পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যা দেশের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, শিক্ষার প্রসঙ্গ এলেই অবকাঠামো, শ্রেণীকক্ষ, ভবন, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি নিয়ে কেবল আলোচনা হয়। আসলে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষে কী পড়াচ্ছেন বা কী শেখাচ্ছেন সে বিষয় নিয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে। শুধু জিপিএ-৫ পাওয়ার আশায় অনেকে বলেন, আমরা আলোকিত মানুষ না করে পুলকিত মানুষ সৃষ্টি করছি। তিনি মনে করেন, এই অবস্থা থেকে জাতিকে বাঁচাতে হলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রায় ৮৫ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীকে টার্গেট করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সেকারণে দুদক পাঁচ বছরমেয়াদি কর্ম-পরিকল্পনায় শিক্ষার বিষয়টি সম্পৃক্ত করেছে।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে নানাবিধ সমস্যায় রয়েছে সেকথা প্রকারান্তরে বিভিন্ন মহল থেকেও উঠছে। দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের প্রসঙ্গ নিয়ে যে আলোচনা করেছেন তাকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই। দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সঙ্গত বিবেচনা থেকেই এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন মাননীয় আদালত। এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির সভাপতিকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। উচ্চআদালতের এ রায়ের ফলে জাতীয় সংসদের সদস্যরা বেসরকারি স্কুল ও কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি থাকতে পারবেন না। শিক্ষার মান নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তবে এটাই একমাত্র সমস্যা মনে করার কোন কারণ নেই। একসময়ে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায়তনগুলোর যে আন্তর্জাতিক গ্রেডিং ছিল এখন আর তা নেই। শিক্ষামানের অবনতির ফলে একসময়ে যেসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী আমাদের দেশে পড়তে আসত বর্তমানে তা অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে আমাদের দেশ থেকে যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে যায় তাদেরও নতুন করে সেসব দেশে পরীক্ষা দিয়ে মান নিশ্চিত করতে হচ্ছে। যোগ্য ও মানসম্মত শিক্ষক তৈরির দায়িত্ব যেসব প্রতিষ্ঠানের তাদের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে, তাহলে দেশে যোগ্য শিক্ষক আসবে কোথা থেকে? প্রতিবছর এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় আগের তুলনায় মেধাবীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গত কিছুদিনে মেধাবীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সে বিবেচনায় দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষারমান নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন তাকে অযথার্থ মনে করার সুযোগ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এই বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে কেন? নিকট অতীত পর্যালোচনা করলেও এটা বলা যায়, শিক্ষায় এ অবস্থা ছিল না। শিক্ষা কার্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি, খাতা দেখার নিয়মাবলী এবং সর্বোপরি শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক গলদ থাকার বিষয়টি সবারই জানা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিও নতুন কিছু নয়। অন্যদিকে মেধায়, মানে এবং কর্মজীবনে উচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়া সত্ত্বেও মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে কোন কোন মহলে উন্নাসিকতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কী শেখানো হচ্ছে, তারা কী শিখছে এসব প্রশ্নও গত কিছুদিনে অনেক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সবকিছু পর্যালোচনা করলে এটা বলতেই হবে, দেশের ভবিষ্যৎ এবং সুনাগরিক গড়ে ওঠার ক্ষেত্র শিক্ষা এক বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
দেশগঠনে দেশের প্রয়োজনে মানসম্মত শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কেবল অবকাঠামো বা অন্য বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বেশি প্রয়োজন যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। শিক্ষা নিয়ে এখন যে ধরনের বাণিজ্য চলছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মহলের প্রভাবের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে অস্বীকার করা যাবে না। সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষানুরাগী, প্রকৃত শিক্ষিত, দক্ষ যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করা বাঞ্ছনীয়। অবশ্যই শিক্ষা কারিকুলাম এবং পাঠ্য পদ্ধতির দিকে নজর দিতে হবে। মেধা যাচাইয়ের প্রকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে হবে নির্মোহ এবং নির্দলীয়ভাবে। কোন বিশেষ দল বা শ্রেণীর প্রভাব যাতে না পড়ে সেদিকে সবিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, পাসের হার নির্ধারিত হতে হবে মেধা-মননের ভিত্তিতে। কেবল সার্টিফিকেটধারী নয় বরং যোগ্য হিসেবে যাতে আন্তর্জাতিক মানের সমান হয় সেদিকটিতে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাকে যেহেতু জাতির মেরুদ- বলা হয়, তাই সেখানে দুর্নীতি অযোগ্যতা থাকার অর্থ হচ্ছে গোটাজাতির অস্তিত্বই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া। একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সকলে সচেষ্ট থকবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।