পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যেও বিশ্বের প্রতিটি দেশ অর্থনীতি পুনর্গঠনে জোরোসোরে কাজ শুরু করেছে। করোনা কবে শেষ হবে, এ আশায় বসে না থেকে উন্নত দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশ অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি এগিয়ে নিতে ব্যাপক কর্মকান্ড শুরু করেছে। বাংলাদেশও উন্নতির এ রেস থেকে পিছিয়ে থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে দূরদর্শী চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসনে গতি ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরুর নির্দেশের পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তে দিকনির্দেশনা দিয়ে নিজেই তদারকি করছেন। যেখানে যে খাতকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন এবং দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে, সে খাতকে গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার বিভিন্ন প্রকল্পের ধীরগতির জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করে তা দ্রুত শুরু এবং শেষ করার তাকিদ দিচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্যোগের কারণে সবকিছু স্থবির করে রাখলে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। দুর্যোগসহ নানা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা থাকবেই এবং তা মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আশার কথা, ইতোমধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বিদেশী বিনিয়োগের আশাব্যাঞ্জক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া অগ্রগণ্য হলেও অন্যান্য দেশ বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে। চীন আমাদের জন্য ‘ব্ল্যাংক চেক’ হয়ে আছে। ইতোমধ্যে দেশটি আমাদের উন্নয়ন সহযোগিতায় অনেক নজির স্থাপন করেছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যেও দেশটি প্রায় আট হাজারের বেশি পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়ে রপ্তানির দুয়ার খুলে দিয়েছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অন্যান্য বড় বড় প্রকল্পে দেশটি ব্যাপক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাবস্থার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলো যেখানে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে খাবি খাচ্ছে, সেখানে একমাত্র চীনই করোনা মোকাবেলা করে তার অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছে। ব্যাপক পুঁজি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। এর কারণ, দেশটি তার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এমনভাবে গড়ে তুলেছে যে, হঠাৎ বিপর্যয় সত্তে¡ও তার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। সেই চীন যখন পাশে আছে, তখন আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ যে প্রশস্ত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপানও আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত বুধবার ‘ডায়লগ টু ড্রাইভ জাপানিজ ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারিটি মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জাপানি বিনিয়োগকারিদের আরও বেশি বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন। মিটিংয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি জাপানি বিনিয়োগকারিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে বলেছেন, জাপান সরকারের সহযোগিতায় খুব দ্রুতই বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটবে। তিনি বলেছেন, মেট্রোরেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসার, মহাখালি-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য জাপান সরকারের একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে, যা খুব দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি জাপান সরকারের সহযোগিতায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছোট-বড় ২১টি সেতু নির্মাণ ও পুনর্নিমাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশকেও সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের আহবান এবং উদ্যোগ জানানো উচিৎ। দেখা যাচ্ছে, করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি সচল করতে বিদেশি সহায়তা এবং বিনিয়োগে সরকার জোরকদমে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। বলা বাহুল্য, বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতি সচল হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, জীবনযাপনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসে এবং মানুষের এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।
অস্বীকার কারার উপায় নেই, করোনা, ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দুর্যোগ-দুর্বিপাক থাকবেই এবং এসব মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। এসবের মধ্যেই আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তায় ইতোমধ্যে সরকারের কার্যক্রমে গতি পেয়েছে। তার পাশে সালমান এফ রহমানের মতো একজন দক্ষ উপদেষ্টা রয়েছেন। বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে তার বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থনীতির নতুন নতুন ক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। এখন এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। বিনিয়োগের অভাব নেই বলে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগের পরিবেশ দ্রুত তৈরি করার দিকে মনোযোগ দিয়ে বিনিয়োগকারিদের আকৃষ্ট করছে। আমাদেরও এদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দৃষ্টি দিতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হবে সেগুলো যাতে শ্রমঘন হয়, এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, দেশে ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে। প্রবাস থেকেও লাখ লাখ শ্রমিক ফিরছে। এসব বেকার শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রযুক্তি ও আধুনিকায়নের ফলে এখন যে কোনো প্রকল্প স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। একটি সেতু তৈরি করতে এখন আর আগের মতো বছরের পর বছর সময় লাগে না। এক বছর বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব। জাপানেরই একটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের আগে একটি সেতু নির্মাণ করে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং ব্যয় না হওয়া অর্থও ফেরত দিয়েছে। কাজেই বিনিয়োগকৃত যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, সেগুলো দ্রুত সময়ে মানসম্পন্নভাবে যেমন শেষ করতে হবে, তেমনি এসব প্রকল্পে বেকারদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।