পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কেন্দ্র কিংবা মহানগর-জেলা কমিটি, বিএনপি কিংবা অঙ্গসংগঠন সবক্ষেত্রেই কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করে। কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিকে মূল্যায়ন না করা, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ না থাকলেও বড় পদে পদায়ন, পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ প্রতিটি স্তরেই। কেন্দ্র থেকে প্রতিটি ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের পছন্দের লোক দিয়ে অধীনস্ত কমিটি করে থাকে বলে অভিযোগ করেন বঞ্চিতরা। তাদের দাবি ভোট কিংবা কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন না হওয়ায় ত্যাগী, যোগ্য, পরিশ্রমী নেতারা মূল্যায়িত হয় না। তবে দীর্ঘদিন পর এবার সেই ধারায় প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সংগঠনের সকল পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। একইসাথে কমিটিতে নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী রাখার ওপরও জোর দিয়েছে এই ফোরাম। আর দলের এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিভিন্ন স্তরের নেতারা। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে প্রকৃতপক্ষে যারা মাঠের রাজনীতি করেন, দলের নেতাকর্মীদের জন্য কাজ করেন, তাদের সাথে নিয়ে রাজপথে থাকেন তারা মূল্যায়িত হবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।
নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের রীতি ভুলতে বসেছিল বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। দীর্ঘদিন পর সেই ধারার সূচনা করে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তাদেরকে দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নির্বাচিত কমিটির (সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুস সালাম) হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি। এরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ২৯ বছর পর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনের নির্দেশনা দেন। এতোদিন ধরে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নেতৃত্বে যেসব সিন্ডিকেট কমিটি গঠন নিয়ন্ত্রণ করতো তাদের নানারকম প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ ইকবাল হোসেন শ্যামল। নিজেরা নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসার কারণে তারাও সারাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এরফলে এতোমধ্যে মহানগর, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়নেও ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি কমিটি ভোটের মাধ্যমে গঠনও করেছে এই কমিটি।
ড্যাব ও ছাত্রদল এই ধারায় সফল হওয়ার পর এবার সকল পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। স্থায়ী কমিটি কমিটির একাধিক সদস্য জানান, গত শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি নেতাদেরকে ড্যাব ও ছাত্রদলের উদাহরণ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি স্থায়ী কমিটির নেতাদের বলেছেন, ড্যাব এবং ছাত্রদল ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্বে আসার কারণে একদিকে যেমন সমাদৃত হয়েছে। অন্যদিকে নিজ সংগঠনের ভেতরে সম্মান ও শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়েছে। কোন রকম চাপ ছাড়াই তারা নির্ভার হয়ে কাজ করছে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছে। একই প্রক্রিয়ায় তিনি বিএনপির সকল স্তরের কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা দেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী কমিটিতে ৩০ শতাংশ নারী রাখার বিষয়টিও জোর দেয়া হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন বলে তারা জানান। দলের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে নেতারা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ, ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতারা বের হয়ে আসবে। যারা দল ও দেশের সঙ্কটকালে নেতাকর্মী ও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, এলাকা ছেড়ে যায়নি তাদেরকেই ভোটাররা বেছে নেবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটি দলকে গতিশীল করবে এবং নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকতে উৎসাহ যোগাবে। আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে প্রত্যেকের মধ্যে একটি সুষম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এর মধ্যে যারা বেশি যোগ্য হবেন ভোটাররা তাকেই বেছে নেবেন।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. সাবেরুল হক সাবু বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু হওয়া ভালো। বিএনপি দুর্বল হয়ে গেছে মূলত: সব অনুগত লোক দিয়ে কমিটি বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেয়, যার কেন্দ্রে প্রভাব আছে সেই কমিটিতে জায়গা পায়, প্রকৃত লোকরা নেতা হতে পারে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে যদি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হয় তাহলে ভালো হবে।
নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দলটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, এর মাধ্যমে দলে নতুন রাজনীতির শুভ সূচনা হবে। যারা দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে নির্বাচন হলে তারা তাদের কর্মের কারণে মূল্যায়িত হবেন, ত্যাগী-পরিশ্রমী নেতাকর্মীদের জন্য এটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে যারা চাটুকার, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ পায় তাদের জন্য এই সিদ্ধান্ত ভীতিকর হবে। এড. সালাম বলেন, অনেক সময় কাউন্সিল না হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটিতে থাকলে নেতাকর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। যদি কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা না, স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে ভোটাররা যদি নির্ভয়ে মত প্রকাশ করতে পারে তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো নেতৃত্ব বের হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কড়া নির্দেশনা ও নিশ্চিয়তা দিতে হবে যে, ওয়ার্ডের ভোটে ইউনিয়ন প্রভাব বিস্তার করবে না, ইউনিয়নের ভোটে উপজেলা, উপজেলার ভোটে জেলা এবং জেলার ভোটে কেন্দ্র কোন প্রভাব বিস্তার করবে না তাহলে অবশ্যই যোগ্যতর নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। যেটা দল ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভালো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।