Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশি মিডিয়ায় শেখ হাসিনা-ইমরান খান ফোনালাপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ফোন কল নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। করোনাভাইরাস ও বন্যা নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার বিষয়টি সবাই গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। তবে ইসলামাবাদ থেকে দেয়া বিবৃতির কথা উল্লেখ করে কাশ্মীর ইস্যু এবং সার্ককে কার্যকর করার গুরুত্বের বিষয় উল্লেখ করা হয় অনেক মিডিয়ায়।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু গতকাল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি তুলে ধরে। এতে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীর এবং এর সব উন্নয়ন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অবস্থানের প্রশংসা করে নয়াদিল্লি। গত বুধবার টেলিফোনে আলাপচারিতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তার বাংলাদেশি সমকক্ষের সাথে জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একথা বলেছে।

‘বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক সময়ভিত্তিক এবং ঐতিহাসিক ... আমরা তাদের ধারাবাহিক অবস্থানের প্রশংসা করি যে, জম্মু ও কাশ্মীর এবং এর সমস্ত উন্নয়ন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ সর্বদা এ অবস্থান ধরে রেখেছে’-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবের বরাতে বার্তা সংস্থা এএনআই একথা জানিয়েছে।
এতে আরে বলা হয়, ‘ভারত সরকার কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আগরতলায় পৌঁছে যাওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে আরও একটি ‘ঐতিহাসিক’ মাইলফলক লক্ষ্য করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইট করে বলেছে যে, এ উন্নয়ন উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আরও উন্নয়নে সহায়তা করবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনসুখ মন্দাভিয়া গত সপ্তাহে কলকাতা থেকে প্রথম ট্রায়াল কনটেইনার জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আগরতলার উদ্দেশ্যে যাত্রা উদ্বোধন করেন। ভারত এবং বাংলাদেশ সা¤প্রতিক বছরগুলিতে শিপিং এবং অভ্যন্তরীণ ওয়াটার বাণিজ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে’।

ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিস ‘ঢাকায় ইমরানের ফোন, দিল্লির সতক পর্যবেক্ষণ’ শিরোনামে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘চীন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে যখন কিছুটা টানাপড়েন চলছে ঠিক তখনই বুধবার ইসলামাবাদ থেকে ফোন এলো ঢাকায়। ইমরান খান কথা বললেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন চান ইমরান। এ সম্পর্ক অনেকদিন থেকেই হিমশীতল। যদিও ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি এক সপ্তাহ আগেই খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তিনি কোভিড মহামারির মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঢাকার মিডিয়ায় এ খবর তেমন জায়গা পায়নি। তবে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদুলুর বরাতে খবরটি চাউর হয়’।

ভিওএ’র খবরে আরো বলা হয়, ‘হাসিনা-ইমরান কী কথা হয়েছে তার বিশদ জানা যায়নি। শুধু বলা হয়েছে করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির খবরাখবর নিতেই ফোন করেছিলেন ইমরান। ভারতীয় মিডিয়া একদিন আগেই সম্ভাব্য এ ফোনালাপের খবর প্রচার করেছিল। ঐ খবরে এই অঞ্চলে চীন প্রভাব বিস্তার করতে এটা তারই ইঙ্গিত বলে বর্ণনা করে মিডিয়া। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বিশেষ সম্পর্ক গড়ার উদ্যোগকে দিল্লি বাঁকা চোখেই দেখে আসছে। এখানে স্মরণ করা যায় যে, ইমরান খান গত বছরের ২ অক্টোবর শেখ হাসিনাকে ফোন করে তার কুশলাদি জানতে চান। একদিন পরে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকে সামনে রেখে ইমরান খানের টেলিফোন নিয়ে বেশ কৌত‚হলের সৃষ্টি হয়। ভারতীয় বিশ্লেষকরা প্রতিবেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পেছনে চীনকেই দায়ী করছেন। আগে একমাত্র নির্ভরযোগ্য মিত্র ছিল পাকিস্তান। চীন-ভারত সম্পর্কে যখনই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে অন্য প্রতিবেশিরা চুপই থেকেছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কের দেয়াল তৈরি হয়েছে। সবথেকে লক্ষণীয় যে, নেপাল হঠাৎ করেই ভারতের সঙ্গে তার বিরোধপূর্ণ তিনটি এলাকাকে পার্লামেন্টে অনুমোদন করে নেয়। একই সময়ে চীন বাংলাদেশি পণ্যের উপর শতকরা ৯৭ শতাংশ হারে শুল্ক রেয়াদ দেয়ার কথা ঘোষণা করে। ভারতীয় মিডিয়া একযোগে চীনের এ প্রস্তাবকে এমন একটা পরিভাষা দিয়ে চিত্রিত করার চেষ্টা করে যা কিনা ঢাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল নিয়ে ঢাকা-বেইজিং যখন একমত হয় তখনও ভারতীয় মিডিয়ায় অস্বস্তির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চীনের আরেকটি প্রস্তাবও এ সময় আলোচনায় আসে। আর তা হচ্ছে মহানগরগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের একটা মেলবন্ধন। এর নাম দেয়া হয়েছে সিস্টার সিটি। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ মনে করেন, এটা ভাববার কোন কারণ নেই যে, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব ফেলার প্রয়াশ একেবারেই নিরীহ। উভয় দেশই বাংলাদেশকে তাদের কক্ষফুটের মধ্যে রাখতে চাইছে। যখন ভারতীয় মূলনীতি কেবলমাত্র স্বল্পমেয়াদী চিন্তা দ্বারা পরিচালিত এবং তা একদল কেন্দ্রিক চীন তখন বাংলাদেশে একটা দীর্ঘমেয়াদী খেলা খেলছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলেছে, ‘পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ইমরান খান ‘গুরুতর পরিস্থিতি’ সম্পর্কে বলেছিলেন যা তাকে ‘ভারতীয় অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর’ বলে অভিহিত করেছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতি জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে সম্পূর্ণ নীরব।’

 

 



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৪ জুলাই, ২০২০, ১১:১৩ পিএম says : 0
    ভারতের সাথে চীনের বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যে এক মহাসুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের কর্ণধার শেখ হাসিনা সেই সুযোগটা ঘরে তুলতে পারবেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমার জানামতে শেখ হাসিনার সাথে ভারতের বিগত সরকারি দল কংগ্রেস ও বর্তমান সরকারি দল বিজেপি উভয় দলের উপরের স্তরের নেতাদের সাথে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে ’৭৫ সালের পর থেকেই (বাংলাদেশে আসার আগে শেখ হাসিনা ভারতেই থাকতেন)। সেদিক থেকে চিন্তা করলে বলতে হয় শেখ হাসিনা ব্যাক্তিগত ভাবে ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। আমি এটাও উপলব্ধি করেছি শেখ হাসিনা ’৯৬ সালে যদিও ভারতের সমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছিলেন কিন্তু তাঁর ক্ষমতা কালে তিনি দেশের জন্যে প্রচুর কাজ করেছেন ফলে ভারতকে তেমন একটা সুযোগ সুবিধা দিতে পারেননি। যে কারনে পরের নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয় নিশ্চিত থাকা স্বত্বেও তিনি নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি কারন ভারত তাঁর পেছনে (সহযোগিতা করেনি) ছিলনা। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকা কালিন সময়ে ভারত কূটনৈতিক ভাবেও তেমন একটা সহযোগিতা করেনি। শেখ হাসিনা নির্বাচনে হেরে যাবার পর বিষয়গুলো উপলব্ধি করেন তাই এখন তিনি খুবই সাবধানতার সাথে ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। আমার গবেষনায় বলে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। যেজন্যে ভারতের প্রচার মাধ্যম এখন প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিভিন্ন কাজের অগ্রীম খবর প্রচার করে থাকে। এটাও এখানে পরিষ্কার যে, চীনের স্বার্থেই পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তাদের এককালের সোনালী আঁশ পাট নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছে আর সেই পাট নেয়ার জন্যে পাকিস্তান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বিরাট বিপ্লব ঘটে যাবে। আমি এই ইনকিলাব পত্রিকায় ২২ জুলাই ইমরান খান ও শেখ হাসিনার ফোনালাপের উপর মন্তব্যে করে বলেছিলাম ভারতের সাথে পাকিস্তানের বিরোধ মিটানোর উদ্দেশ্যেই দুই নেতার আলাপ চলছে। আজকের এই সংবাদে সেটা পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। এখন দেখার বিষয় শেখ হাসিনা কিভাবে এই সুযোগে নিজের দেশের কি মঙ্গল করতে পারেন। আল্লাহ্‌র দরবারে আমার বিশেষ প্রার্থনা আল্লাহ্‌ যেন শেখ হাসিনাকে কূটনৈতিকভাবে জয়ী হতে সহায়তা করেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইমরান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ