Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ওরা ঘাম ঝরাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘আমাদের চাকরি নেই, বেতন নেই, বোনাসও নেই। ঈদ তো আছে, সংসারে ছেলেমেয়ে আছে। তাদের নতুন কাপড় দিতে হবে। এই খরচ যোগাতেই রিকশা টানছি।’ এভাবে রিকশা চালানোর উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন আজিজ উদ্দিন (৪৫)। গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরে তার বাড়ি। এক মাস আগে চট্টগ্রাম নগরীতে আসেন তিনি। উদ্দেশ্য রিকশা চালানো।
এক মাস রিকশা চালিয়ে যা আয় হবে তা নিয়ে ঈদের আগেই বাড়ি ফিরে যাবেন। সাথে নিয়ে যাবেন পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন কাপড়। কুয়াকাটা থেকে এসে মহানগরীতে রিকশা চালাচ্ছেন মোঃ মোস্তফা। ৫ম শ্রেণি পাস এ কিশোর জানালেন রোজার মাসে ঈদ বাজারের যাত্রী টানতে রিকশা নিয়ে নেমেছে সে। চাঁদ রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা পাবে তা নিয়ে বাড়ি যাবে। বাড়িতে রয়েছে তার বিধবা মা ও তিন ভাই-বোন। গ্রামে কৃষিকাজ করে সে। মাঝেমধ্যে গ্রামের রাস্তায় রিকশাও চালায়। এক মাস আগে চট্টগ্রাম শহরে এসে একটি রিকশা নিয়ে যাত্রী টানছে সে। গাইবান্ধার আজিজ আর কুয়াকাটার মোস্তফার মতো অসংখ্য নতুন রিকশা চালক এখন চট্টগ্রামে। যারা মাহে রমজান উপলক্ষে নগরীতে রিকশা চালাতে এসেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। এরা মৌসুমি রিকশাচালক হিসাবে পরিচিত। পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটাতে আর ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ওরা ঘাম ঝরাচ্ছে রাস্তায়। অতিরিক্ত রিকশার ঢল নেমেছে নগরীতে। ট্রাফিক পুলিশের হিসাবে এই সংখ্যা অন্তত ৫০ হাজার। নগরীতে বৈধ রিকশা ৭৫ হাজার। সমান সংখ্যক অবৈধ রিকশা আছে। আর ঈদ বাজারকে সামনে রেখে নগরীতে আরও প্রায় ৫০ হাজার রিকশা নেমেছে। এসব রিকশার চালকেরা মৌসুমি চালক।
প্রতিবছর রোজার আগে বা রোজার শুরুতে চট্টগ্রামে হাজার হাজার মৌসুমি রিকশা চালক আসে। মহানগরীর আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে রিকশা নিয়েই শহরে চলে আসে। আবার অনেকে নগরীর রিকশার গ্যারেজগুলো থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালায়। ৬০ লাখ মানুষের এই মহানগরীতে শতাধিক ঈদ মার্কেট জমে উঠেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। লেগে আছে মার্কেটমুখী মানুষের ভিড়। মহানগরীর আশপাশের উপজেলা এমনকি জেলা শহর থেকেও ঈদের কেনাকাটা সারতে অনেকে চট্টগ্রাম নগরীতে আসছেন।
ঈদ বাজার জমে উঠার সাথে সাথে মহানগরীতে গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে রিকশা এবং অটোরিকশার সংকটে পড়ে যাত্রীরা। এ সংকট কাটাতে প্রতিবছরই ঈদের আগে মহানগরীতে কয়েক হাজার অতিরিক্ত রিকশা নামে। ঈদ বাজার সামনে রেখে গ্যারেজ মালিকেরা পুরাতন রিকশা মেরামত করে রাখেন। অনেকে আবার এ সুযোগে রাস্তায় নতুন রিকশাও নামায়। তখন চালকের সংকট দেখা দেয়। মৌসুমি চালকরা এসে এসব রিকশার হাল ধরেন।
কয়েকজন রিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ঈদ বাজারকে টার্গেট করে মহানগরীতে আসেন। অনেকে দিন-রাত প্রায় পুরোটাই রিকশা চালায়। যা আয় হয় তা জমা করে রাখেন। রিকশা গ্যারেজে কিংবা রিকশায় শুইয়ে রাত পার করে দেন। গলির মুখে সস্তা হোটেল কিংবা ফুটপাতের দোকানে আহার সারেন তারা। ঈদ বাজার শেষে জমানো সঞ্চয় থেকে ঈদের কেনাকাটা শেষে ঘরমুখো হন তারা। বাড়িতে রেখে আসা স্ত্রী, সন্তানদের মুখে হাসি ফুটে নতুন কাপড় দেখে। এভাবেই তারা পরিবারের সদস্যদের ঈদের আনন্দে শরিক করেন। মৌসুমি রিকশা চালকদের বেশিরভাগই গ্রামের কৃষি শ্রমিক। তাদের অনেকে কৃষি কাজ না থাকলে গ্রামে রিকশাও চালান।
ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট জানান, প্রতিবারের মতো এবারও নগরীতে মৌসুমি রিকশা চালকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত রিকশার ভাড়ে মহানগরীর সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মৌসুমি রিকশা চালকরা অনেকেই ভালমতো রিকশা চালাতে পারে না। অনেকে আবার ট্রাফিক আইনও বোঝে না। গন্তব্য এবং ভাড়া জানা না থাকায় অনেক যাত্রী আবার এসব রিকশা চালকদের ভাড়াও কম দেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ-উল হক বলেন, ঈদ বাজারকে ঘিরে নগরীতে অতিরিক্ত রিকশার চাপ বেড়ে গেছে। এসব রিকশা লাইসেন্সবিহীন হলেও মানবিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ঈদ বাজারে মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহন সংকট চরমে উঠেছে। এসব রিকশা নগরবাসীর কিছুটা হলেও উপকারে আসছে।



 

Show all comments
  • মামুনুর রশিদ ২৩ জুন, ২০১৬, ২:৫০ পিএম says : 0
    একটু সুখ পাওয়ার জন্য অনেকেই অনেক কষ্ট করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ওরা ঘাম ঝরাচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ