Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা-বন্যায় থামেনি ঈদ আনন্দ ও কোরবানি

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২০, ৩:৪৮ পিএম

মহামারি করোনা ও উজানের পানিতে সৃষ্ট বন্যা কোনরূপ থামাতে পারেনি ঈদ আনন্দ কোরবানি। ধারণা থেকে আশঙ্কা করা হয়েছিল করোনা ও বন্যার কারণে মানুষের মনে শান্তি নেই আর্থিক অবস্থাও ভালো নয় তাই ঈদ আনন্দ কোরবানি তেমন হবে না। কিন্তু বাস্তবে সবকিছু ছাপিয়ে করোনার ভয়কে জয় করে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। কোরবানি মোটেও কম হয়নি। কোরবানিকে ঘিরে অর্থনৈতিক লেনদেন বেড়ে যায় বহুমাত্রায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আব্দুল জব্বার শিকদার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, করোনা ও বন্যার কারণে এবারই প্রথম কোরবানির পশুহাট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পর্যন্ত মিটিং হয়েছে। এর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে মিটিং হতো। প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে কোরবানির পশুহাটে বেচাকেনা হয়েছে। পশুহাটে জনসমাগম এড়াতে অনলাইন বেচাকেনার ব্যবস্থা করা হয়। দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার গরু ও ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তত রাখা হয়েছিল। গতবার এর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬ লাখ গরু ও ছাগল। এবার তুলনামূলক বেশি হয়েছে।
দেশের চিত্র, শহর ও গ্রামে ছিল ইতিহাসে এই প্রথম ভিন্ন কোরবানি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদগাহের বদলে মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় হয়েছে। মসজিদের বাইরেও শহরের বড় বড় ফ্লাটে এবং গ্রামের ফাঁকা ময়দানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঈদের জামাত হয়েছে। সে এক অভূতপুর্ব ব্যতিক্রম দৃশ্য।
দৈনিক ইনকিলাবের ব্যুরো থেকে পাঠানো চিত্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উল আযহা উদযাপিত হয়েছে। দারুণ মানসিক শক্তি নিয়ে যে যার সাধ্যমতো গরু ও ছাগল কোরবানি দিয়েছেন।

চট্টগ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উল আযহা উদযাপন
চট্টগ্রাম ব্যুরো : করোনাকালেও উৎসবমুখর পরিবেশে বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদ উল আযহা উপযাপিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদের জামাত শেষে চাটগাঁবাসী মহান আল্লাহর সন্তোষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি দেন। এরপর গরীব, মিসকিন অসহায় মানুষের মাঝে কোরবানির গোশত বিলি বণ্টন করেন তারা। আত্মীয় স্বজন পাড়া-প্রতিবেশিদের মাঝেও গোশত বিতরন করেন নগরবাসী। চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী পরিবারে একাধিক পশু কোরবানি এবং আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে কোরবানির পশু উপহার পাঠানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিলো না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক ইনকিলাবকে বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। গতবার সাত লাখ ৩৫ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ কোরবানি হয়। এবার এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি ছিলো। আগামী দুই একদিনের মধ্যে কত পশু কোরবানি হয়েছে তার হিসাব চূড়ান্ত করা যাবে।
তিনি বলেন, এবার চট্টগ্রামের কৃষক ও খামারিদের কাছে প্রায় পৌনে সাত লাখ গবাদি পশু মজুদ ছিলো। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু এসেছে। তবে শেষদিন নগরীর পশুরহাটে কিছুটা সঙ্কট দেখা দিলেও গ্রামের হাটে পশুর ঘাটতি ছিলো না।

রাজশাহীতে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ
রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহীতে ধর্মীয় উৎসবমুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ নামাজ আদায় ও স্বাদ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে কোরবানিও করেছে।
কোরবানি গোশতের জন্য অসহায় গরীব দুখীরা বাড়ি-বাড়ি ছুটাছুটি করে। বরাবরের মত এবারও বিকেলে নগরীর বাসটার্মিনাল, রেলস্টেশন, কামরুজ্জামান চত্তর রেলভবনের সামনে বসেছিল কোরবানির মাংসের বাজার। ভিড়ও মন্দ ছিলনা। নিম্নবিত্তরা সংগৃহীত মাংস নিজেদের জন্য খানিকটা রেখে বাকিটা বিক্রি করে এসব স্থানে। অনেক ক্রেতা ছিল পাঁচমিশালি মাংসের স্বাদ নেয়ার জন্য এসব কিনে।

যশোর অঞ্চলে করোনার ভয়কে জয় করে শহর গ্রামে কোরবানি
যশোর ব্যুরোঃ করোনাভাইরাস ঈদের আনান্দ থামাতে পারেনি। বরং এবার কোরবানিতে শহর ও গ্রামে ছিল ভিন্ন দৃশ্য। আনান্দঘন পরিবেশে প্রত্যেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে কোরবানি দেন। ঈদের নামাজ আদায়েও ছিল চিরচেনা দৃশ্যের অনেকটাই উল্টোটা। ঈদগাহর বদলে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় হলেও সেটি ছিল অন্যরকম। কল্পনাতীত উপস্থিতি এবং সুন্দর পরিবেশে দূরত্ব বজায় রাখেন।

নোয়াখালি অঞ্চলে ঈদ আনন্দ ও কোরবানি
নোয়াখালী ব্যুরো : করোনাভীতি উপেক্ষা করে বিপূল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য পরিবেশে নোয়াখালীতে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিটি মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এবারের ঈদে জেলার বাহিরে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করে। তবে করোনার কারণে প্রবাসীরা বাড়িতে আসতে পারেনি। উল্লেখ্য, অন্যান্য বিগত বছরগুলোতে ঈদের সময় লক্ষাধিক প্রবাসী দেশ পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতো।

দক্ষিণাঞ্চলে ঈদকে ঘিরে অর্থনীতি চাঙ্গা
বরিশাল ব্যুরোঃ ঈদ উল আজহাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শেষ মুহুর্তে কিছুটা চাঙ্গা
হয়ে ওঠে। কোরবানির পশুহাট থেকে শুরু করে বেশকিছু ব্যবসা-বাণিজ্যেও কিছুটা গতি ফিরে আসে।
গতবছরের চেয়ে কোরবানির হার অন্তত ৪০ শতাংশ হ্রাস পাবার আশংকা করা হলেও শেষ দিকে অনেকেই আবার কোরবানি করার উদ্যোগ নেয়।

করোনার মধ্যেও স্বাভাবিক ঈদ বগুড়ায়
বগুড়া ব্যুরো : করোনার ভয়কে উপেক্ষা করেই বগুড়ায় অন্যান্য বছরের মতই স্বাভাবিকভাবে উদযাপিত হল পবিত্র ঈদ উল আজহা।
সরকারি নির্দেশনার কারণে এবার নির্ধারিত ঈদগাহ সমূহের পরিবর্তে প্রত্যেকপাড়া মহল্লার মসজিদগুলোতে অনুষ্টিত হয় ঈদ জামাত। মুসল্লিদের ব্যাপক ও প্রাণবন্ত উপস্থিতির কারণে মসজিদগুলোতে ২/৩ এমনকি কোনো স্থানে ৪টি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম দিকে কোরবানির পশুহাট কোথায় বসবে, কিভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে তা’ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ধর্মিয় চেতনা ও আবেগ এবং মানবিধ বোধ থেকে মানুষ এবার প্রচুর সংখ্যক পশু (গরু, ছাগল, ভেড়া ) কোরবানি দিয়েছেন।

ময়মনসিংহে ঈদ উৎসব
ময়মনসিংহ ব্যুরোঃ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়েই নামাজ আদায় ও পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলিম স¤প্রদায়ের বৃহৎ এ উৎসব পালন করা হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কোরবানির আমেজ হারেনি সিলেটে
সিলেট ব্যুরোঃ করোনার অকল্পনীয় বিপর্যকর ধাক্কাও, দমাতে পারেনি সিলেটে পবিত্র ঈদ-উল-আযহার উৎসব। প্রবাসী অধ্যূষিত সিলেটের গ্রাম-শহরে ছিল পুরোদমে আমেজ। পশু কোরবানি নিয়ে মানুষের ছিল পূর্ব প্রস্তুতি।
ঈদের জামাতগুলোতে ভিড় ছিল মুসল্লীদের। শহরের মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায়ে দৃশ্য দেখা গেলেও গ্রামঞ্চলে পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল পূর্বেকার মতো। নির্লিপ্তভাবে নামাজে অংশ নিয়েছেন মুসল্লীরা। আবহাওয়া নেতিবাচক হওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও ঝড়োবৃষ্টির হয়নি। দিনভর রোদ্দুর ছিল পরিবেশ। ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকায় ঘাম ঝরেছে মানুষের শরীরে। ঈদের নামাজে করোনার পরিস্থিতি উত্তরনে মোনাজাত করেছেন ইমাম ও খতিবরা।

খুলনায় ঈদ উদযাপন
খুলনা ব্যুরোঃ খুলনায় যথাযগ্যে মর্যাদায় পবিত্র ঈদুল আজাহা উদযাপিত হয়েছে। এবার খুলনায় অতীতের তুলনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। করোনার কারণে এবার পশু কোরবানি অর্ধেকে নেমে আশার আশংকা করেছিল পর্যাবেক্ষক মহল। কিন্তু পশুর দাম কম থাকার কারণে এ অঞ্চলের ধর্ম প্রান মানুষ পর্যাপ্ত সংখ্যাক পশু কোরবানি করে। যা এ মহামারী করোনার সংকটকালীন মুহূর্তে রেকর্ড সংখ্যক বটে। গতকাল মানুষের মাঝে ব্যাপক উসাহ উদ্দিপনা লক্ষ্য করা গেছে।

কক্সবাজারেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে ঈদ উদযাপন
কক্সবাজার ব্যুরো : করোনাকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে কক্সবাজার জেলায় ধর্মীয়ভাব গাম্ভীর্যে উদযাপিত হয়েছে মহিমান্বিত ঈদুল আযহা।
কক্সবাজার শহরের প্রধান প্রধান মসজিদ ও উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল আজহার জামায়াত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ আনন্দ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ