পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আষাঢ়-শ্রাবণে এমনিতেই বৃষ্টি। তারপর ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে দেশের শত শত নদী ভাসিয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। প্রায় এক মাস ধরে দেশে বন্যা চলছে। উত্তরাঞ্চলে পানি কিছুটা কমলেও মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়ছেই। সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। এখনো ২৬টি জেলার ১০৫টি উপজেলার ৬৪৫টি ইউনিয়নের ৭ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৮জন পানিবন্দি পরিবার। চলতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৩৪ জন। এই ক্ষতি মাথায় রেখে বন্যা মোকাবিলায় সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ২৬ জেলায় বন্যা চলছে। বন্যাকবলিত এলাকার জনগণকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না; প্রধানমন্ত্রী আপনাদের পাশে আছেন, তিনি সব সময় আপনাদের খবর রাখেন এবং আমাদের নির্দেশ দেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। কাজেই কোনো অবস্থাতেই খাবারের কোনো সঙ্কট হবে না।
সুত্র জানায়, ২৬ জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ হাজার ১৪০ মে:টন জিআর চাল এবং ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় এক হাজার ৫৪৫টি আশ্রয়া কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৪৬৩ জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্র বসবাসকারীদের মধ্যে সরকারি ভাবে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে। করোনার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।
এছাড়া ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দেশের বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়াও দুস্থ, অতিদরিদ্র ব্যক্তি ও পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। এসব মানুষের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় বা যাতে ত্রাণের কোনো ঘাটতি, জীবন-জীবিকার কোনো অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরতদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি টয়লেট সুবিধা, পানি শোধনাগার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পর্যাপ্ত রাখতে সংশ্নিষ্টদের বলা হয়েছে। বন্যায় দেশের মানুষের যেন কোনো ক্ষতি বা দুর্ভোগ না হয় সেজন্য নজর রাখতে হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে হবে। যথাযথভাবে সরকারি সহায়তা প্রদান ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হবে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বন্যার পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমাদের মন্ত্রণালয় এবং ত্রাণ কার্যক্রম সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছেন। মাঠ পর্যায়ে ডিসিরা সহ আমাদের কর্মকর্তারা ২৪ ঘন্টা কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দফতরগুলোও কাজ করছে। বন্যায় দেশের মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা এবং রিলিফ ও উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমার সেই আলোকে কাজ করছি। ত্রাণ নিয়ে কে অনিয়ম করলে কাইকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আগামীদের যত বড় বন্যা বা দুযোগ দেখা দিলে সে গুলো মোকাবিলায় মহাপরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে।
গতকাল বুববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এখনো ২৬টি জেলার ১০৫টি উপজেলার ৬৪৫টি ইউনিয়নের ৭ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৮জন পানিবন্দি পরিবার। চলতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৩৪ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকার জন্য ১০ হাজার ১৪০ মে:টন জিআর চাল, ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিশু খাদ্যর জন্য ৩৮ লাখ, গো-খাদ্যদের জন্য ৭০ লাখ টাকা এবং শুকনো খাবার ৭৯ হাজার ৬২২ প্যাকেট, ডেউটিন ৩৮০ বান্ডিল, গৃহনিমাণের জন্য ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলা ও ৩২৮ পৌরসভার এবং ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ ক্যাটাগরির অতি দরিদ্র ও অসহায় দুস্থ পরিবারের জন্য পরিবার প্রতি ১০ কেজি হারে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তার লক্ষ্যে উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ৮৭ হাজার ৭৯২ দশমিক ০৩০ মেট্রিক টন এবং পৌরসভার জন্য ১২ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৬টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১২ হাজার ২৭৬ দশমিক ৬৬০ মেট্রিক টন সর্বমোট এক লাখ ছয় হাজার ৮৬৯টি কার্ডের বিপরীতে এক লাখ ৬৮ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়। এসব চাল বরাদ্দ আগামী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে ডিসিদের উত্তোলন করতে হবে। বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকরা ভিজিএফ বরাদ্দের বিষয়ে নিজ নিজ এলাকায় সংসদ সদস্যদের অবহিত করবেন।
ভিজিএফ উপকারভোগী বাছাইয়ে ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক বরাদ্দকৃত ভিজিএফ কার্ড সংখ্যা পুনঃবিভাজন করে তালিকা তৈরি করতে হবে। দুস্থ বা অতিদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারকে এই খাদ্য সহায়তা দিতে হবে জানিয়ে বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে, সা¤প্রতিক বন্যাক্রান্ত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুস্থ ও অতিদরিদ্ররা অগ্রাধিকার পাবেন।
১২ শর্ত গুলো হচ্ছে, যে পরিবারের মালিকানায় কোনো জমি নেই বা ভিটাবাড়ি ছাড়া কোনো জমি নেই, যে পরিবার দিনমজুরের আয়ের উপর নির্ভরশীল, যে পরিবার মহিলা শ্রমিকের আয় বা ভিক্ষাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল, যে পরিবারে উপার্জনক্ষম পূর্ণ বয়স্ক কোনো পুরুষ সদস্য নেই, যে পরিবারে স্কুলগামী শিশুকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়, যে পরিবারে উপার্জনশীল কোনো ব্যক্তি নেই, যে পরিবারের প্রধান স্বামী পরিত্যক্তা, বিচ্ছিন্ন বা তালাক প্রাপ্তা মহিলা রয়েছে,যে পরিবারের প্রধান অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, যে পরিবারের প্রধান অস্বচ্ছল ও অক্ষম প্রতিবন্ধী, যে পরিবার কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রাপ্ত হয়নি, যে পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে চরম খাদ্য বা অর্থ সংকটে পড়েছে। যে পরিবারের সদস্যরা বছরের অধিকাংশ সময় দু’বেলা খাবার পায় না। সরকার বলছে, ইউনিয়ন বা পৌরসভা ভিজিএফ কমিটি প্রকাশ্য সভায় বর্ণিত তালিকা প্রণীত ও প্রত্যায়িত হতে হবে। জেলা বা উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে বিতরণ কেন্দ্র পর্যন্ত চাল পৌঁছানোর পরিবহন ও আনুষাঙ্গিক খরচ সরকারি খাত থেকে বহন করতে হবে। ভিজিএফ উপকারভোগীর তালিকা এমনভাবে করতে হবে যাতে কোনো অবস্থাতেই একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ভিজিএফ বরাদ্দ না পায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।