পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আসামের করিমগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন বোগরিজান চা বাগান এলাকায় স্থানীয় লোকজন তিনজন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। গরুচোর সন্দেহে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত ১ জুন পুতনি চা বাগান এলাকায় আরেক বাংলাদেশীকে একই সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র মতো ভারতীয় নাগরিকদের একাংশও যে অত্যন্ত চরমভাবাপন্ন, অমানবিক ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে, এ দু’টি হত্যাকান্ড তার সাক্ষ্য বহন করে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ভারতীদের এ ধরনের বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা মোটেই নতুন নয়। মাঝে-মধ্যেই তারা বাংলাদেশীদের হত্যা করে। সিলেট সীমান্তে এটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় খাসিয়া উপজাতীয়রা প্রায়ই বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালায়, যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও এধরনের হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিএসএফ’র মতই ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের অত্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে নাশকতা ও লুটপাট করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নাশক ও লুটেরাদের সহযোগিতা দেয় বিএসএফ। বিএসএফ’র বাংলাদেশী হত্যা, অনুপ্রবেশ, অপহরণ, লুণ্ঠন ইত্যাদি অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব দুষ্কৃতি বিএসএফ’র অভ্যাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, গত তিনমাসে বিএসএফ অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর আগে বছরের প্রথম দিকে হত্যা করেছে ১৯জনকে। বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশী নিহত হওয়ার ঘটনা ও সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। গত বছর কমপক্ষে ৪৩ জন বাংলাদেশী এই ঘাতক বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল কিছু কম। বছরের পর বছর সীমান্তে হত্যাকান্ড অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশী সীমান্ত-নাগরিকেরা চরম উদ্বেগ, শংকা ও অনিরাপত্তার মধ্যে কালাতিপাত করছে। এর উচিৎ কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশী হত্যার প্রসঙ্গ উঠলেই বিএসএফ ও ভারতের তরফে বলা হয়, যারা বিএসএফ’র হাতে নিহত হচ্ছে বা হয়, তারা আসলে চোরাচালানি বিশেষত গরু চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি বাংলাদেশের তরফে তেমন একটা চ্যালেঞ্জ করা হয় না। বড় কথা, অনেক সময় বিজিবি ও সরকারের তরফ থেকে ভারতীয় অভিমতের প্রতিই সমর্থন জানানো হয়। এটা অপ্রত্যাশিতই শুধু নয়, দু:খজনকও বটে। সম্প্রতি বিএসএফ বিজিবির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। বলেছে, গরু পাচারে নাকি বিজিবি সমর্থন দিচ্ছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে গত ১৩ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিজিবি বলেছে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও বিবৃতি ভিত্তিহীন। পাল্টা অভিযোগ এনে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় চোরাচালানিদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে গরু সমাগম ও নদীপথে গরু পাচারে বিএসএফ’র নিষ্ক্রিয়তা বা তৎপরতার অভাব নি:সন্দেহে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করে। ভারতীয় গরু পাচারকারীরা অধিক মুনাফার আশায় বাংলাদেশে এভাবে গরু পাচার করার কাজে অতি উৎসাহী হয়। এইসঙ্গে আরো জানানো হয়েছে, ভারতীয় পাচারকারীদের কারণে বাংলাদেশের খামারিরা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রেক্ষিতে গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
বিজিবিকে ধন্যবাদ যথাসময়ে যথাযথ প্রতিবাদ জানানোর জন্য। একথা স্বীকার করতেই হবে, সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের দৌরাত্ম্য, অত্যাচার ও জুলুম কখনই এতটা চরমে উঠতে পারতো না যদি বিজিবি ঠিকমত অ্যাক্ট করতো। বিজিবি অনেক কিছুই দেখে না দেখার ভান করে, নিশ্চুপ থাকে কিংবা ভারতীয় মতামত সমর্থন করে। আমরা দেখেছি, বিএসএফ গুলি করে পাখির মতো বাংলাদেশী মেরেছে আর বিজিবি সেই বিএসএফ’র হাতে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ফুলের স্তবক তুলে দিয়েছে। কখনো মিষ্টি বিনিময় করেছে। আবার কখনো হিন্দুধর্মীয় সংস্কৃতি অনুসরণে রাখি বন্ধনে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এতকিছু করার পরও বিজিবি প্রকৃতপক্ষে বিএসএফ’র বন্ধুত্ব, মিত্রতা ও আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে আলোচ্য অভিযোগ সেটারই প্রমাণ বহন করে। আমরা বরাবরই লক্ষ্য করেছি, সীমান্তে কোনো উত্তেজনা দেখা দিলে, বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিকদের কোনো হামলা-নাশকতা হলে কিংবা অনুপ্রবেশ ঘটলে বাংলাদেশী নাগরিকেরা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, প্রতিহত করেছে। বিজিবিকে এমন ভূমিকায় কমই দেখা গেছে। বিজিবি সীমান্ত বৈঠক ও নিহত বাংলাদেশীদের লাশ নিয়ে আসাকেই অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে চীন, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি দেশের সীমান্ত রয়েছে। ওইসব কোনো সীমান্তেই বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিকদের আচরণ যুদ্ধংদেহী নয়। পাকিস্তান ও চীন সীমান্তে কিছু করতে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই জবাব। সম্প্রতি লাদাখকান্ডে চীনের কাছ থেকে ভারতের উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। এরকম শিক্ষা পাকিস্তান সীমান্তে প্রায়ই ভারত লাভ করে। বিএসএফ ভারতীয় নাগরিকদের রোখার জন্য টিট ফর ট্যাট নীতি যে অধিকতর কার্যকর, সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। ভারত ও ভারতীয়দের অনুসৃত নীতি-আচরণের কারণেই কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক সেই। নেপাল-ভুটান পর্যন্ত এখন আর তাকে তোয়াক্কা করছে না। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কের জন্য বাংলাদেশের অবদানই ষোলআনা। বাংলাদেশ সম্পর্ক ধরে রাখছে, রক্ষা করছে। এর খেসারত নানাভাবে তাকে দিতে হচ্ছে। সীমান্ত হত্যার শিকার যেমন হতে হচ্ছে তেমনি মাঝে মাঝেই ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইনের সমস্যার পড়তে হচ্ছে। ভারতের চাহিদা অনুযায়ী একে একে সবকিছু দিয়েও আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ কিছু পায়নি। পানি সমস্যার সমাধান হয়নি। তিস্তা নিয়ে স্রেফ মিথ্যাচার করা হয়েছে। বাণিজ্য বৈষম্য দূর হয়নি। অবৈধ পণ্য ও অস্ত্রের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আসলে একতরফাভাবে চলছে। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সর্বভৌম সমতাভিত্তিক ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কই ভারতের জন্য মঙ্গলকর। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থেই তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহৃদয় সম্পর্ক সুরক্ষা করা উচিত। এ কথা ভারতের নীতিনিধারক ও জনগণকে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।