পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দেশের প্রধান নদীগুলো এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া পূর্বাভাস জানিয়েছে, বৃষ্টি আরও দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল পর্যন্ত বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত নদীর সংখ্যা ১৬। আগামী সপ্তাহে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ জুড়েই বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে এবং বন্যা পরিস্থিতির আরও বিস্তৃতি ও অবনতি ঘটবে। এতে চলমান বন্যা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবারের বন্যা ’৮৮ সালের পর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। গত মঙ্গলবার সংস্থাটির নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আগামী মাসের আগেই পানি কমতে শুরু করবে এমন সম্ভাবনা কম।
পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনেক উন্নত হয়েছে। তবে তারা একটা নির্দিষ্ট ছকে আটকে আছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ১০ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ঢাকার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অঞ্চলেও চলমান বন্যা আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তিনি বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করে দ্রুত সময়োপয়োগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, যে কটি বড় বন্যা হয়েছে, তার স্থায়ীত্বকালের হিসাবে ১৯৯৮-এর বন্যা ৩৩ দিন স্থায়ী ছিল। ২০০৪ ও ২০১৪ এর বন্যা ১৬ দিন ধরে চলে। এরপর ১৯৯৫ ও ’৯৬ সালের বন্যা ১২ দিন করে স্থায়ী ছিল। সে হিসাবে এবারের বন্যা এরই মধ্যে ২৬ দিন অতিক্রম করেছে। চলমান বন্যার আরও অবনতি হবে এবং এর স্থায়ীত্ব আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এবারের বন্যার স্থায়ীত্বকাল ৪০/৪২ দিন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যা বাংলাদেশে হবেই। তবে তা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। এবারের বন্যা অন্যবারের চেয়ে আলাদা এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চলমান বন্যায় এরই মধ্যে দেশের ২৬টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে বহু বাঁধ। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বানভাসিরা। পানি যত বাড়ছে বিভিন্ন স্থানে তত তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অনেক স্থানে বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না। বানভাসিদের দুর্ভোগ এখন চরমে।
কুমিল্লা থেকে কামাল আতাতুর্ক মিসেল জানান, গোমতী ও তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, তিস্তার পানির ঘূর্ণিস্রোতের কবলে পড়ে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ বুড়িরহাট স্পারটির ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত তিনদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ফেলে স্পারটি রক্ষার চেষ্টা করলেও প্রবল ঘূর্ণিস্রোতের কারণে শেষ রক্ষা হয়নি।
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, তীব্র পানির চাপে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে পদ্মা-মেঘনার মিলনস্থল। তীব্র ঘূর্ণিস্রোতের প্রভাবে অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রাজ রাজেশ্বর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের আজমপুর ও চরডাঙ্গা গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে বিলীন হচ্ছে শত শত বাড়ি-ঘর, পাকা রাস্তা ও গাছপালা।
নেত্রকোনা থেকে এম আব্দুল্লাহ জানান, গতকাল উব্দাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনার পানি বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চারদিকে শুধু পানি আর পানি। তলিয়ে আছে বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরিষাবাড়ী থেকে এম এ মান্নান জানান, ঝিনাই নদীর ওপর নির্মিত ২০০ মিটার ব্রিজ বন্যার স্রোতে ডুবে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, নদ-নদীর পানি তীব্র গতিতে বাড়ছে। ইতোমধ্যেই তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী, মৌলভীবাজারের মনু ও হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং টানা বৃষ্টির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে ইমাম হোসেন জানান, টানা বর্ষণে মীরসরাই উপজেলার কয়েকটি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে কাজি রেজাউল করিম রেজা জানান, ক’দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে আবারও দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, কয়েকশ’ ঘরবাড়ি ও বসতভিটা বানের পানিতে ভেঙে গেছে।
মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে জাহাঙ্গীর ভুইয়া জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা-যমুনার পানি গোয়ালন্দ ও আরিচা পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমে এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুরসহ সদর উপজেলার কিছু অংশ তলিয়ে গেছে।
মাদারীপুরের শিবচর থেকে এম সাঈদ আহমাদ জানান, পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।