পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর নাগরিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে, কোনো কিছুতেই তা হ্রাস পাচ্ছে না। সত্যি বলতে কি, ভয়-ভীতি, শঙ্কা-আতঙ্ক দিনকে দিনই বাড়ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষ স্বস্তি ও নিরাপদ বোধ করছে না। সরকার অবশ্য আশ্বস্ত করছে, অভয় দিয়ে বলছে, নিরাপত্তার কোনো অভাব নেই। এ নিয়ে বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু মানুষ এসব কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না। রাজধানীতে সমস্যার শেষ নেই। এসব সমস্যা ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা সমস্যা। নগরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। গুলশান-বনানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে। দোকানপাট, শপিংমল ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রহরা ও নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় চলছে ব্লক রেইড। এত কিছুর পরও মানুষ ভীতিমুক্ত হতে পারছে না। আতঙ্ক তাদের পিছু ছাড়ছে না। অদৃশ্য শক্তি কখন তাদের ওপর হামলে পড়ে, এই আশঙ্কায় তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবধি নেই। বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করার কথাও জানানো হয়েছে। অথচ বাস্তবতা এই যে, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত বিদেশী নাগরিকদের অনেকে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ আগমন হ্রাস পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু মিটিং বাতিল হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশ এদেশে তাদের নাগরিকদের চলাফেরার ক্ষেত্রে যে সতর্কতা জারি করেছিল, তা বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারাদেশে বিদেশীদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছে। সরকারী ভাষ্যমতে, রাজধানীসহ গোটা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অথচ কোথাও কেউ স্বস্তিবোধ করছে না।
এহেন নিরাপত্তাভীতি কোনো দেশের জন্যই কাম্য হতে পারে না। এটা অশুভ ও অকল্যাণের বার্তাই বহন করে। আমরা লক্ষ্য করছি, গুলশান- ঘটনার এক মাস পার হয়ে গেলেও ভীতিকর অবস্থা রয়েই গেছে। ভীতির এই প্রলম্বন থেকে প্রতীয়মান হতে পারে, সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাদি যথেষ্ট বলে মনে করছে না মানুষ। কিংবা এসব ব্যবস্থার ওপর তারা নিশ্চিত আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। সরকারের দ্বৈতনীতি এ জন্য কম দায়ী নয়। একদিকে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ভীতসম্ভ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা হামলা করার অবস্থায় নেই। তারা এখন পালাতে পারলেই বাঁচে। অন্যদিকে আবার বলা হচ্ছে, আরো সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে; বড় ধরনের হামলা হতে পারে। ক’দিন আগে কল্যাণপুরের এক বাড়িতে অভিযানের সময় ক’জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা যে এখনো সক্রিয় ও তৎপর এ ঘটনা তার প্রমাণ বলে বিবেচিত হতে পারে। এবং এরপর বলা হয়েছে, ওই অভিযানের ফলে দেশ বড় ধরনের হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছে। দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহল তাহলে কোন কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে?
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা থেকে বিমুক্ত হওয়ার অবস্থা এখনো আসেনি। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কথিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার থেকেও এটা অনুধাবন করা হয়। ক’দিন আগে ঢাকা থেকে একজন ব্যবসায়ী নিখোঁজ হন, যার লাশ পরে বুড়িগঙ্গা থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে তার নিখোঁজ ও মৃত্যু নিয়ে। এছাড়াও বিশিষ্ট নাগরিকেরা হত্যার হুমকি পাচ্ছেন। সঙ্গতকারণেই মানুষ আশঙ্কা করছে, সংঘবদ্ধ হামলা কিংবা টার্গেট কিলিং আরো হতে পারে। এ গেল একদিক, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি, তৎপরতা এবং আচরণও মানুষের মধ্যে অন্য ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা হয়রানি এমনকি জুলুম-নির্যাতনের অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, কোনোভাবেই মানুষ নিরাপত্তার ব্যাপারে সন্তুষ্ট ও আস্থাশীল হতে, পারছে না। জননিরাপত্তা জনগণকে আস্থায় নিয়ে, সাথে নিয়ে করলে দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। সে উদ্যোগ খুবই সীমিত। সন্ত্রাসভীতি, সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা অবশ্যই একটা বড় জাতীয় হুমকি। এ হুমকি মোকাবিলায় জাতীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য অপরিহার্য। সমন্বিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের মাধ্যমেই এ হুমকি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। সরকারের এদিকে খেয়াল-নজর আছে বলে মনে হচ্ছে না। বিদ্বতসমাজের মতে, সরকারের উচিত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নেয়া। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।