পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে বানভাসিদের দুর্ভোগ তত বাড়ছে। দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অনেক স্থানে বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না। পানি বৃদ্ধির সাথে বিভিন্ন স্থানে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। এ পর্যন্ত ৩১ জেলা কবলিত হয়েছে। অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়ছে। এটা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি কমছে। ঢাকা জেলার আশপাশের নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান গতকাল সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের সব জায়গা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করবে। তবে মার্কিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন্দ্র ‘গেøাবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম’ জানিয়েছে, আগামী ২৮ জুলাইয়ের দিকে (এক দিন আগে বা পরে) বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে লঘুচাপ থেকে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় আগামী ৫ আগস্ট পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর কিছুদিন গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় বন্যার পানি নিচের দিকে নামতে না পারলে কবলিত এলাকাগুলো আরো বেশি বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৬ শতাধিক গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় বন্যার কবলে পড়া মানুষগুলোর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট এবং স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নদীভাঙনের শিকার হয়ে সারডোব, সাহেবের আলগা, থেতরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় আরো শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। অনেকেই বাঁধে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পদ্মার পানি এখনও বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সদরপুর, চরভদ্রাসন ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, তিন দফা বন্যায় দীর্ঘ ২৫ দিন যাবৎ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ। খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে লাখো দিনমজুর ও নিম্নআয়ের পরিবার। বানভাসিদের দুর্ভোগ কমাতে খাদ্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরীসহ সব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৯টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ বানভাসি মানুষ চরম দুরবস্থায় পড়েছে। কেউ কেউ বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ হাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীতে এলাসিন পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি যোকারচর পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরইমধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা রাস্তা, ব্রিজ এবং পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। লৌহজং, শ্রীনগর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার লোক। লৌহজেং ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪শ’ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পানিবাহিত রোগ এবং বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটের পাশাপাশি শুকনো খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শ্রীনগরে যোসল এলাকায় শ্রীনগর-দোহার সড়ক ডুবে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মো. হাফিজুর রহমান মিন্টু জানান, শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে পানি প্রবেশ করছে শহরতলী ও আশপাশের এলাকাগুলোতে। প্রবল বর্ষণে শহরের অনেক পাড়া মহল্লায় জমে থাকা পানি নামছে না। খুব ধীর গতিতে পানি নামার ফলে এখনো তলিয়ে রয়েছে পাড়ামহল্লার সড়কগুলো।
কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে মো. হেলাল উদ্দিন জানান, হাওর অঞ্চল নিকলী উপজেলার কারপাশা, সিংপুর, ছাতিরচর, গুরুই, দামপাড়া ইউনিয়নের শতশত বাড়ি ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এতে স্থানীয়দের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।