিতি শেষ না হলে ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে না। গত এক মাসে এ অঞ্চলে দু’দফা বন্যায় ফসলের প্রায় ২৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে প্রেরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ