পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কিছু নয়। যুগের পর যুগ এগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের চলতে হচ্ছে। এসব মোকাবেলার সক্ষমতাও এখন আমরা অনেকটাই অর্জন করেছি। জান-মালের ক্ষতি কমাতে সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষমতা অনেকাংশেই রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই এই সক্ষমতা আমরা কীভাবে অর্জন করেছি, তা জানতে চায়। এই অর্জন সত্তে¡ও বন্যায় যে ভয়াবহ নদীভাঙন শুরু হয়, তা মোকাবেলায় আমরা এখনো পুরোপুরি সক্ষম হতে পারিনি। প্রতি বছর নদীভাঙনে শত শত বাড়ি-ঘর, স্থাপনা, সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। এ মৌসুমে যে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়েছে, তাতে ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, সড়ক গভীর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সেই সাথে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ইতোমধ্যে পদ্মা এবং মেঘনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দুটি সুরম্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাদারিপুরের চরাঞ্চলের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত শিবচর উপজেলার এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিকট শব্দে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও সাইক্লোন শেল্টার নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। শুধু এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, ইতোমধ্যে অসংখ্য বাড়ি-ঘর, মসজিদ নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। মানুষের বসতবাড়িতে কোমর সমান পানি উঠেছে।
প্রবল বন্যায় মানুষের বসতভিটা, ফসলি জমি, সড়ক ডুবে যাওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বন্যা হলেই তা দৃশ্যমান হয়। ভাটির দেশ হওয়ায় ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা দেখা দেয়। এ থেকে পরিত্রাণের আশু সম্ভাবনা নেই। নদী ভাঙনও অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এ ভাঙন রোধে বছরের পর বছর ধরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা ঠেকানো যাচ্ছে না। কেন ঠেকানো যাচ্ছে না, তা বোধ করি সবারই জানা। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেয়া প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে নেয়া হয় না। বন্যার আগাম সতর্কতা দেয়া হলেও তাদের তেমন কোনো নড়াচড়া দেখা যায় না। অনেক সময় বরাদ্দ নেই বলে অজুহাত দেখানো হয়। বন্যা যখন প্রবল আকার ধারণ করে তখন তাদের কিছু তৎপরতা দেখা যায়। ততদিনে দেরি হয়ে যায়। নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। অথচ নদ-নদীর ভাঙন প্রবণ এলাকায় যদি সারাবছর সংস্কার ও শাসনের প্রক্রিয়া থাকত, তাহলে ভাঙনের ক্ষয়-ক্ষতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেত। দুঃখের বিষয়, ভাঙন রোধ প্রকল্পের সাথে যেসব ঠিকাদার যুক্ত থাকে তারা কাজটি যথাযথভাবে করে না। এর মূল কারণ দুর্নীতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের সাথে তাদের যোগসাজস থাকায় কোনো রকমে কাজ দেখিয়ে অর্থ তুলে নেয়া হয়। এতে ভাঙন রোধ তো হয়ই না, উল্টো সরকারের কোটি কোটি টাকা নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। নদী শাসন, ড্রেজিং এবং ভাঙনরোধ প্রকল্পগুলো যেন কতিপয় ঠিকাদার ও পানি উন্নয়বোর্ডের দুর্নীতিবাজদের জন্য ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই যে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল, এর অন্যতম কারণও দুর্নীতি। প্রথম কারণ হচ্ছে, স্কুল দুটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় সে জায়গার ভাঙন রোধের ব্যবস্থা না নেয়া এবং দূরদৃষ্টির অভাব। কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল, যেহেতু স্কুল দুটি নদী তীরবর্তী, তাই বন্যা হলে এর ভাঙন শুরু হতে পারে এবং তা যাতে টিকে থাকতে পারে, এ অনুযায়ী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, স্কুল দুটি যখন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন উচিৎ ছিল ঐ স্থানের সয়েল টেস্ট, ফাউন্ডেশন, ডিজাইন, ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে এর মেয়াদকালের বিষয়গুলো যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। এ বিষয়গুলো যে সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি, তা ভবন দুটি কচুরিপানার মতো ভেসে যাওয়া থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ভবন দুটির ভিত্তি বলে কিছু ছিল না। তাছাড়া বন্যা শুরুর আগে কিংবা ভবন নির্মাণের আগেই এর ফিজিবিলিটি বা স্থায়িত্ব এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার নদী ভাঙনের আশঙ্কার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে উচিৎ ছিল।
বন্যায় বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি ডুবে যাবে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বন্যার পানি নেমে গেলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সেগুলো আবার জেগে উঠবে, এটাও স্বাভাবিক। তবে একেবারে ভেসে গিয়ে বিলীন হয়ে যাবে, এমন হওয়ার কথা নয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের যে গাফিলতি ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। এ কথাও নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভবন দুটির নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ত্রু টি ছিল। আমরা মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিৎ। কেন, কি কারণে প্রতিষ্ঠান দুটি চিরতরে হারিয়ে গেল, তা তদন্তের মাধ্যমে বের করতে হবে। এগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শুধু বন্যার কারণে এবং নদী ভাঙনে ভেসে গেছে, এ ধরনের দায়সারা অজুহাতে তাদের ছাড় দেয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।