Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্যার বিস্তার

পানিবাহিত রোগে মোট আক্রান্ত ১০ হাজার ৬৮৪ জন : সীমাহীন দুর্ভোগ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

বন্যার বিস্তৃতি বাড়ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও মধ্যাঞ্চলের আরও অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর চারপাশের উপজেলার নতুন নতুন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। দোহার, নবাব ও মানিকগঞ্জ রক্ষা বাঁধের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ঢাকা জেলার আশপাশে নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, শরিয়তপুর, ঢাকা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭ টির, হ্রাস ৬৪টির, বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১৭ টির, বিপদসীমার উপরে নদীর সংখ্যা ২০ টি, বিপদসীমার উপরে স্টেশনের সংখ্যা ৩০ টি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার পানি বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের ৯১ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের ৭২ সেন্টিমিটার, করতোয়ার ১৬ সেন্টিমিটার, যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১১১ সেন্টিমিটার, জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ১২ দশমিক ৩৮ মিটার, কুশিয়ারা ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯ দশমিক ৯১ মিটার, ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারীতে ৫৭ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে। দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহসহ নানা রোগে গত এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন; তাদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই ৪ হাজার ৬২১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে নানাভাবে। এর মধ্যে পানিতে ডুবে ৯৬ জন, ডায়রিয়ায় একজন, সাপের কামড়ে ১৩ জন ও বজ্রপাতে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। লালমনিরহাটে ১১ জন, কুড়িগ্রামে ২০ জন, গাইবান্ধায় ১০ জন, নীলফামারী দুজন, রংপুরে তিনজন, সুনামগঞ্জে দুজন, সিরাজগঞ্জে ১০ জন, জামালপুরে ২৭ জন, টাঙ্গাইলে ১৬ জন, মানিকগঞ্জে ১০ জন, নেত্রকোণায় ৫ জন, নওগাঁয় দুজন এবং শরীয়তপুরে একজন মারা গেছেন চলমান বন্যার মধ্যে।
এছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। সবকিছু হারিয়ে চাষিরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন ও বন্যায় সবকিছু হারিয়ে বাঁধ বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিন যাচ্ছে বানভাসি মানুষের। অভিযোগ রয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ারও। তবে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা হিসেবে পর্যাপ্ত চাল, নগদ টাকা ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দিয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের মরিচার চর বটতলা অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে সরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৭টি পরিবার।
স্টাফ রিপোর্টার, চাঁদপুর থেকে জানান, পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুরে প্রায় ১৬শ’ পরিবারের ৭ হাজার মানুষ পনিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে সময় কাটছে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চরের এসব মানুষদের।
স্টাফ রিপোর্টার, গাইবান্ধা থেকে জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তিন হাজার ২৪৬ হেক্টর জমির আমন রোপা, পাট, আউশ ধান ও শাক সবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে উপদ্রুত এলাকার মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মধুমতি নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাশিয়ানী উপজেলার কালনা ফেরিঘাটের উভয় পাড়ের পন্টুনের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পরিবহনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, পানি কিছুটা কমলেও জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় চলমান বন্যায় ৯৬৬ কিলোমিটার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ২৬০ কিলোমিটার রাস্তা আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ১৪ হাজার ১৩ হেক্টরের ফসল প্লাবিত হয়েছে।
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় প্রবল বর্ষণ ও ঢলের পানিতে দুই শতাধিক পুকুর ডুবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। চাষিরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন।
জামালপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় জেলায় ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৯টি ইউনিয়নের ৬৭৭টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলার ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছে।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫শ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা প্রায় একমাস ধরে দুর্ভোগে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। অপরদিকে তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। একদিকে ভাঙন আর অন্যদিকে পানিবন্দী অবস্থায় চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নুতন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানির স্্েরাতের তীব্রতায় দ্রুত পানি প্রবেশ করে শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর বেষ্টিত চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলোতে।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ৬ উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার তিন শতাধিক গ্রামে পানি বন্দি হয়েছে অন্তত ৬০ হাজার পরিবার। ইতিমধ্যে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বসত বাড়ি ও ফসলী জমি হারিয়েছে চার শতাধিক পরিবার। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী লাখ লাখ মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ