পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই দেশে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক লেগে আছে। গত মে মাসে ঘূর্ণীঝড় আমফানের আঘাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতে এখন ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দেশের উত্তর ও মধ্যভাগের অন্তত ২০টি জেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই করোনায় মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত ও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। লাখ লাখ মানুষ বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ সীমাহীন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধু ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অসহায় পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকলেও বন্যা ব্যাপকতায় যে ক্ষতি হচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে, তাতে সরকারের একার পক্ষে তা সমাল দেয়া দুষ্কর। এমন এক পরিস্থিতিতে, গত সোমবার মন্ত্রীসভার নিয়মিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার্ত এলাকার মানুষের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসন এবং সর্বস্তরের সামর্থ্যবান মানুষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে প্রধানমন্ত্রীর এই মানবিক আহবানে প্রত্যেকের সাড়া দেয়া উচিৎ। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাকে সরকারিদল ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উচিৎ নৈতিক আদর্শ ও দর্শন হিসেবে গ্রহণ করে ত্রাণ ও পুর্নবাসনে আন্তরিকভাবে ঝাপিয়ে পড়া। পাশাপাশি বিরোধীদলসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরও এগিয়ে আসা বাঞ্চনীয়।
করোনা মহামারীর কারণে দেশের প্রায় সব উৎপাদনশীল সেক্টরে অচলাবস্থা দেখা দিলেও কৃষিতে তেমন বিরূপ প্রভাব অনুভূত হয়নি। ফলে করোনার মন্দাবস্থায়ও তা স্বস্তির বিষয় হয়ে ছিল। তবে বন্যার ভয়াবহত যেন সবকিছু ওলটপালট করে দিচ্ছে। ফসলি জমি, বাড়িঘর, জনপদ তলিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মাছের ঘের, খামার ডুবে ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে। এ সাথে নদ-নদীর ভয়াবহ ভাঙনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে আগামী দিনগুলোতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়টি তীব্র হয়ে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যার এই ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এবং কর্মহীন দরিদ্র মানুষকে খাদ্য, আশ্রয় ও পুর্নবাসনের সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি এখন থেকে না নিলে ভয়াবহ বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বচ্ছল-সামর্থ্যবান মানুষদের এগিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন সংকটের বিষয়টি যথাসময়ে উপলব্ধি করেই সরকারের তরফ থেকে বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে দলমত নির্বিশেষে সকলকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন। বন্যার্ত মানুষের যত রকমের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছেন।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এখনই প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা ও করণীয় ঠিক করে তা বাস্তবায়ণের উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। এ ব্যাপারে ঈদের আগেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ বন্যার পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। এ প্রেক্ষিতে, এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যার্তদের সহযোগিতার পাশাপাশি বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের পুনর্বাসন এবং কৃষকরা যাতে দ্রুত কৃষিকাজ শুরু করতে পারে, এ জন্য সবধরনের সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, মৎস্য খামারে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি, অসংখ্য বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়া এবং নদীভাঙ্গনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন যাওয়ার মতো ক্ষতি সহসা পূরণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। সরকারের একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। তাই মহাদুর্যোগে মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। এ সমেয় রাজনৈতিক ব্লেইম গেম তথা দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করে সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। এমন দুর্যোগময় সময় যেমন সবসময় আসে না, তেমনি মানুষের সেবায় এবং মানবিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগও সব সময় ঘটে না। এই মুহূর্তে বন্যার্ত মানুষকে সহায়তা প্রদান, আশ্রয় ও ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও অবকাঠামো পুন:নির্মাণ ও দরিদ্র মানুষের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখার কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয়, তা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।