পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর ও নওগাঁ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ঢাকা জেলার আশপাশে নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। বর্তমানে ১৮টি নদীর পানি ২৮টি পয়েণ্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বানভাসিদের দুর্ভোগ চরমে। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অনেক স্থানে বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না। পানি যত বাড়ছে বিভিন্ন স্থানে তত তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। প্রায় ৪০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে, স্কুল-মাদরাসা ও বহু বাঁধ। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বানভাসিরা। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা হিসেবে ৫৫০ মেট্রিক টন চাল, ৮৭ লাখ টাকা ও ১৪ হাজার অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দিয়েছে। গতকাল বিভিন্ন স্থানে পানিতে ডুবে কয়েকজন মারা গেছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেব জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েণ্টে ৭৩ সেণ্টিমিটার, নুনখাওয়ায় ৬০ সেণ্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েণ্টে ৪৫ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত ৯ উপজেলার প্রায় ৬০টি ইউনিয়নের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। রাজারহাটের বুড়িরহাট ও গাবুরহেলান স্পারের ৭০ ফিট তিস্তা নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে। সারা জেলায় প্রায় ২ হাজার বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে আবু হানিফ নামে দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুটি উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের কুলামুয়া কালাইরচর গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে। এ নিয়ে পানিতে ডুবে জেলায় শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ১৭জনে দাঁড়াল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খ আ ম রশিদুল ইসলাম জানান, জেলার সরাইল ও নাসিরনগর উপজেলার নিচু এলাকার ঘর বাড়ি ও সড়ক এখনো পানির নিচে রয়েছে।
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, মেঘনার পানি বিপদসীমার ৫০ থেকে ৬০ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার নিম্নাঞ্চলে পানিবদ্ধ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। থেমে নেই নদী ভাঙনও। হাইমচরের মাঝেরচর, ঈশানবালা এবং চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে এখনো ব্যাপকভাবে নদী ভাঙছে। এতে বহু পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে সেলিম আহম্মেদ জানান, বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৫টি উপজেলার ৫শত ৪১টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। বন্যাকবলিত অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও উচু রাস্তার উপর।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েণ্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১১ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে প্রায় ১০ লাখ পানিবন্দি মানুষ।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে রবিউল কবির মনু জানান, বাঙ্গালী নদীর বাঁধ ভেঙে ৪টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বোচাদহ গ্রামে বাঙ্গালী নদীর বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার জায়গা ভেঙে যায়। বাঙ্গালী নদীর মূল স্্েরাত ধারা করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েণ্টে বিপদসীমার ৩৯ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, প্লাবিত হয়েছে শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর মধ্যে চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলো। শিবচরের পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে ইসমাইল খন্দকার, উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের দক্ষিণ পাড়া লতব্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বালুরদুব গ্রামের ৪০ টি পরিবারের প্রায় ৩০০ জন মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে মো. সোহেল রানা খান জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার শিবালয়, দৌলতপুর, হরিরামপুর, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ সদর এবং ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন নদ নদী ও খাল বিলে পানি প্রবেশ করছে। এর ফলে এসব এলাকার নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘর এবং ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থেকে জসিম উদ্দিন জানান, বন্যার পানিতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা পর মো. রনি নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত রনি সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউপির আউটপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হালিমের ছেলে।
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, জেলার আত্রাইয়ে বন্যার পানিতে ডুবে হালিমা ও হাবিবা (২) নামে দুই জমজ বোনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত দুই বোন ওই গ্রামের মোতাহার হোসেনের মেয়ে। এ ছাড়া আত্রাইয়ে ছোট ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলো রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভাতঘরপাড়ার গ্রামের ইউনুচ আলী মৃধার ছেলে ইরান মৃধা (৮) ও মেয়ে ইরা আক্তার (১৬)। ইরান সিংসাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ও ইরা সিংসাড়া স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।